Ajker Patrika

বন্ধু তোমায় মনে পড়ে

বন্ধু তোমায় মনে পড়ে

ঢাকা: বাংলা গানের এক বিস্ময়কর প্রতিভা আজম খান। বলা চলে, তিনি নিজেই একটা গান। নিজেই একটা ইতিহাস। পপ গানের এই জাদুকরের প্রস্থানের এক দশক পূর্ণ হলো। বাংলা গানে এখনো আজম খান সমান প্রাসঙ্গিক। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন ফেরদৌস ওয়াহিদ।

গান দিয়েই পরিচয়
১৯৭৩ সালের কথা। বাংলা গান গাওয়া তখনো শুরু করিনি। আমরা কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে গান করতাম। একটা ব্যান্ড ছিল আমাদের। দলে ছিল ইশতিয়াক, ল্যারি, ইদুসহ বেশ কয়েকজন। হোটেল কন্টিনেন্টালে ইংরেজি গান করতাম আমরা। ফিরোজ সাঁই, বিখ্যাত গায়ক, আমার বন্ধু। ফিরোজের মুখেই প্রথম আজম খানের নাম শুনি। একদিন সে বলল, আমার পরিচিত এক ছেলে আছে। আজম নাম। ভালো গান। তাঁকে নিয়ে বাংলা গান করা যেতে পারে।

কিন্তু আমাদের দলে তখন কেউ বাংলা গান করার পক্ষে ছিল না। তারপরও আমি ফিরোজ সাঁইকে বললাম, তুমি আজমকে নিয়ে আসো। একদিন ফিরোজের সঙ্গে আজম খান এল। পরিচয় হলো। গান হলো। প্রথম দিনেই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হলো আমার। তাঁর গান খুব ভালো লাগল। বিশেষ করে তাঁর পরিবেশনার ধরন। পরিকল্পনা করলাম, গান রেকর্ড করার।

পপগুরু আজম খানতৈরি হলো গান
ইন্দিরা রোডে তখন একটি স্টুডিও ছিল। আড়াই শ টাকা দিয়ে আমরা এক শিফট ভাড়া করলাম। ওই দিন আজম খান ও আমি দুজন মিলে চারটি গান রেকর্ড করলাম। আজম খান গাইল–‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ এবং ‘হাইকোর্টের মাজারে’।

আমি গাইলাম–‘চাঁদ জাগে তারা জাগে’ আর ‘দুনিয়াটা কত যে মজার’। স্টুডিওর মালিক যিনি ছিলেন, তাঁর খুব ভালো লাগল গানগুলো। এতটাই ভালো লাগল যে তিনি আমাদের গানগুলো রেকর্ড আকারে বের করার দায়িত্ব নিয়ে নিলেন। সুপারভিশন করে দিলেন আজম খানের বড় ভাই আলম খান।

স্টুডিওর মালিক কথা রেখেছিলেন। চারটি গানই প্রকাশ হয়। দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে গানগুলো। বিশেষ করে আজম খানের গান দুটো তো মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়। এ জনপ্রিয়তার রেশ ধরেই পরে তৈরি হলো ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ড।

পপগুরু আজম খানদুটি ঘটনা
আজম খানকে আমি দুভাবেই দেখেছি। বন্ধু হিসেবে আর শিল্পী হিসেবে। আমাদের সঙ্গে সে কখনো তারকার মতো ব্যবহার করত না। হাসি-আড্ডায় জমিয়ে রাখত। প্রচণ্ড ছেলেমানুষি করত। তাঁর দুষ্টুমির দুটো ঘটনা বলি।

ঘটনা এক
এক শোতে আমরা কয়েকজন শিল্পী অংশ নিয়েছি। দর্শক আজম খানের নাম ধরে আওয়াজ তুলছে। এটা দেখে আমি ওকে বললাম মঞ্চে উঠে যেতে। ও হেসে বলল, ‘তোরা আগে গান শোনাতে থাক। আমি ততক্ষণ ঘুমিয়ে আসি। ঘুম ভাঙলে তারপর গান শোনাব।’

ঘটনা দুই
১৯৭৪ সাল। তখন সিনেমা হলেও টিকিট কেটে গানের অনুষ্ঠান হতো। জোনাকি সিনেমায় আমাদের একটা অনুষ্ঠান হবে। সবাই অনুষ্ঠানে যাব। ঠিক আগমুহূর্তে আজম হাসতে হাসতে বলল, ‘আমার শরীর ভালো লাগছে না। আমি যামু না। আমারে অন্যভাবে নেওয়ার ব্যবস্থা কর।’

এরপর ওর জন্য গাড়ি আনা হলো। গেল না। রিকশা ডাকা হলো। তা–ও গেল না। সবাই মিলে ভাবলাম, একটা ভ্যানগাড়ি পাঠাই। ভ্যানগাড়ি দেখে আজমের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল, এবার ঠিক আছে। সত্যি সত্যিই সে ভ্যানগাড়িতে চড়ে অনুষ্ঠানের জন্য বের হয়।

এই হলো আজম খান। পরিস্থিতি যেমনই হোক, সবকিছু সহজভাবে নিতে পারত। অনেকে যখন তারকাখ্যাতির অহমে অন্ধ, তখনো সে নিজেকে আলাদা ভাবত না। এতটাই সাদাসিধে মানুষ ছিল আজম খান।

আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফকির আলমগীরশেষ আলাপ
আজম খানের বিদায়ের পাঁচ দিন আগের কথা। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা ছিল তাঁকে। যেহেতু জানি, ও সিঙ্গাপুর যাচ্ছে, তাই ফোন দিলাম। কথা হলো কিছুক্ষণ। একপর্যায়ে বলল, ‘ফেরদৌস, আমি এখন আর কাউকে বিশ্বাস করি না। মানুষগুলা জানি কেমন। গানের মাঠের অবস্থাও ভালো না। আমারও আর ফেরা হবে না। তুই রাগ করে গানবাজনা বন্ধ করে দিস না বন্ধু। গান চালিয়ে যা।’

জানি না, তাঁর এই কথার মধ্যে কোনো অভিমান লুকিয়ে ছিল কি না। কাউকে বিশ্বাস না করার রহস্য আজও জানা হয়ে ওঠেনি। তারপরও ভেবেছিলাম, যে অভিমান থেকে এ কথা বলুক না কেন, গানে আজম ঠিকই ফিরবে। কিন্তু সেদিনের সেই কথাই যে শেষ আলাপ হবে, তা বুঝতে পারিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত