Ajker Patrika

ইশতিয়াকের হলিউডের গল্প

আনিকা জীনাত
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২১, ১৩: ৫৫
ইশতিয়াকের হলিউডের গল্প

তার কাছে হলিউডের গল্প শুনতে গেলে কখনো বিরক্ত হবেন না। কথায় কথায় যেন অচেনা এক জগতের পর্দা সরাতে থাকেন তিনি। ডিজনি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ও টোয়েন্টি সেঞ্চুরি ফক্সের মতো বিখ্যাত ফিল্ম স্টুডিওর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা যাঁর আছে, তাঁর কথা তো মন দিয়েই শুনতেই হবে। তাই শুনতে বসতেই হলো ইশতিয়াক আহমেদ অনিকের গল্প।

খাঁটি বাংলাদেশি। পড়াশোনা করেছেন আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এআইইউবি)। সিনেমা বানানোর আগ্রহ থেকেই ভর্তি হয়েছিলেন মিডিয়া ও মাস কমিউনিকেশনে। বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকে চাকরিও করেছেন কিছুদিন। হঠাৎ সব ছেড়ে কানাডায়, ২০১৪ সালে।

সেখানে গিয়ে সিনেমার প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন ইশতিয়াক। তারপর একটু একটু অভিজ্ঞতা জমিয়ে এখন কাজ করছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে। টিভি সিরিজ ও সিনেমার অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকেশন ম্যানেজারের কাজও করেন প্রায়ই।

ইশতিয়াক আহমেদ অনিক

অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকেশন ম্যানেজার হিসেবে তার কাজ হলো লোকেশন নির্ধারণ হওয়ার পর নির্দিষ্ট দিনে সেটে যা যা লাগবে সব কিছুর লজিস্টিকাল সাপোর্ট দেওয়া। অনেক সিনেমা বা টিভি সিরিজে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে ও কাজ করেছেন।

এই পদে চারজন থাকেন। তাঁদের প্রত্যেককে পরিচালকের নির্দেশে কাজ করতে হয়। অভিনয়শিল্পীকে রেডি করা থেকে শুরু করে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া—এই কাজে ভালো করতে পারলে তবেই মেলে ডিরেক্টর হওয়ার সুযোগ। প্রোডাকশন অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে তিনি কাজ করেছেন ‘কোল্ড পারসুইট’, ‘দ্য প্রিডেটর’, ‘ডেডপুল ২’, ‘স্কাইস্ক্রাপার’ সিনেমায়। 

ইশতিয়াক বললেন, ‘শুটিংয়ের কাজ নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা আছে। সবাই ভাবে, হলিউডে কাজ করতে গেলে দামি কোনো ফিল্ম স্কুলে যেতে হবে। বিষয়টি মোটেও তা নয়। ডিরেক্টর, প্রোডিউসার, ক্যামেরাম্যান—যেই হোক না কেন, তাকে শুরু করতে হয় প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। নিজেকে উপস্থাপন করাই এখানে মূল কথা।’

৯টা-৫টা চাকরি করার জায়গাও নয় এটা। সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করতে হয় গড়ে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা। সপ্তাহের অন্যান্য দিন অ্যাকশন সিনেমার মতো খুব দ্রুতগতিতে কাটে। তাই সবাই মানিয়ে নিতে পারেন না। যাঁরা চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে পছন্দ করেন, জায়গাটা তাঁদের। আয়ও বেশি। সাধারণ কানাডিয়ান নাগরিকদের চেয়ে শুটিং সেটের সদস্যরা কয়েক গুণ বেশি আয় করেন।

শুটিং ইউনিটের কাজ চলে মিলিটারি স্টাইলে। এখানে রুটিন ধরে ধরে দৃশ্য নেওয়া হয়। কয়টায় শুটিং শুরু হবে, কোন দৃশ্য কখন নেওয়া হবে, কতক্ষণ নেওয়া হবে সেটা ‘কল শিট’ দেখে ঠিক করেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টররা। 

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের প্রতিটি শহরে দিনে ৪০ থেকে ৬০টি প্রোডাকশনের কাজ চলে। এর মূল কারণ হলো কানাডায় শুটিং করতে খরচ অনেক কম পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ট্যাক্স দিতে হয় ১০ ভাগের এক ভাগ। যেকোনো জায়গায় শুটিংয়ের অনুমতিও দুই দিনের মধ্যে সহজেই পাওয়া যায়। ইশতিয়াক আহমেদ অনিকহলিউডের বড় বড় ফিল্ম কোম্পানির কয়েকটি করে স্টুডিও আছে কানাডায়। সব ধরনের লোকেশন পাওয়া যায় ওখানে—সমুদ্র, পাহাড়, মরু অঞ্চল, বরফ। কারিগরি সুবিধাও আছে। পানির নিচে বিস্ফোরণ হোক বা প্লেন থেকে ঝাঁপ দেওয়া—সব রকমের দৃশ্য ধারণের উন্নত সুবিধা। আগেই বলা হয়েছে, সবকিছুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় খরচ অনেক কমে যায়। তাই ফিল্ম স্টুডিওর কমতি নেই ওখানে। 

এরই মধ্যে ডোয়াইন জনসন, লিয়াম নিসন ও মাইকেল মালার্কির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে ইশতিয়াকের। 

টিভি সিরিজ ‘প্রোজেক্ট ব্লু বুক সিজন ২’- এ কাজ করতে গিয়ে এইডেন জিলিয়ানের সঙ্গেও পরিচয় হয়েছে। ‘গেম অব থ্রোনস’ ভক্তরা এইডেনকে চেনেন লর্ড বেইলিশ বা লিটল ফিঙ্গার নামে। 

তারকাদের কাছাকাছি থাকলেও নিজের কাজকর্মের কথা ঘটা করে সবাইকে জানান না ইশতিয়াক। কিছুদিন আগে বিয়ে করেছেন। ছুটিতে আপাতত দেশেই আছেন তিনি। ছুটি শেষে আবারও ফিরে যাবেন সিনেমার টানে। ফিল্ম স্টুডিওর রঙিন জগতে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত