Ajker Patrika

শুধু ভালোবাসাটুকু থাক, আর সব মুছে যাক

খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
শুধু ভালোবাসাটুকু থাক, আর সব মুছে যাক

জেমস নিজেই একটা গান! যদি এভাবে বলা হয়- তাহলে হয়তো তাঁকে খানিকটা হলেও ধরতে পারা যাবে। গানে যেমন সুর বৈশ্বিক, চিরন্তন। আর তার আবেগ কিংবা বাস্তবতা মহীরুহ, ছড়িয়ে পড়ে সবদিকে; দৈনন্দিন যাপনের অনেক এলিমেন্ট নিয়ে। জেমসও ধ্রুপদি গানের চরিত্র নিয়ে প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছেন, ক্রমাগত বড় আকার নিচ্ছেন।

বাংলা গানে জেমসের আবির্ভাব যতটা ড্রামাটিক, ব্যাপক বদলের বাঁক সামলে এখনো তাঁর স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে থাকার প্রসঙ্গটি তুলনায় বেশি সিনেমাটিক। অনেক বদল সামলাতে হয়েছে জেমসকে। মূলত নব্বইয়ের দশকের সমস্ত শিল্পীকেই। অডিও ক্যাসেট থেকে সিডি-ডিভিডি পেরিয়ে আজকের অনলাইন রিলিজের সময় অবধি বাংলা গান অনেকগুলো প্রজন্ম দেখে ফেলেছে। রুচির বদল ঘটেছে বিস্তরভাবে। এই ডিজিটাল ধাক্কা বলতে গেলে নব্বইয়ের কোনো শিল্পীই সামলাতে পারেননি। নতুন রুচির কাছে হেরে গেছেন। কিন্তু এই ব্যাপক বদলের অধ্যায়টা দারুণভাবে সামলে এসেছেন জেমস।

তাঁকে ঘিরে ক্রমাগত কৌতূহল জমছে। তাঁর চারপাশে প্রতিনিয়ত জড়ো হচ্ছে মিথ। এক ধরনের প্রচ্ছন্ন আড়াল দিয়ে জেমস নিজেকে ঢেকে রেখেছেন। কনসার্ট ছাড়া তাঁর দেখা পাওয়া মুশকিলই। সাক্ষাৎকারে তিনি আসেন না। সোশ্যাল সাইটে যদিও আছেন, কিন্তু ট্রেন্ড নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। ব্যক্তিগত ছবি দেন না। ইস্যুতে ভেসে লিখে ফেলেন না গালভরা বুলি।

জেমসবরং সেখানে খুঁজে পাওয়া যায় আরেক জেমসকে। যে জেমস ছবি তোলেন। বিচিত্র সব ছবি! জেমসের ছবি তাঁর গানের মতোই শক্তিশালী। থিম, লাইট, কালার আর মেকাপ নিয়ে যে ধরনের এক্সপেরিমেন্ট তিনি করছেন ছবিতে, তেমন কাজ এ অঞ্চলে বিরল।

বিরল তাঁর নতুন গানের খবরও। অনেক দিন হলো জেমস নতুন গান করছেন না। গত কয়েক বছরে হাতে গোনা যে কয়েকটা এসেছে, সবগুলোই কোনো না কোনো সিনেমার। জেমস শুধু গেয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ‘জেমসের গান’ বলতে যা বোঝায়, কথায়-সুরে-মিউজিকে ‘নগর বাউল’-এর যে আধিপত্য; সেটার নতুন স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না অনেক দিন হলো। পুরোনো গান দিয়েই জেমস সবার কাছে নতুন হয়ে আছেন। এক ধরনের তৃষ্ণা তিনি জিইয়ে রেখেছেন ভক্তদের মনে। তাই যখনই ‘গুরু’-র দেখা মেলে কোথাও, প্রজন্ম হইহই করে ওঠে। যেন বহুদিন বাদে মিলল আলোর দেখা!

তেমন ঘটনা ঘটেছিল এই কদিন আগেও একবার। বহুদিন কনসার্ট নেই, তাই জেমসেরও দেখা ছিল না লম্বা সময়। লকডাউনের মধ্যে অন্য শিল্পীরা তো কমবেশি অনলাইন লাইভ করেছেন, ঘরে বসে গান শুনিয়েছেন মানুষকে, কথা বলেছেন ইত্যাদি বিষয়ে; কিন্তু জেমস ওসবে কখনোই থাকেন না। ছিলেনও না।

জেমসহঠাৎ এক সকালে খবর এল- জেমস আদালত চত্বরে। আকাশি রঙের টি-শার্ট পরে সাদামাটাভাবে জেমস আদালত থেকে বেরিয়ে, অনেকটা পথ হেঁটে, প্রধান সড়কের ফুটপাতে মিলিয়ে গেলেন- এমন ভিডিও বেশ আলোড়ন তুলেছিল সেদিন। গানের কপিরাইটের ন্যায্যতা আদায়ে ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে জেমসের আদালতে যাওয়ার ঘটনা প্রত্যেক শিল্পীর বুকের পাটা শক্ত করেছে।

বাংলা গানে জেমস এমন বিস্তৃত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন যে, তাঁকে অনায়াসে একটা বিরাট সমাজের কাল্ট ফিগার হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যিনি প্রতিনিয়ত নতুন চিন্তা, নতুন বাস্তবতা আর অনুপ্রেরণার খোরাক যুগিয়ে চলেছেন। যদিও জেমস নিজে এই তকমা নেবেন কিনা তা নিয়ে পর্যাপ্ত সন্দেহ আছে। কারণ জেমস সব সময় সব রকম মিডিওক্রিটি আর বাহুল্য থেকে দূরে থাকতে চেয়েছেন।

জেমসতিনি বিশ্বাস করেছেন, গান এবং শুধু গানই তাঁকে টিকিয়ে রাখবে। হারিয়ে যাওয়ার ভয় তাঁর নেই। এটাই সম্ভবত জেমসকে আরও প্রবলভাবে হাজির করেছে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের সামনে।

গত বছর লকডাউনের মধ্যে ফেসবুকে নিজের কিছু ছবি দিয়েছিলেন জেমস। রফিকুল ইসলাম রেফ-এর তোলা ছবিতে জেমস হাজির হয়েছিলেন একেবারেই অন্য লুকে। কাঁচা-পাকা দাঁড়ি-গোঁফে তিনি যেন কোনো গ্রিক উপাখ্যানের মহানায়ক! জল্পনা ছড়িয়েছিল, এ লুক হয়তো তাঁর নতুন অ্যালবামের প্রচ্ছদ!

জেমসজল্পনা সত্যি হলে সেটা নিশ্চয়ই খুব ভালো একটা ব্যাপার ঘটবে সাম্প্রতিক বাংলা গানে। নতুন গান না বাঁধলেও জেমস কিন্তু নতুন আমেজ নিয়েই আসেন প্রতি কনসার্টে। অনেক দিন পর শহরে কনসার্ট ফিরতে শুরু করেছে। নিশ্চয়ই নগর বাউলও খুব তাড়াতাড়ি কোনো স্টেজে, ময়দান-ভরা দর্শক সামনে নিয়ে বলে উঠবেন- ‘লাভ ইউ’।

বোহেমিয়ান জীবন, প্রবল খ্যাতি, প্রেম, বিচ্ছেদ, জল্পনা- সবমিলিয়ে উপকথার চরিত্র হয়ে উঠেছেন ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। আজ এই রকস্টারের জন্মদিন। এই মহান দিনে জেমসকে শুভকামনা জানাই তাঁর লাইন দিয়েই, ‘শুধু ভালোবাসাটুকু থাক, আর সব মুছে যাক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত