Ajker Patrika

শিল্পের সব শাখায় পূর্ণ ছিলেন রনি

বিনোদন প্রতিবেদক
শিল্পের সব শাখায় পূর্ণ ছিলেন রনি

একাধারে সংগীতশিল্পী, চারুশিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, নাট্যকর্মী ও ডিজাইনার সুব্রত বড়ুয়া রনি। অবশ্য তাঁর কথা বলতে গেলে সব ছাপিয়ে উঠে আসে বাংলাদেশের সেই কিংবদন্তি ব্যান্ড ‘সোলস’–এর কথা। মুক্তিযুদ্ধের পর সবদিক থেকে ভেঙে পড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তোলার কাজে যখন সবাই ব্যতিব্যস্ত, সেই সময় দেশের শিল্প, সংস্কৃতি, সংগীত জগতে আবির্ভাব ঘটে ‘সোলস’–এর। ১৯৭২ সালে ব্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সোলস। ব্যান্ডটির সেই সব দিনের গান আজও আমাদের কোনো এক বিকেলের বারান্দা বা রাতের জানালা দখল করে রাখে। আজও মোহিত করে সুরে। সুব্রত বড়ুয়া রনি জনপ্রিয় এই ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ড্রামার ছিলেন।

পৈতৃক নিবাস রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় হলেও চট্টগ্রাম শহরেই তাঁর বেড়ে ওঠা। ছোট থেকেই গানের প্রতি টান ছিল রনির। বাবা সুখেন্দু বিকাশ বড়ুয়া ভালো গাইতেন। তবে রনি ঝুঁকেছিলেন তবলার দিকে। কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় থেকেই স্কুলের হয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন তিনি। কলেজিয়েট স্কুল থেকে পাস করে মহসিন কলেজ এবং তারপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজে। এখন এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। গানের পাশাপাশি তখন সমানতালে চলছে তাঁর চিত্রকলার চর্চা। চারুকলায় ডিজাইন নিয়ে রনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন ১৯৭৯ সালে। এরপর অবশ্য কিছুদিন তিনি দেশের বাইরে ছিলেন।

নাট্যমঞ্চেও তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রয়েছে সগর্বে। অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন বিখ্যাত সব নাটকে। ‘আগুনপাখি’সহ আরও অনেক নাটকে পালন করেছেন শিল্পনির্দেশকের ভূমিকাও। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অনেক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুব্রত বড়ুয়া রনির নাম। রনি, আহমেদ নেওয়াজ, অনুপ সাহা, নকীব খান, তপন চৌধুরীসহ আরও অনেকে মিলে সে সময় শুরু করেন সৈকতচারী নামে একটি সংগঠন।

চট্টগ্রামে ‘অ্যাড অ্যাট’ নামে অ্যাডভার্টাইজিং কোম্পানি শুরু করেন সুব্রত বড়ুয়া রনি ও তাঁর বন্ধু সাজেদুল আলম। চিত্রশিল্পের মননশীলতা ও দক্ষতা নিয়ে গড়ে তোলেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট জগতের সুবিশাল ক্ষেত্র। সে সময় ইভেন্টের কাজের এত বিস্তৃতি তৈরি হয়নি। নেই তেমন সহজলভ্য উপকরণ বা সুযোগ–সুবিধাও। তবে সোলসে ছিলেন বলে চট্টগ্রামে তখন তিনি একনামে পরিচিত। এই পরিচয় তাঁর কাজের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে অনেক। ১৫ বছর স্বকীয়তা ও নিপুণতায় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির পয়লা বৈশাখের আয়োজনের দেখভাল করেছেন তিনি।

বুধবার (২৬ মে) ভোরে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। এই সংগীত তারকার মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন তিনি। এক বছর আগে তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত