Ajker Patrika

সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড

টিকটক চেনেন না গায়িকা কিন্তু ভাইরাল তাঁর গান

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, ১৭: ০৪
ষাটের দশকের কোনো এক সময় পপ কিংবদন্তি কনি ফ্রান্সিস। ছবি: ব্রিটানিকা
ষাটের দশকের কোনো এক সময় পপ কিংবদন্তি কনি ফ্রান্সিস। ছবি: ব্রিটানিকা

হুটহাট পুরোনো গানগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে এখন। প্রায় ত্রিশ বছর আগে গাওয়া ওড়িয়া ভাষার গান ‘ছি ছি ছি রে ননি ছি’ ভাইরাল হয়েছিল কয়েক মাস আগে। আর সম্প্রতি প্রায় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হয়েছে ‘প্রিটি লিটিল বেবি’ গানটি।

জানলে অবাক হতে হয় যে ‘প্রিটি লিটিল বেবি’ নামের এই গান গাওয়া হয়েছিল প্রায় ৬৩ বছর আগে, ১৯৬২ সালে। এটি ষাটের দশকের দারুণ জনপ্রিয় একটি রোমান্টিক গান। গেয়েছিলেন পপ কিংবদন্তি কনি ফ্রান্সিস। এখন তাঁর বয়স ৮৭ বছর। সম্প্রতি তাঁর এক বন্ধু তাঁকে গানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ট্রেন্ডি হয়ে ওঠার সংবাদ জানিয়েছেন। এটি শুনে তিনি বেশ অবাক হয়েছেন।

ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজ বাড়িতে এখন বসবাস করছেন কনি ফ্রান্সিস। আমেরিকান সংগীত ও বিনোদন ম্যাগাজিন ‘বিলবোর্ড’ এ বিষয়ে কথা বলতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কনি প্রথমে নিজের গাওয়া গানটি রেকর্ড করার কথা মনে করতে পারেননি। পরে তিনি শুনে নিশ্চিত হন যে গানটি তিনিই গেয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘চেনার জন্য গানটি আবার শুনতে বাধ্য হয়েছিলাম’।

নিজের সময়ে পপ শিল্পী কনি ফ্রান্সিস। ছবি: ব্রিটানিকা
নিজের সময়ে পপ শিল্পী কনি ফ্রান্সিস। ছবি: ব্রিটানিকা

কাইলি জেনার এবং কিম কার্দাশিয়ান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ শিশু, পাখি কিংবা বিড়ালছানার ছবি ও ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে এই গানের প্রথম লাইন ‘ইউ ক্যান আস্ক দ্য ফ্লাওয়ারস’ যুক্ত করে দিচ্ছেন। এভাবেই গানটি প্রায় ১৫ মিলিয়ন টিকটক ভিডিওতে ব্যবহৃত হয়েছে। গানটি স্পটিফাইতে ২০ মিলিয়নের বেশি বার স্ট্রিম করা হয়েছে। এই তথ্য কনিকে জানানো হলে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘টিকটক কী?’

প্রিটি লিটল বেবি’র যাত্রা

কনির আত্মজীবনীর নাম ‘অ্যামং মাই সার্ভেন্স: দ্য রিয়্যাল স্টোরি ভলিউম–১’। প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। ছবি: গুডরিডস
কনির আত্মজীবনীর নাম ‘অ্যামং মাই সার্ভেন্স: দ্য রিয়্যাল স্টোরি ভলিউম–১’। প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। ছবি: গুডরিডস

কনি ফ্রান্সিস ছিলেন ষাটের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় পপগায়িকা। তাঁর পুরো নাম কনচেটা রোজমেরি ফ্রাঙ্কোনেরো। তিনি প্রথম নারী হিসেবে বিলবোর্ড হট ১০০-এর শীর্ষে উঠেছিলেন। তাঁর গানগুলো বিভিন্ন ভাষায় রেকর্ড করা হয়েছে এবং তিনি ১৫টি টপ ১০ হিট অর্জন করেছেন। ‘প্রিটি লিটিল বেবি’ গানটি তাঁর অ্যালবাম ‘কনি ফ্রান্সিস সংস সেকেন্ড হ্যান্ড লাভ অ্যান্ড আদার হিটস’ এ অন্তর্ভুক্ত ছিল। গানটি যৌথভাবে সুর করেছিলেন ডন স্টার্লিং ও বিল নাউম্যান এবং প্রযোজনা করেছিলেন জিম ভিনিউ ও নোরো উইলসন। কনি ২০১৭ সালে তাঁর আত্মজীবনী ‘অ্যামং মাই সার্ভেন্স: দ্য রিয়্যাল স্টোরি ভলিউম–১’ এ লেখেন, ১৯৬১ সালের আগস্টে মাত্র চার দিনে ৪০টি গান রেকর্ড করেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল এই ‘প্রিটি লিটল বেবি’। পঞ্চাশের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ছিল সংগীত জগতে কনির আধিপত্য।

জনপ্রিয়তার সিঁড়ি বেয়ে প্রিটি লিটিল বেবি

২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল। ‘প্রিটি লিটল বেবি’ গানটি যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক মাত্র ১৭ হাজার বার স্ট্রিম হয়। এক মাসের মধ্যে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ লাখে। গানটি টিকটকে ১০ বিলিয়ন ভিউ পায়। সে জন্য অ্যাপটির ভাইরাল ও টপ ৫০ এর তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। এরপর গানটি সাধারণ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মেও জনপ্রিয়তা পায়। সেটি বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ৪ কোটি বার শোনা হয়। ফলে গানটি স্পটিফাইয়ের গ্লোবাল টপ ১০০ এর তালিকায় ৬৭ নম্বরে উঠে আসে। এই সাফল্যের পর কনির রেকর্ড কোম্পানি রিপাবলিক/ইউএমই গানটি সুইডিশ, জাপানিজ এবং অন্যান্য ভাষার সংস্করণগুলো আবার প্রকাশ করে।

কনির জীবনের টার্নিং পয়েন্ট

কনি ফ্রান্সিসের একটি অ্যালবামের কভার। ছবি: উইকিপিডিয়া
কনি ফ্রান্সিসের একটি অ্যালবামের কভার। ছবি: উইকিপিডিয়া

কনি ফ্রান্সিসের গাওয়া আরেকটি বিখ্যাত গান ‘হুজ সরি নাউ’। গানটি তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। অথচ সেই গান তাঁর বাবা জোর করে রেকর্ড করান। ‘বিলবোর্ড’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তিনি সেই রেকর্ডিং সেশনে আগে তিনটি অন্য গান রেকর্ড করেছিলেন এই ভেবে যে নির্ধারিত চার ঘণ্টার মধ্যে যেন হুজ সরি নাউ গানটি রেকর্ড করার সময় না থাকে। বাবার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত গানটি তিনি করেন। এর আগে প্রায় সব গানের রেকর্ডিংয়েই কনি কাউকে না কাউকে অনুকরণ করতেন। ১৪ বছর বয়স থেকেই তিনি ডেমো রেকর্ড করতেন। তখন প্রকাশকেরা তাঁকে প্যাটি পেইজ, কাই স্টার কিংবা টেরেসা ব্রুয়ারের মতো করে গাইতে বলতেন। কিন্তু কনি জানান, সেই প্রথমবার ‘হুজ সরি নাউ’ গানটি গাওয়ার সময় তিনি কাউকে অনুকরণ করেননি। গেয়েছিলেন একেবারে নিজের মতো করে।

‘বিলবোর্ড’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কনি জানান, তিনি আজও মঞ্চকে মিস করেন। তিনি কি আবারও মঞ্চে ফিরে যেতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেই দিনগুলো শেষ হয়ে গেছে। সেই জাহাজটা চলে গেছে।’ কনি তাঁর গানটি শোনার জন্য নতুন শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জীবনে একটি নতুন শিক্ষা দিয়েছে।’

কনি ফ্রান্সিস। ছবি: উইকিপিডিয়া
কনি ফ্রান্সিস। ছবি: উইকিপিডিয়া

কনি ফ্রান্সিস কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল সংগ্রামময় ও ট্র্যাজিক। ১৯৭৪ সালে তিনি ধর্ষণের শিকার হন, যা তাঁর মানসিক ও ক্যারিয়ারে গভীর প্রভাব ফেলে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে তিনি দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর ভাইকে হত্যার ঘটনার পর তিনি আরও ভেঙে পড়েন।

সূত্র: বিলবোর্ড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই এখন, সারজিসকে বললেন সেনা কর্মকর্তা

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

কক্সবাজারে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে নর্থইস্ট নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন বলেই কি জামিন পেলেন না অধ্যাপক আনোয়ারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত