Ajker Patrika

মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী মেঘনা আলম কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১১: ১০
২০২০ সালে মিস আর্থ বাংলাদেশ হন মেঘনা আলম। ছবি: ফেসবুক
২০২০ সালে মিস আর্থ বাংলাদেশ হন মেঘনা আলম। ছবি: ফেসবুক

সাবেক মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ডিবি পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, এদিন রাত সাড়ে ১০টায় তাঁকে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। পরে আদালত এই আদেশ দেন।

ডিটেনশন আইনে সরকার কোনো ব্যক্তিকে আদালতের আনুষ্ঠানিক বিচার ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটক বা বন্দী করতে পারে। এ ধরনের আইন সাধারণত জননিরাপত্তা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে প্রয়োগ করা হয়।

আদালতের আদেশে বলা হয়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২ (এফ) ধারার জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ক্ষতিকর কার্য থেকে নিবৃত্ত করার জন্য এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আবশ্যক অনুভূত হওয়ায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ (১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে মেঘনা আলমকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই আটকাদেশ দেওয়া হচ্ছে। স্বাক্ষরের তারিখ থেকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে। পরে তাঁকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র তালেবুর রহমান জানান, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা করা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাঁকে অপহরণ করার অভিযোগ সঠিক নয়। তথাপি আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে।’

এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে মেঘনা আলমের অ্যাকাউন্টে একটি লাইভ চলার মধ্যে তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী বাসার ‘দরজা ভেঙে’ পুলিশ পরিচয়ধারীরা ভেতরে প্রবেশের পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়। ১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা লাইভটি এরপর ডিলিটও হয়ে যায়। লাইভ চলাকালীন তিনি বারবার একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের নাম বলছিলেন।

২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন মেঘনা আলম।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

আমার খুব ইচ্ছে করে বাংলাদেশের স্টেজে গাইতে

শিলাজিৎ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

শিলাজিৎ মজুমদার বাংলা গানের এক রহস্যময় চরিত্র। তাঁর গান আর দশজনের মতো নয়। একেবারেই আলাদা। ভাষা, শব্দ আর সুর নিয়ে তাঁর এক্সপেরিমেন্ট শ্রোতাদের কাছে আকর্ষণীয়। অভিনয়েও তিনি মুগ্ধ করে চলেছেন দর্শকদের। পশ্চিমবঙ্গের এই জনপ্রিয় গায়ক সম্প্রতি কণ্ঠ দিয়েছেন বাংলাদেশের গানে। সবকিছু নিয়ে শিলাজিতের সঙ্গে কথা বলেছেন খায়রুল বাসার নির্ঝর

খায়রুল বাসার নির্ঝর
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৩৯

বাংলাদেশ থেকে অনেক বছর পর আপনার গান বের হলো। ‘ভেঙে গেল’ গানটি তৈরি হওয়ার গল্পটা কী?

গালিব (গীতিকার গালিব সর্দার) তো আমার বহুদিনের ভক্ত। ওর বহুদিনের ইচ্ছে যে, আমাকে দিয়ে একটা গান গাওয়াবে। কিন্তু এত দিন সেটা ম্যাচিউর করেনি। এবার ব্যাপারটা কানেক্ট হয়েছে। ও যে আমার জন্মদিনে গানটা রিলিজ করবে, এটা আমার ভাবনায় ছিল না। গানটার সুর ও কথা মিলিয়ে আমিও ফিডব্যাক পাচ্ছি, সবার ভালো লেগেছে। আমারও ভালো লেগেছে বলেই গেয়েছি। ওর টিম এত সুন্দর একটা ভিডিও তৈরি করেছে, দেখে আমার সত্যিই তাক লেগে গেছে। খুবই মিনিমাল ভাবনায় গোটা জিনিসটা করা।

বাংলাদেশের শ্রোতাদের নিয়ে আপনার এক্সপেরিয়েন্স কেমন?

যেহেতু বাংলাদেশের ভাষাটাই বাংলা। তাই বাংলা গানের শ্রোতা ওখানে আমাদের থেকে বেশি। আমি জানি না বাংলাদেশের লোকসংখ্যা আর পশ্চিমবঙ্গের লোকসংখ্যার ফারাক কতটা! কিন্তু একটা দেশের রাষ্ট্রভাষা যখন বাংলা, সেখানে অন্য রকম মর্যাদা সেই ভাষার। তাই আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষেরা আমাদের এখানকার গান আগ্রহের সঙ্গে শোনেন।

১০ বছর আগে ঢাকায় একবার এসেছিলেন। তারপর আর এখানকার শ্রোতারা আপনাকে পাননি। কোনো বিশেষ কারণ আছে?

আমি একবার বাংলাদেশে একটা রেডিওর জন্য শো করতে গেছিলাম। কিন্তু কোনো লাইভ শো করতে পারিনি। অথচ আমি খুব মুখিয়ে থাকতাম। আমার ক্যারিয়ার ৩০ বছর হয়ে গেল। এর মধ্যে আমাকে সেভাবে কেউ লাইভ শো করার জন্য ডাকেনি। আমিও মিস করছি বাংলাদেশের মানুষকে এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের শ্রোতারাও আমাকে মিস করছেন। এখানকার অনেক গায়ক-গায়িকা আছেন, যাঁরা না হলেও বাংলাদেশে দশ-পনেরোবার গেছেন। আর আমি একবারও যেতে পারছি না, সেটার তো একটা কারণ আছে। আমি ষড়যন্ত্রী বা কন্সপিরেসিতে বিশ্বাস করি না এসব ক্ষেত্রে। সুতরাং, আমি পরিষ্কার করে বুঝতে পারি, আমি অতটা জনপ্রিয় নই বাংলাদেশে।

কনসার্টের ক্ষেত্রে তো নানা ধরনের এজেন্সি কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে শিলাজিতের গান মানে অন্য ধরনের উন্মাদনা। আপনি এখানে গাইতে এলে তখন আসল চিত্রটা ধরা পড়বে...

আসলে কী হয়, যেকোনো কাজ বা কোনো অনুষ্ঠান করতে গেলে তো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু লোক থাকে। তারাই একজন শিল্পীর দর ঠিক করে। তারা মনে করে, এই টাকার মধ্যে উনাকে পাওয়া যাবে। কারণ, তারা অন্য শিল্পীকে এই দরে পেয়েছে। হয়তো অন্যরা আমার থেকে কমে চলে গেছেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আজ না হলেও কাল বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ হবে। যদিও আমার হাতে বিরাট সময় নেই, অলরেডি সিনিয়র সিটিজেন হয়ে গেলাম। সময় যদিও কম, সময় খুব অশান্ত, তবু হয়তো কোনো দিন সুযোগ পাব। আজ গালিবের এই গানটা রিলিজ হলো, মানুষ আমার গান শুনবে। গায়ক হিসেবে আমাকে চিনবে। আরেকটু জনপ্রিয়তা আমার বাড়বে।

সেটা তো অবশ্যই। এখানকার শ্রোতারাও অপেক্ষায় আছেন আপনার গান মুখোমুখি শোনার জন্য। মার্কিন মুলুকে গান শুনিয়ে এলেন। ইউএস ট্যুরটা কেমন হলো?

আমি তো ইউএস ট্যুর নিয়ে একটু সন্দেহে ছিলাম। তার কারণ, বারবার ওরা আমাকে ডেকেছে। আজকে তো নয়। অনেক দিন ধরে ডাকছে। কিন্তু তাদের অ্যাটিটিউড সমস্যা ছিল বলে আমি কোনো দিন যেতে পারিনি। সমস্যাটা কী রকম... আমি জানি না বাংলাদেশের কী রকম মানসিকতা, তবে ভারতবর্ষে একটা মানসিকতা আছে, বিদেশ বা বিলেত গেলে, তারা অনেক কিছুই নিজের জীবনে মওকুফ করে দিতে রাজি আছে। বিদেশে যাচ্ছি, আমেরিকা যাচ্ছি শো করতে, এটা তাদের কাছে পালকের মতো। আমার কাছে তো সেটা নয়। আমার কাছে আমেরিকা গিয়ে শো করাটা এমন কিছু নয়।

আমি যেন শিল্পীর সম্মান নিয়ে ওখানে যেতে পারি। ওখানে বেড়াতে যাওয়ার প্রপোজাল নিয়ে যাব না। আমাকে এ কথাও বলা হয়েছিল, অনেক দিন আগে, ‘আরে আপনি ভাবুন না, আপনি এখানে এসে সব জিনিসপত্র দেখবেন আর কিছু পকেট মানি আর্ন করে যাবেন’। আমি যে মানুষটা, যতটুকু তোমরা চিনেছ, আমার পক্ষে কি এ প্রপোজাল নেওয়া সম্ভব?

এবার গিয়ে দেখলাম, আমার বহু শ্রোতা সেখানে রয়েছে, যারা আমাকে মিস করেছে এত দিন। আমাকে পেয়ে তারা দারুণ আনন্দিত। তাদের পেয়ে আমিও আনন্দিত। আমি চারটে শো করব বলেছিলাম, বেশি করব না, কারণ ফার্স্ট টাইম যাচ্ছি ও দেশে। আমি জানি না কোথায় কী করব, কতটা ট্রাভেল করতে হবে। আমাদের যাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন, আমরা যা যা চেয়েছিলাম, যেভাবে থাকতে চেয়েছি, যেভাবে যেতে চেয়েছি; সমস্তটা তাঁরা মেইনটেইন করে আমাদের নিয়ে গেছেন। ওখানকার মানুষদের থেকে ভীষণ ভালোবাসা পেয়েছি। বাংলাদেশেও যখন যাব, আগুন জ্বলবে আরও বেশি।

এখানকার ভক্তরা আপনার আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন। আপনার গান ছড়িয়ে দিচ্ছেন, আপনার জন্য গান তৈরি করছেন....

আমি খুব খুশি হয়েছি যে, গালিব আমার ভক্ত হিসেবে আমার জন্য গান তৈরি করেছে। ভেবেছে এবং গানটা আমি যে রকম গাই, সে রকম গানের মতো নয়। একটু অন্য ধাঁচের গান। এ গান যে দুম করে কালকে এক লাখ ভিউ হবে, তা নয়।

আমার খুব ইচ্ছে করে বাংলাদেশের কোনো একটা স্টেজে গাইতে। আমার দারুণ লেগেছিল চন্দ্রবিন্দুর লাস্ট শোটা। হাজার হাজার মানুষ চন্দ্রবিন্দুর গান গাইছে, আমি দেখে এত খুশি হয়েছি, আমার মনে হচ্ছে যেন আমারই গান শুনছে।

আপনি তো ফেসবুকে শেয়ারও করেছিলেন ভিডিওটা...

হ্যাঁ, আমি শেয়ার করেছিলাম। কারণ, বাংলা গান যদি কোথাও থেকে কিছু একটা পায়, আমার মনে হয়, ওটা আমার পাওনা। আজকে যখন ইউএস ট্রিপে যাচ্ছি, এবার পূজার সময় আমরা যেমন গেছি, অন্য আরও দুটো দল, তারাও গেছে—রূপমের (রূপম ইসলাম) এবং অনুপমের (অনুপম রায়)। তিন দলেই আটজন করে মেম্বার, ইনক্লুডিং ম্যানেজার। যারা বলত, একজন দুজন মিউজিশিয়ান নিয়ে আসবেন, তার বেশি নিয়ে আসবেন না, তারা এটা বিশ্বাস করেছে যে, গানবাজনাতে এতগুলো লোককে লাগে একটা দলে। আইসোলোটেড একজন গান গাইবে আর ওখানকার একজন কেউ বাজিয়ে দেবে, এটা নয়। গানটার চরিত্র বুঝতে গেলে তাদেরকে দরকার, যাদের সঙ্গে আমার যাপন রোজের। আমেরিকায় প্রচুর বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশি, ভারতীয় সব মিলিয়েই বাংলা গানের বাজারটা বাড়ছে। তবে বাংলা গানকে বলতে শুধু পশ্চিমবঙ্গকে রাখলে হবে না। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ—দুটো জায়গারই তো বাংলা গান। বাংলা গানের অনুষ্ঠানে আমাদের এখানকার শিল্পীরা যত যাচ্ছে, বাংলাদেশি শিল্পীদের অত দেখতে পেলাম না। আমার বিশ্বাস, সামনের সময়ে সেটাও দেখতে পাব। যদি আমার সঙ্গে তাদের দেখা হয়, বাংলাদেশে, আমেরিকাতে অথবা অন্য কোনো দেশে; আমাদের দুই শিল্পীর মধ্যে দেখা হবে, কথা হবে, যোগাযোগ হবে।

কোনো দিন হয়তো জেমসের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। তিনি ইদানীং বিদেশে কনসার্ট বেশি করছেন...

উনি অনেক ওপরের স্তরের মানুষ, ভীষণ জনপ্রিয়, আমরা সেই তুলনায় কিছুই না। কিন্তু উনার গান শুনেছি। মনে হয়, উনি মেজাজে আমার মতোই। আলাপ হয়নি কখনো। আমি জানিও না উনি আমাকে চেনেন কি না। তবে আমি চিনি, জানি। খেয়াল রাখি, কারা কারা গান গাইছে, তাদের গান শুনি। পছন্দ করি। এলআরবি, আর্টসেল, আরও সব নতুন ছেলেপুলেরা গান গাইছে। অর্ণব। অনেকেই আছে।

আপনার গানের মূল শ্রোতা নব্বইয়ের দশকেও তরুণেরা ছিলেন। ২০২৫ সালে এসেও সেই তরুণ প্রজন্ম। সব প্রজন্মের ইয়াং ক্রাউডকে আকর্ষণ করার এই ম্যাজিকটা কী?

এটা একটা মজার ব্যাপার। আমি জানি না অন্যদের গানের বেলায় কেমন, তবে আমার বেলায় আমেরিকা গিয়েও খেয়াল করলাম, আমার একটা শোতে যদি এক শ লোকের সমাগম হয়, তার মধ্যে কুড়ি-পঁচিশজন আঠারো বা তার থেকে নিচের বয়সী। অথচ, সেখানকার পরবর্তী জেনারেশন বাংলা গান শোনে না বলা হয়। আমার সঙ্গে দুটো বাচ্চা ছেলে স্টেজে গান গাইল। আমার ভালো লাগল যে যাদেরকে জেন-জি বলা হচ্ছে, তাদের মধ্যেও আমার গান রয়েছে। কলকাতায়ও দেখি, আঠারো থেকে চব্বিশের মধ্যে ছেলেপুলেরা আমার গান শুনছে। তাদের কাছে যে পৌঁছাতে পারছি, এটা বিরাট পাওনা। এত দূর পৌঁছাব ভাবিনি। এত দিন তো আমার রিটায়ার করে যাওয়ার কথা। আর এখনই দেখছি, যত নতুন নতুন ডিরেক্টর আসছে, তারা আমাকে নিয়ে গান গাওয়াতে চাইছে। অভিনয় করাতে চাইছে। এত দিন তারা সুযোগ পায়নি বলে আমিও সুযোগ পাইনি।

আপনার গান তো লিরিক্যালি খুবই সমৃদ্ধ। নতুন প্রজন্মের, যাঁরা খুব বেশি সাহিত্য পড়েননি, তাঁদের তো আপনার গানের সঙ্গে কানেক্ট করতে সমস্যা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। কারণটা কী মনে হয় আপনার কাছে?

বাংলা সাহিত্য আমার মতো ছেলেও যতটুকু পড়েছে, তারা হয়তো তার থেকেও কম পড়েছে। কিন্তু আমার সঙ্গে কানেক্ট করতে পারছে, তার কারণ বোধ হয়, ভাষা-সাহিত্য সুরের বাইরে। আমার মনে হয়, অ্যাটিটিউট ও দর্শন। যাদের সঙ্গে আমার রোজ দেখা হয়, তাদের সবার বয়স আঠারো-উনিশ-কুড়ি থেকে শুরু। তারা আমাকে পছন্দ করে। ওদের সঙ্গে মিশতে আমার ভালো লাগে। কথা বলতে ভালো লাগে। ওদের কথা শুনতে ভালো লাগে। আমার মনে হয়, আমি ওদেরই, ওই জেনারেশনেরই। আমার দলটা যদি দেখো, সেখানে আমি ছাড়া সব অবিবাহিত, তারা আমার অর্ধেক বয়সী। এই ছেলেমেয়েগুলো এসে আমার সঙ্গে গান গাইছে। আমার সঙ্গে লাফাচ্ছে-ঝাপাচ্ছে। এটাই কারণ যে, আমি ওদের সঙ্গে খুব সহজে মিশতে পারি।

আমি আমার সময়টা, যেটা কাটিয়েছি, তার কিছু আবর্জনা বা লাগেজ নিয়ে ঘুরিনি। সব বাবা তো ভুলে যায়, সে-ও কোনো দিন ছেলে ছিল। কিন্তু আমার মধ্যে সেই ছেলেটা বেঁচে আছে। যার জন্যই বোধ হয় আমি তরুণদের সঙ্গে নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে মিশতে পারি, তারা আমার সঙ্গে কথা বলতে পারে। আমাকে এখনো তারা শিলুদা বলে, যেখানে শিলু দাদু বলা উচিত ছিল।

আপনি তো তরুণদের প্রতি ক্রিটিক্যাল নন। সব সময় আশাবাদের কথা বলেছেন। ‘শ্মশানে, কফিনে বা মুদির দোকানে’ স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। এই বক্তব্যের কারণেই তরুণেরা বেশি পছন্দ করেন আপনাকে?

তুমি, আমি, সবাই—আমাদের জীবনের সংঘাত, সমস্যা ও অশান্তি—এগুলো তো থাকবেই। আর একটা ধারণা থাকে যে, আমরা বোধ হয় বেশি জানি। কারণ, আগে জন্মেছি বলে। এই ধারণা আমার নেই। যখন কোনো বাচ্চা একটা কাজ করে, তাকে আমি ‘ধুর ধুর তুই কী ঘোড়ার ডিম জানিস’—এসব বলি না। আমার মনে হয়, আমিও তো ওর মতো ছিলাম। এখনো আছি। এখনো আমার ভুল হয়। এখনো আমি ভুল জায়গায় পা দিই, ভুল জায়গায় হাত দিই।

এই বাচ্চাগুলোর প্রতি এটা আমার সিমপ্যাথি নয়। এটা খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার মনে হয়। বয়সটা আমার কাছে ফ্যাক্টর মনে হয় না। বড় হওয়ার সুবিধা নিই। সেটা অন্য কথা। বড় হওয়ার কারণে আমাকে প্রণাম করে, প্রণামটা হয়তো গ্রহণ করি। কিন্তু বয়স বেশি বলেই তোর থেকে আমি সবকিছু বেশি জানি, তা বলি না। আমার অভিজ্ঞতাগুলো, উপলদ্ধিগুলো তাদেরকে বোঝাই। বোঝাতে পারি। কিন্তু তারা এই সময়টায় এসব ভাববে না, আমি জানি। আমার যখন ১৫ বছর বয়স ছিল, তখন তো এখনকার বয়সের মতো ভাবিনি।

বাচ্চাদের ‘করিস না’ বলার থেকে ‘কর’ বলাটা ভীষণ প্রয়োজন। এটাই আমি ওদেরকে বলি।

এ রকম সমর্থন বা সহযোগিতা আপনি পাননি শুরুর সময়ে। নানা রকম সমালোচনার মধ্য দিয়ে আপনাকে আসতে হয়েছে। সে কারণেই কি নতুনদের ক্রাইসিস বেশি করে ফিল করেন?

হতে পারে। আমি এটাকে একদম না বলে দিতে পারব না। আমাদের সময়টায় শুধু আমি নই, অনেকেই ছিল, তাদেরকে ভয় দেখানো হতো। ‘এটা করিস না, এটা হবে না, এটা আমাদের দ্বারা হয় না’। সেটা শুনে হয়তো আমরা থমকে গেছি। কিন্তু পাশেই দেখতে পেয়েছি, আরেকটা লোক, সে কিন্তু আমার মতো অবস্থায় ওই উচ্চতায় পৌঁছাতে চেয়েছে এবং পেরেছে। ছোটবেলায় বলতাম, বাবা, আমি মুম্বাইতে গিয়ে হিরো হব। প্রতিবেশীকে বলতাম, কাকুদের বলতাম। আমাকে কেউ বিশ্বাস করত না। পাত্তা দিত না। আমাকে বলত—সম্ভব না, ছেড়ে দে। কিন্তু আমারই পাড়ার এঁদো গলিতে, আমার থেকেও দুরবস্থায় থাকা একটা লোক মুম্বাইয়ে গিয়ে সুপারস্টার হলো। আমাদের চোখের সামনে। বিশ্বব্যাপী তার নাম ছড়িয়ে গেল। তার পাড়ার গলিতে সকাল ৯টার আগে আলো ঢুকত না। সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল মিঠুন চক্রবর্তী। আমার পাড়াতেই একটা টিনের চালের বাড়িতে, যেখানে সব কংক্রিটের বাড়ির মধ্যে একটা টিনের চালার বাড়ি ছিল, সেখানে আমার এক কাকুর বন্ধু থাকত। সে ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবলার। বেস্ট অ্যাথলেট অব হিজ টাইম। এগুলো তো আমার চোখের সামনে দেখা। তাদের থেকে ভরসা পেয়েছি।

ছেলে ধী মজুমদারও তো আপনার পথ ধরে গানে এসেছে। একসঙ্গে গানও করতে দেখা গেছে আপনাদের। ছেলেকে আপনি কী পরামর্শ দেন?

আমি যেন কোনো দিন বাবা না হয়ে যাই, এই চেষ্টাই করে গেছি ছেলের কাছে। শাসন করার এক-দুবার চেষ্টা করেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি তাকে বেশির ভাগ সুযোগটা দিয়েছি। শাসন তো একটু রাখতেই হয়। অনুশাসনের খুব প্রয়োজন আছে। সুযোগটা দিয়েছি, যাতে নিজের মতো করে চিন্তা করতে পারে। শুধু আমার ছেলে বলে নয়, আমার কাছে ওই বয়সী, তার থেকেও কম বয়সী ছেলেমেয়েরা আসে। তাদেরকেও আমি একই কথা বলি। যেটা চাইছিস, সেটা কর। পড়াশোনা করতে চাইলে জানার জন্য কর, নম্বরের জন্য করিস না। খ্যাতি হবে, নাম হবে, একটা বাড়ি করব, গাড়ি করব—ভাবিস না। বাড়ি-গাড়ি তোকে ফলো করবে। আগে মন দিয়ে যে কাজটা করতে চাইছিস, সেটা কর। কেউ কিছু বলল বলে তুই থেমে যাবি কেন! নিজের কনফিডেন্সটা আসল। আর যদি মনে হয়, যে মতটা পাচ্ছিস, সেটা সুচিন্তিত, যদি মেলে, তাহলে সেই পদ্ধতিতে যাওয়ার চেষ্টা কর।

যখন অন্যের লেখা ও সুর করা গান করেন, তখন কতটা স্বাধীনতা দেন?

আমাকে যদি কোনো লিরিসিস্ট বলে, এই গালিবই যখন লিখেছে, বলেছে, তুমি কিছু বদলাতে চাইলে, চেঞ্জ করতে চাইলে করো। আমি বলি, আমি আইডিয়া দিতে পারি, চেঞ্জ করতে পারব না। কারণ, লিখেছ তুমি। আমি তোমাকে বলে দিতে পারব, এই জায়গাটা কী রকম লাগছে। কিন্তু ডিসিশন তোমাকে নিতে হবে। নাহলে অরিজিনালিটি মার খাবে। আমি যদি একটা সেনটেন্স বলে দিই, তাহলে তো সেটা আমার হয়ে যাবে। ওটা তোমার জিনিস হতে হবে।

বীরভূমের সঙ্গে খুব নিবিড় সম্পর্ক আপনার। প্রত্যন্ত মানুষ, প্রত্যন্ত অঞ্চল, সুবিধাবঞ্চিত জনপদের প্রতি অন্য রকম টান দেখতে পাই। সেখানে কি অরিজিনালিটি খুঁজে পান বেশি?

আমি জন্মেছি একটা অজ গ্রামে। ছয় মাস আমি ওখানেই ছিলাম। তারপরে কলকাতায় আসি। আমার বাবা, আমার দাদু তখন অলরেডি কলকাতায় থাকতেন। আমার ওই ছয় মাস আঁতুড়ঘরে শুয়ে থাকা অজ্ঞান অবস্থায়, সেখানে যে সুজুনিটা দেওয়া হয়েছিল, যার ওপর আমি শুতাম, তার নিচে মাটি ছিল। সেই মাটির সঙ্গে আমার কানেকশন। খুব কঠিন কানেকশন এটা। আমি আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিখেছি এবং আরও কিছু বন্ধুবান্ধব, সমাজ—তাদের কাছে শিখেছি, নিজে নিজেও শিখেছি কিছু জিনিস; এটা আমাকে বুঝিয়েছে যে, সবাই আমরা এক। প্রতিটি মানুষের মধ্যে ট্যালেন্ট আছে। প্রতিটি মানুষ আজকে যে অবস্থায় আছে, সে কালকে সেই অবস্থায় থাকতে না-ও পারে। আজকের দিন দেখে যদি আমি তাকে বিচার করে ফেলি, সেটা ভুল হবে। আর তার কী জাত, কী ধর্ম, কী ভাষায় কথা বলে, বড় বড় লোকেরা ওদের সম্বন্ধে কী বলে গেছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

ফলে মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ভালো। গ্রামে গেলে মনে হয় অনেক জায়গা। একজন একটা জায়গায় ঢুকে পড়লে, সেখানে আর কেউ ঢুকতে পারবে না, তা নয়। স্পেস প্রচুর। প্রকৃতি আমার খুব ভালো লাগে। যাই একটু, নির্মল আকাশ, একটু কম দৃশ্যদূষণ, রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, আকাশ দেখতে পাচ্ছি, গাছ দেখতে পাচ্ছি। (শহরে) পোস্টার, হোর্ডিং, ব্যানার, তার মধ্যে নেতা-কাউন্সিলরদের ছবি, বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি—ভালো লাগে না। তবে এখন তো গ্রামটা প্রায় শহরের মতো। গ্রামের লোকজন আমার থেকে বেশি শহুরে। আছে হয়তো গ্রামে, কিন্তু সেখানে থাকতে চায় না।

গ্রাম থেকে প্রতিনিয়ত মানুষ ভিড় করছে শহরে...

তারা বাধ্য হচ্ছে। এখানে একটা বড় রাজনীতি আছে। যদি সে রকমভাবে তুমি স্বশাসিত করতে পারতে, তাহলে তো গ্রামের লোকদের দরকার পড়ত না টাকা ইনকাম করার জন্য শহরে আসার। সে যদি গ্রামে নিজের ঘরে থেকে প্রয়োজনীয় টাকাটা ইনকাম করতে পারত, তাহলে কি শহরে আসত?

গ্রামে তো কাজের সংকট, মজুরিবৈষম্য আছেই। মর্যাদাগত জায়গা থেকে কৃষকেরা প্রচণ্ড অবহেলিত হয়ে আছে...

বাংলাদেশের কথা জানি না, আমার এখানে কৃষকদের শিক্ষিত করা হয়নি। শাসক বা সরকার যারা ছিল, তারা যদি এই ইনিশিয়েটিভটা নিত যে, সবাইকে শিক্ষিত করব। কীভাবে ভালো চাষ করা যায়, সেটা শেখাব। চাষটাকে সাবজেক্টের মধ্যে রাখব। যেখানে চাষার ছেলেরা পড়াশোনা করবে। সেটা করেনি। এক বিঘা জমিতে এক শ টিন ধান হতো আগে, এখন এসে ৭৫ টিনে ঠেকেছে। তারা যদি শিক্ষিত হয়ে সেটাকে সুন্দরভাবে করে, ওখান থেকে এক-দেড় শ টিন ধান উৎপাদন করতে পারত এবং ঠিক মূল্যে বেচতে পারত; তাহলে বাদবাকি মর্যাদা তারা এখান থেকেই তুলে নিত। যারা গোটা দেশটাকে কন্ট্রোল করে, এটুকু করার ক্ষমতা তাদের ছিল। সেটা করলেই কৃষকদের, মজুরদের আত্মবিশ্বাসও বাড়ত, মর্যাদাও বাড়ত।

সামাজিক বৈষম্যের বিষয়টি বারবার এসেছে আপনার গানে। ‘ভিআইপি রোড যত্নে মোড়া, আমার গলির রাস্তা খোঁড়া’ এ রকম রাজনৈতিক বক্তব্যও তুলে এনেছেন...

যে গানটার কথা তুমি বললে—বেতাল বেচাল। ৯৪ সালে অ্যালবাম বের করার পরে এটা প্রথম দুই-তিন-চার বছর আমার শোতে জায়গা পেত। তারপরে নুতন গান এসেছে, ওই গান চলে গেছে। কারণ, আমি আর ওই গান গাইনি। আর ওটা বলতে ভালো লাগছে না। কিন্তু এবার আমেরিকাতে গিয়ে, অনেক গান যখন অনেক দিন পর গাইছিলাম, তখন রিয়েলাইজ করেছি যে, ৩০ বছরে পৃথিবীটা পাল্টায়নি। আজও এই কথাটা ভীষণ প্রাসঙ্গিক। ‘ভিআইপি রোড যত্নে মোড়া, আমার গলির রাস্তা খোঁড়া’, কিংবা ‘রবিতে শনি, শনিতে সুখ, শেষ হলেই আবার সোম/পথ অবরোধ ধার শোধবোধ, ইলেকশনের দু-চারটে বোম/ এমনি করেই কাটবে দিন নিত্যনতুন নাগপাশে/ পুলিশে ধরবে নিরীহ গরু হঠাৎ কখন মাসের শেষে/ বাংলা মদের দোকানগুলোয় মাসের শেষেও ভিড় বেশি/ এ দিন বদল করতে গেলে বদলি হবেন লোকাল ওসি’—এটা আজকেও সত্যি। এ জন্য এখন আর এগুলো নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। এ গান করতে ইচ্ছে করে না। আমি অন্য কোনো গানের খোঁজে আছি।

কী ধরনের গান?

আমি জানি না। আমি যখন প্রথম গান শুরু করেছিলাম, ভেবেছিলাম, অন্য রকম কিছু করব। এই ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে ১৫-১৬ বছর হয়ে গেল আমি নিজস্ব অ্যালবাম, বেসিক অ্যালবাম বের করিনি। কারণ, আমার মনে হচ্ছে, আমি আমাকে টপকাতে পারছি না। আমি যেটা করেছি, তার বাইরে আর কিছু করতে পারছি না। সিনেমার গান, ফরমায়েশি গান বা অন্য কেউ গাওয়াচ্ছে যে গান, সেগুলো গাইছি। অগায়ক থেকে গায়ক হয়ে গেছি, প্রথম প্রথম সন্দেহ ছিল লোকের, এখন তাদের মনে হচ্ছে, শিলাজিৎকে গায়ক তো ভাবতেই হবে। কিছু করার নেই। আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় আর নেই।

লোকে যা-ই বলুক, আপনি তো আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। আপনার ভেতরে তো কোনো ধরনের কনফিউশন ছিল না যে, আপনি কীভাবে শব্দগুলো নিয়ে আসবেন। কীভাবে গানের শরীরটা তৈরি করবেন...

উনারা আমাকে অগায়ক ভাবার আগেই আমি জানতাম, আমি অগায়ক। আমি জানতাম, ভারতবর্ষে, পশ্চিমবঙ্গে, পৃথিবীতে যেভাবে গান গাওয়া হয়, বেশির ভাগ লোক যেটাকে গান মনে করে, আমি যেভাবে করছি, সেটা ও রকম নয়। আমারটা একটু আলাদা। আমি অনেক কিছু জোড়াতালি দিচ্ছি। ‘দূরে’ শব্দকে যদি সুর করতে হয়, আমি বলছি দূ....রে (অনেকটা টেনে), আর যারা গান জানে, তারা সেটাকে বলছে... দূরে (কণ্ঠের কারুকাজ দিয়ে)। আমি জানি, ভোরবেলার পরিস্থিতিটাকে বোঝানোর জন্য এক শ মিউজিক ডিরেক্টর ভোরের রাগকে প্রিলিউড করেছেন। আমি শুরু করেছি ভোরের অ্যাম্বিয়ান্স দিয়ে। সেটাই আমার চাহিদা। অন্য কিছু শব্দ, অন্য কিছু আওয়াজ। আমার এই অন্য আওয়াজটা লোকে পছন্দ করেছে এবং এখনো আমার পেট চালাচ্ছে তারা। এটা দীর্ঘদিন ধরে হয়ে যাওয়ার পর আর তো উপায় থাকে না। যে লোকগুলো বলেছিল—ও শেষ হয়ে যাবে বেনোজলে। আর তো বলতে পারছে না। ৩০ বছর পর আর কিইবা বলবে। ৩০টা বছর কি কম? পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম ও বাম ফ্রন্ট ছাড়া কোনো দেশে কোনো জায়গায় কেউ ৩০ বছর ধরে শাসন করেছে? পেরেছে? আমি শাসন হয়তো করিনি, টিকে তো আছি।

আপনি নিজেই নিজেকে অগায়ক বলেন, তাহলে গান গাইতে আসার সাহস করেছিলেন কীভাবে?

কাজটা করতে নিজের ভালো লাগছিল। সেটাকে টেস্ট করছিলাম নিজের সঙ্গে। আমি স্পোর্টসম্যান, শারীরিক কসরতে অনেক কিছু করতে পারি। আমি নাচও করতাম ভালো। পাড়ায় নাচলে লোকে অ্যাপ্রিশিয়েট করত। কিন্তু গান গাওয়া আমার চিন্তায় ছিল না কখনো। বন্ধুবান্ধবেরা গাইত। তাদের কাছে গান শুনতাম। মামাবাড়িতেও সমৃদ্ধ একটা গানের কালচার ছিল। কিন্তু আমি গাইব, ভাবিনি কখনো। কম্পোজার ভাবতাম নিজেকে। দেখলাম, আমি একটা গান লিখতে পারছি। ‘তুমি যা জিনিস গুরু, আমিই জানি, আর কেউ জানে না’—আমি কথাটা বলতে পারলাম। ওটা সুর করার সময় কোনো পাণ্ডিত্য আমাকে হেল্প করেনি, আমি যা বলতে চাইলাম, সেটাই বের হলো। ‘বাজল ছুটির ঘণ্টা’ কিংবা ‘তোর ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা’—এটা বলতে চাইছি। আমি সুর-তাল কিছু বুঝিনি। ভেবেছিলাম, অন্য আরেকজন বা অন্য কেউ গান গাইবে আর আমি তৈরি করব। এ সময় এক তথাকথিত পাড়ার বন্ধু আমার উপকারটা করে। ওকে আমি নিজের গান গাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। ও বিভিন্ন মঞ্চে আমার গানগুলো গাওয়া শুরু করে। বলতে শুরু করে, ওগুলো ওর গান। ইট ওয়াজ বিগ থ্রেট ফর মি যে, আমার গানগুলো পপুলার হয়ে যেতে পারে অন্যের নামে। সুতরাং, আর কিছু করার নেই, যা পারি, আমাকেই গাইতে হবে। ১৯৮৪ সালে হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছি, তখন থেকে আমি নতুন শব্দ, নতুন কিছু খোঁজার চেষ্টা করছিলাম, নতুন ফর্ম। প্রথম অ্যালবাম রিলিজ করেছি ১৯৯৪ সালে। এই দশ বছর আমি শিখেছি।

কিন্তু তারপরও তো নিজের গানকে কখনো গান বলতেন না আপনি। সেটা কেন?

আমি আমার অ্যালবামে গান লিখতাম না। প্রতিটি অ্যালবামে শুধু লেখা থাকত ‘ভূমিকা—শিলাজিৎ’। এবার এটা গান কি না, সেটা শ্রোতাদের ওপর ছেড়ে দিই। ‘সর্বনাশ’-এ এসে প্রথম আমি লিখলাম, শিলাজিতের ৯টা কালো গান। তত দিনে আমার আটটা অ্যালবাম বেরিয়েছে, ৯ নম্বর অ্যালবাম বেরোচ্ছে। কিছু কিছু মজা করতাম। অ্যালবামে ইচ্ছে করে বানান ভুল করতাম, যাতে লোকে জিজ্ঞেস করে, এই বানানটা ভুল কেন? তার মানে বুঝতাম, ও দেখেছে। আমার ক্যাসেটে সাইড এ, সাইড বি-এর বদলে ‘এপিঠ ওপিঠ’ লেখা থাকত। ফিসফিস অ্যালবামে যেমন প্রথম গানের লিরিক রিভার্স প্রিন্ট করে দিয়েছিলাম। লিখেছিলাম, আয়না দেখুন। যে ইন্টার-অ্যাকটিভ হয়ে আয়নায় দেখবে, সে লিরিকটা দেখতে পাবে। ‘যা পাখি উড়তে দিলাম তোকে’ গানের আগে এমন লো-ভলিউমে রেখেছি মেয়ের গলাটা—ভলিউম তোমাকে বাড়াতেই হবে। যেই বাড়াল, মিউজিক আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ এমন জোরে আওয়াজ হলো, আবার কমাতে হবে। ঝিন্টি গানে ইচ্ছে করে একটা মোবাইল নয়েজ রাখলাম। একটা ব্রেকের আওয়াজ দিয়ে ‘সর্বনাশ’ অ্যালবাম শেষ করলাম। বললাম, ‘এই ব্রেকের আওয়াজ শুনে হয়তো অনেকে ভাববে, কেন অ্যালবামটা ব্রেক কষে শেষ হলো। যারা ভাববে, তাদের সঙ্গে আমার দেখা হবে, আর যারা ভাববে না, তাদের আমি দেখে নেব।’ অ্যালবাম শুনে আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেছে, ‘শিলুদা, ব্রেকের আওয়াজ দিয়ে কেন শেষ হলো?’ আমি বললাম, ‘দেখা হলো তো? আমি তো বলেছিলাম, দেখা হবে।’ আমি সব সময় চেষ্টা করেছি ইন্টার-অ্যাকটিভ কিছু করতে, লোকের সঙ্গে যাতে আমার যোগ তৈরি হয়। আমার জন্য যাতে একটু ডিস্টারবেন্স হয়। একটু টেনশন হয়। ভালো লাগা তৈরি হয়। আই বিলিভ, এভরি পিস অব সাউন্ড ইজ মিউজিক।

সাউন্ড নিয়েই শেষ প্রশ্নটা করব। সাউন্ড নিয়ে আপনার এক্সপেরিমেন্ট বাংলা গানে আগে দেখা যায়নি। পাখির ডাক, হকারের হাক, রেডিওর ধারাভাষ্য হয়ে ওঠে আপনার গানের অনুষঙ্গ। এগুলো গানের অংশ হতে পারে, এ ভাবনাটা কীভাবে এল?

আমি নিরালা দুপুর বলে একটা গান করেছিলাম, সেই গান যখন বেঁধেছি, আমার গ্রামের বাড়ির ছাদে গিটার স্ট্রং করছি আর একটা ঘুঘু ডেকে যাচ্ছে ক্রমাগত। তার সঙ্গে আরেকটা ঘুঘু জয়েন করেছে। দ্যাটস গিভিং মি দ্য মেলোডি, অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ পারকাশন। দ্যাটস মাই মিউজিক, দ্যাটস মিউজিক টু মি। লিমিটেশনের জন্য আমার গান আলাদা হয়েছে আরও বেশি। আমি একটা ভোরবেলার মিউজিক তৈরি করব, আমার কাছে ভোরের রাগ নেই। আমি হয়তো দশটা রাগের নাম জানি না। তাহলে আমি ভোরবেলার পরিবেশটা কীভাবে শ্রোতার কাছে পৌঁছাব? কী করে বোঝাব যে গানের শুরু একটা ভোরবেলায়? ভোরের সাউন্ড খুঁজতে শুরু করলাম। অদ্ভুত সব জিনিস মাথায় এল। দাঁত মাজছি। কিন্তু দাঁত মাজার শব্দ দিলে সেটা নয়েজের মতো লাগছে, ভিজ্যুয়ালটা বোঝা যাচ্ছে না। তাহলে মানিকতলার মোড়ে তুমি দাঁড়িয়ে কাকভোরে, একটা চায়ের দোকান যদি হয়। রেডিওতে জাস্ট প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে। আর রেডিওতে বন্দে মাতরম শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে চায়ের কাপের খটখট। সেখান থেকে গানে ঢুকলাম। কী অদ্ভুত সমাপতন! সাউন্ডটাকে আমি ওইভাবে দেখতে পাই। তারা পড়ছে? তাহলে তারা পড়ার শব্দটা কেমন হবে? সেটা বের করার জন্য ভেতরে একটা ট্রায়াল অ্যান্ড এরর প্রসেস চলতে থাকে। খোঁজা চলতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে তারপর পাই।

এ রকম বিভিন্ন শব্দ, বিভিন্ন নয়েজের মধ্যে আমার মনে হয় গান হতে পারে। হয়। হয়েছে। এটা আমি পৃথিবীতে প্রথম করিনি। আমি যেভাবে অ্যাপ্লাই করেছি, হয়তো অন্য কেউ করেনি। কিন্তু এই মুহূর্তে পৃথিবীতে কত মানুষ নতুন কিছু করার কথা ভাবছে। আমি এটা করেছি প্রথম, আর কেউ করেনি—এটা বলার আগে একটু সাবধানে। কারণ, এ পৃথিবী কোটি কোটি মানুষের। সবাই কিছু না কিছু করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি কর্মী হত্যা মামলায় ইরেশ যাকেরকে অব্যাহতির সুপারিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইরেশ যাকের। ছবি: সংগৃহীত
ইরেশ যাকের। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর মিরপুরে গুলিতে বিএনপি কর্মী মাহফুজ আলম শ্রাবণ হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলা থেকে অভিনেতা ইরেশ যাকেরকে অব্যাহতির সুপারিশ করে অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। ৯ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক সাজ্জাদ রোমন এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আজ বৃহস্পতিবার আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ মামলার আরেক আসামি ফোরথর্ট পিআরের (কনসার্ন অব এশিয়াটিক) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকরাম মঈন চৌধুরীকেও অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরেশ জাকের ও ইকরাম মঈন চৌধুরী মামলার ঘটনাস্থল উপস্থিত ছিলেন মর্মে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। ওই দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিতির স্থিরচিত্র বা কোনো ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তাঁরা মামলার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে মামলার ঘটনা সংঘটিত করেছিল মর্মে কোনো তথ্যবহুল দালিলিক সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বিধায় তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অপরাধের দায় থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী গত ২০ এপ্রিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন। ওই দিন আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে অভিযোগটি মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলা হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। মামলাটিতে অভিনেতা ইরেশ যাকের ১৫৭ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, তাঁর ভাই মাহফুজ আলম শ্রাবণ (২১) বিএনপি কর্মী রেনেটা কোম্পানির কর্মচারী। ঘটনার দিন গত ৫ আগস্ট দুপুরে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের চূড়ান্ত পতনের লক্ষ্যে বেলা আড়াইটার সময় ছাত্র-জনতার মিছিল মিরপুর মডেল থানাধীন মিরপুর শপিং কমপ্লেক্স ও মিরপুর মডেল থানার মধ্যবর্তী রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ভাই গুলিবিদ্ধ হন। তখন সেখানে উপস্থিত ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ ভাইকে চিকিৎসার জন্য রিকশায় করে মিরপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রেক্ষাগৃহে আসছে লোকনাট্য পালা অবলম্বনে ‘বেহুলা দরদী’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
‘বেহুলা দরদী’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘বেহুলা দরদী’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

সিনেমা মুক্তির ধুম পড়েছে ঢাকাই সিনেমায়। গত দুই মাস প্রতি সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে নতুন সিনেমা। এ মাসের শেষ দিনেও মুক্তির ঘোষণা এল আরেক সিনেমার। ৩১ অক্টোবর সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ‘বেহুলা দরদী’। টাঙ্গাইল অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতি ও বেহুলা নাচারি গীতিনাট্যকে কেন্দ্র করে সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন সবুজ খান। উৎসব অরিজিনালসের ব্যানারে সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন জাহিদুল ইসলাম।

টাঙ্গাইলসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় একসময় বেহুলা ও লখিন্দরের কাহিনিকে কেন্দ্র করে গীতিনাট্য বেহুলা নাচারি পালা প্রদর্শিত হতো। এমন একটি দলের সদস্যদের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমার কাহিনি। গল্পে দেখা যাবে, নাগবাড়ি বেহুলা নাচারি দলের প্রধান ভোলা মিয়া তাদের নাচারি গানের দলটিকে টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। কয়েকবার ইউনিয়নভিত্তিক প্রতিযোগিতায় হেরে দলটির সম্মান প্রায় তলানিতে। এই অবস্থায় দলটিকে প্রতিযোগিতায় জেতাতে চলে নানা চেষ্টা।

দলের প্রধান ভোলা মিয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু। আরও আছেন প্রাণ রায়, সূচনা সিকদার, আজিজুন মীম, আশরাফুল আশীষ, আফফান মিতুল, সানজিদা মিলা প্রমুখ। পুরো সিনেমার শুটিং হয়েছে টাঙ্গাইলে।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান উৎসব অরজিনালসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘একটি দেশের সব সিনেমাই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। কিছু সিনেমা শুধুই বিনোদন, দর্শক চাহিদা আর বাণিজ্যিক বিষয়টি মাথায় রেখে বানানো হয়। আবার কিছু সিনেমা তৈরি হয় দেশের মাটি, সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রাকে আমলে নিয়ে। সে ক্ষেত্রে নির্মাতার দর্শন ও ভাবধারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বেহুলা দরদী তেমনই একটি সিনেমা, যার পরতে পরতে মাটির ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। আর পাওয়া যাবে এ দেশের মানুষের যাপিত জীবনের সন্ধান!’

নির্মাতা সবুজ খান বলেন, ‘বিলুপ্তপ্রায় এক সংস্কৃতিকে নতুনভাবে দর্শকের সামনে তুলে ধরাই এই সিনেমার মূল লক্ষ্য। আশা করছি দর্শকের ভালো লাগবে।’

ফজলুর রহমান বাবু বলেন, বেহুলা দরদী টাঙ্গাইল অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতির গল্পে নির্মিত একটি সিনেমা। সবুজ খানের পরিচালনায় দারুণ একটি কাজ হয়েছে। সব থেকে বড় কথা, আমরা কাজটি করেছি একটি দায়বদ্ধতা থেকে। কারণ আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতি বিশ্বদরবারে তুলে ধরাটা সত্যি আনন্দের।’

বেহুলা দরদী সিনেমার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন মোশাররফ করিম, যাহের আলভীসহ অনেক অভিনয়শিল্পী। মোশাররফ করিম বলেন, ‘ভাসান গানের একটি দলের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বেহুলা দরদী। পরিচালনা করেছেন সবুজ খান। গল্পটি শুনেই আমি আনন্দিত, কারণ এটি আমাদের লোকজ সংস্কৃতির গল্প, আমাদের মাটির গল্প। সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি সিনেমাটি দেখার জন্য। আপনাদের অংশগ্রহণ আমাদের চলচ্চিত্রকে বেগবান করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বজুড়ে বাংলা গানের প্রসারে গীতিকার সুজনের উদ্যোগ

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
বিশ্বজুড়ে বাংলা গানের প্রসারে গীতিকার সুজনের উদ্যোগ

গানের প্রতি এনামুল কবীর সুজনের ভালোবাসা ছেলেবেলা থেকে। বন্ধুদের সঙ্গে গাইতেন, তবে গাওয়ার চেয়ে লেখাতেই মন টানত বেশি। গানের খাতা কিংবা ডায়েরির পাতাগুলো ভরিয়ে তুলতেন নিজের লেখা গান আর কবিতায়। প্রায় দেড় দশকের বেশি হতে চলল পেশাদার গীতিকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন সুজন। দেড় দশক আগে বাসুদেব বসুর সুরে সুজনের লেখা গান কণ্ঠে তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমীন ও জেমস। সেই থেকে দেশ-বিদেশের অনেক শিল্পী গেয়েছেন এনামুল কবীর সুজনের লেখা গান।

বাংলা গানের প্রসারে নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন সুজন। দোতারা মিউজিক নামে গড়ে তুলেছেন গানের একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বাংলাভাষী শিল্পীদের গান প্রকাশ করবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের গান নিয়ে কাজ শুরু করেছে প্ল্যাটফর্মটি। সুজন এখন কাজ করছেন প্রবাসী শিল্পীদের গান নিয়ে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পীদের সঙ্গে কথা এগিয়েছেন। এই তালিকায় আরও রয়েছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কিছু দেশ।

এ ছাড়া রূপকথা প্রোডাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সুজনের। এর ব্যানারে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। বাংলা গানের প্রসারের কথা মাথায় রেখে এবার তিনি মন দিয়েছেন বিদেশের মাটিতে বাংলা গানের কনসার্ট আয়োজনে। এরই মধ্যে আসিফ আকবর ও আতিয়া আনিসাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজন করেছেন একাধিক কনসার্ট। বাংলাদেশের অন্য শিল্পীদের নিয়েও বিদেশে কনসার্ট করতে চান সুজন।

সুজন বলেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে বাংলা গানের প্রসারে নিরলস কাজ করার চেষ্টা করছি। আমাদের সমৃদ্ধ গানের ভান্ডার রয়েছে, রয়েছে মেধাবী শিল্পী। কিন্তু সময়োপযোগী উদ্যোগের অভাবে পিছিয়ে পড়ছি আমরা। সেই প্রাচীরটা ভাঙতে চাই আমি।’

এনামুল কবীর সুজনের লেখা উল্লেখযোগ্য কিছু গান কবীর সুমনের গাওয়া ‘জীবন’, নচিকেতার গাওয়া ‘শান্তি আসুক ফিরে’, আসিফ আকবরের ‘কিছু কিছু কথা’, রথীন্দ্রনাথ রায়ের ‘ভুল পথ’, আঁখি আলমগীরের ‘প্রাণের সুজন’, রেহান রসুলের ‘নীল দেয়াল’, কৃষ্ণকলির ‘একটা গন্ধ জড়ায় থাকে’, স্বরলিপির ‘একুশের গান’ ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে খালিদ (চাইম), রথীন্দ্রনাথ রায়, আসিফ আকবর, পান্থ কানাই, কৃষ্ণকলি, মাহাদি, রাজীব, সন্দীপন, আঁখি আলমগীর, সালমা, কোনাল, কর্নিয়া, কিশোর, অবন্তি সিঁথি, ঐশীসহ জনপ্রিয় অনেক শিল্পীর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছিল সুজনের লেখা ‘বাংলাদেশ আমার’ গানটি। সুজন জানিয়েছেন, এটা এমন একটি গান যা কোনো দেশের চলতি ও সাধু ভাষায়, সব আঞ্চলিক ভাষায়, নৃতাত্ত্বিক ভাষায় এবং ইংরেজি ও সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে প্রকাশিত হয়েছে। এমন ঘটনা পৃথিবীতে বিরল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত