Ajker Patrika

‘ঘটনা সত্য’ নিয়ে তারকাদের ক্ষোভ

এম এস রানা, ঢাকা
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২১, ০৮: ৩৫
Thumbnail image

সম্প্রতি বাতাসে উত্তাপ ছড়াচ্ছে সিএমভি প্রযোজিত ও রুবেল হাসান নির্মিত নাটক ‘ঘটনা সত্য’। সিএমভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছিল নাটকটি। নিম্ন আয়ের দুজন মানুষ। পাশাপাশি ফ্ল্যাটে কাজ করে। একজন গাড়িচালক মুকুল (অভিনেতা নিশো), অন্যজন গৃহপরিচারিকা বিলকিছ (অভিনেত্রী মেহজাবীন)। টাকা আর একটু বিলাসিতার লোভে দুজনেই কিছু অন্যায় অপকর্ম করে। ঘটনাক্রমে ভালোবেসে ঘর বাঁধে তারা দুজন। একসময় জানতে পারে তাদের ঘর আলো করে আসছে এক শিশু। কিন্তু সেই শিশু প্রতিবন্ধী বা বিশেষ শিশু।

ঘটনাটা এ পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিল। নিজেদের অপরাধবোধ থেকে এই দম্পতির মনে ভয় জাগতেই পারে যে তাদের অপকর্মের ফল বা শাস্তি এই শিশু। কিন্তু রচয়িতা, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, নির্মাতা কিংবা অভিনেতা—কারও ভাবনাতেই এল না যে ভাবনা বা বোধের কোন জায়গাটা ভুল বা সঠিক। কোন বিষয়টা নিয়ে কথা বলা যায় বা বলা যায় না।

অটিজম নিয়ে সারা বিশ্বে যখন সচেতনতামূলক কাজ হচ্ছে, ঠিক এমনই সময়ে এ ধরনের একটি ভুল বার্তার নাটক মানুষের আবেগকে দুমড়ে–মুচড়ে দিয়েছে। তাই প্রতিটি শিল্পমাধ্যমে কাজ করতে হয় সচেতনভাবে, জেনেবুঝে। কেবল অর্থপ্রাপ্তির আশায় কাজ করলেই হয় না। শিল্পের যেমন দায়বদ্ধতা আছে, আছে শিল্পী ও নির্মাতাদেরও। সেই দায়বদ্ধতার জায়গাটা বুঝতে না পারাটা অজ্ঞতা। অজ্ঞতা নিয়ে শিল্প হয় না। তাই এ ধরনের নির্মাণ নিয়ে ক্ষোভে উত্তাল মিডিয়া। অভিনেতা থেকে শুরু করে নির্মাতা, প্রযোজকেরাও জানাচ্ছেন ক্ষোভ।

 অভিনেতা ও নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমার নাতিও স্পেশ্যাল চাইল্ড। এ ধরনের একটা বিষয় নিয়ে তারা যে বার্তা মানুষকে দিয়েছে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।’ 
অভিনেতা রওনক হাসান বলেন, বলেন, ‘টাকা উপার্জনের অনেক উপায় আছে। অভিনয় দিয়ে, শিল্প দিয়ে টাকা উপার্জন করতে হলে অবশ্যই সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকতে হবে।’

 ‘ঘটনা সত্য’ নাটকের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক মাধ্যমেও। তারিক আনাম খান ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন ব্যক্তিগত ক্ষোভের কথা। তিনি লিখেছেন, ‘কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করব? অনেকেই আমার ছাত্র, স্নেহভাজন। …তাদের শিল্পের ও শিল্পীর দায়বদ্ধতা বোঝাতে পারিনি—এই ব্যর্থতা আমার, আমাদের।  ‘অটিজম’ সম্পর্কে যে কথা একটি নাটকে বলা হলো, সেটি শিক্ষা ও জ্ঞানের অভাব নিঃসন্দেহে। শুধু এই নাটকে নয়, অনেক নাটকেই মেয়েদের হেয় করা, অপ্রয়োজনীয় ভায়োলেন্স, রুচিহীন উপস্থাপনা আমাদের অনেক অর্জনকেই খাটো করে দিচ্ছে।’

 অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা বলেছেন, ‘ঘটনা সত্য’র মতো একটি নাটক বানানোর সাহস তারা কোথায় পেলেন? আমি বিশ্বাস করি না যে এই নাটকের সংশ্লিষ্টরা বিশেষ করে অভিনেতা অটিজমের মতো একটি সংবেদনশীল বিষয় সম্পর্কে এতটা অসচেতন।’ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য ‘তথাকথিত তারকা অভিনেতাদের’ দায়ী করে তিনি লিখেছেন, ‘যদিও গুণগত মান অনেক আগে থেকেই অবহেলিত। এবার তাঁরা সীমা লঙ্ঘন করে গেছেন। … অটিজম নিয়ে সারা বিশ্বে যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে, সে সম্পর্কে তাঁরা কি কিছুই জানেন না? সম্ভবত জানেন, কিন্তু পরোয়া করেন না।’

 মেহের আফরোজ শাওন লিখেছেন, ‘আমি মিডিয়ার একজন অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে ‘ঘটনা সত্য’ নামক অসংবেদনশীল নাটকটির জন্য সব বিশেষ শিশুর কাছে এবং তাদের মা–বাবার কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি। শিল্পী হওয়া তো দূরের কথা, ভিউ আর ফলোয়ারের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা বোধ হয় মানুষও হতে পারলাম না।’’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাতা-অভিনেতাদের প্রকৃত শিক্ষার অভাব, অজ্ঞতা, অর্থলোভ আর অসচেতনতাই এ ধরনের ভুল নির্মাণের জন্য দায়ী। তাই নির্মাণের আগে প্রতিটি নাটক–সিনেমার বিষয়বস্তু নিয়ে সচেতন হতে হবে। কেবল নির্মাণ করলেই হবে না, যেকোনো মাধ্যমে প্রচারের আগে ন্যূনতম প্রিভিউর ব্যবস্থা থাকা উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত