Ajker Patrika

অবশেষে ঢাবিতে ক্লাস শুরু, শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বস্তি, কয়েকটি বিভাগে উৎকণ্ঠা

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮: ৩৮
Thumbnail image

সাড়ে তিন মাস পর আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ক্লাস–পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে না থাকা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, শিক্ষকদের বয়কট করার কারণে বেশ কয়েকটি বিভাগে ক্লাস হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আইবিএ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ ক্লাস শুরু হয়নি। তবে যাঁদের ক্লাস শুরু হয়েছে, তাঁরা উৎফুল্ল এবং একই সঙ্গে উৎকণ্ঠাও প্রকাশ করেছেন। অনেকের চোখেমুখে দেখা গেছে স্বস্তি।

আজ ঢাবির স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস ছাড়া অন্য সব বর্ষের ক্লাস আজ শুরু হয়েছে। ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে।

আজ ক্লাস শুরুর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন চত্বরে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এ সময় উপ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রা ওড়ানো হয়। 

ক্লাস শুরুর পর কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শন করেন উপাচার্য। ছবি: জনসংযোগ দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কর্মসূচিতে উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘শিক্ষক–শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা একধরনের মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে। এই ট্রমা নিরসন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ঘাটতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এরপর সকাল সাড়ে ১০টার সময়ে উপাচার্য বিভিন্ন অনুষদের শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

গত ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও ঈদুল আজহার ছুটি ঘোষণা ঢাবি প্রশাসন। ১ জুলাই থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বাধ্যতামূলক পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে এবং পরে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করায় আর চালু হয়নি শ্রেণি কার্যক্রম। কোটা সংস্কারের দাবিতে ৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করেন।

শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখ হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকাশিক্ষকেরা ৪ আগস্ট আন্দোলন প্রত্যাহার করলেও শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমে সরকার পতন আন্দোলনে রূপ নেয়। এর ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। অবশেষে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আজ ক্লাস শুরু হলো।

ক্লাস শুরু হলেও উৎকণ্ঠা কাটেনি শিক্ষার্থীদের। ছাত্রীদের হলে অনেকেই সিট পাননি। অনেক বিভাগে শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনও চলছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাইশা মালিহা আজকের পত্রিকা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে সিটপ্রার্থী অনাবাসিক নারী শিক্ষার্থীরা এখন আবাসনসংকটে ভুগছে। তাদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে ক্লাস শুরু করায় তারা বিপাকে পড়েছে। এ ছাড়া বিভাগগুলোতে নীল দলের শিক্ষকদের অপসারণের আলাপ চলায় সেখানে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। তাই ক্লাস শুরুর আগে ব্যাপারগুলো সমাধান করা উচিত ছিল।’

শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখ হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকাক্লাস শুরু হয়নি এমন একটি বিভাগ হলো বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি। বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিন সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অতি দ্রুত ক্লাস শুরু করা উচিত। তিন মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে। তা ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে অনার্স শেষ করারও একটা বিষয় আছে। যত দ্রুত সম্ভব ক্লাসে ফিরতে চাই। কিছু দাবিদাওয়া আছে। সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করাও দরকার।’

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ফ্যাসিস্ট শাসনের মূলোৎপাটন হওয়ার পর প্রায় তিন মাসের মাথায় আজ ক্লাস শুরু হয়েছে। আমরা যারা অনার্স জীবনের শেষ মুহূর্তে আছি, তাদের জন্য তিন মাস সময়টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের জুলাই মাসের ২ তারিখ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আন্দোলনের কারণে স্থগিত হয়। সেই স্থগিত এখনো বহাল আছে। আজকে যেহেতু একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে; আশা করছি শিগগিরই পরীক্ষায় বসতে পারব। যদি দ্রুত পরীক্ষা হয়ে যায়, আমরা সামনে চাকরির জন্য পড়াশোনা শুরু করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত