Ajker Patrika

মানিকছড়িতে শিক্ষা বিস্তারের স্বপ্ন দেখা তরুণদের অনেকেই এখন দিনমজুর

আবদুল মান্নান, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি)
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২১, ১৩: ৫১
মানিকছড়িতে শিক্ষা বিস্তারের স্বপ্ন দেখা তরুণদের অনেকেই এখন দিনমজুর

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় ২০০২ সালে ‘গিরিকলি’ কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক মরহুম ইব্রাহীম ভূঁইয়া অবসরে গিয়ে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মাতৃছায়া’ কিন্ডারগার্টেন। উপজেলা সদর ও ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয়ে শিক্ষা বিস্তারে এমন অন্তত ১৫টি কিন্ডারগার্টেন, ৪টি নন-এমপিও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে স্বপ্ন দেখতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং শিক্ষা সমাপনী পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও। জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এমন অন্তত ২০০ তরুণ বাইরে চাকরি না নিয়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত হন। সাড়াও পাওয়া যাচ্ছিল বেশ। বাসিন্দারাও তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনার ব্যাপারে বেশ সচেতন হয়ে উঠেছিলেন। ‘গিরিকলি’ কিন্ডারগার্টেনে ২০২০ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৬০০, শিক্ষক-কর্মচারী ৩৫ জন। ‘মাতৃছায়া’ কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হয়েছিল দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারী ১৩ জন।

সবকিছু ঠিকঠাক চলার মাঝেই বাদ সাধল করোনা। ১৬ মাস ধরে স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় পুরো পরিকল্পনাই এখন হুমকির মুখে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসছে না। গিরিকলিতে শুধু অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া হলেও কোনো প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাসও নেওয়া হচ্ছে না। বেতন বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের অনেকেই এখন শ্রমিক, কৃষক ও মোটরযানের শ্রমিক হিসেবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকে সম্মানের দিকে তাকিয়ে কিছুই করতে পারছেন না।

গিরিকলি কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক মো. লুৎফর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি অভাবী সংসারে বেড়ে ওঠা মানুষ। বাবা-মা ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় শিক্ষাজীবন শেষে কর্মসংস্থান পেয়ে পরিকল্পনা করেছি জনপদের শিক্ষা বিস্তারে কাজ করব। তাই চাকরির পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি, অনেক শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিই। আজ আমি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের নিয়ে চিন্তিত!’

গাড়িটানা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ূন কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই করোনায় আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। এখন না পারছি কাজ করতে, না পারছি দুবেলা পেট ভরে খেতে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নন–এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাস্তবতা চিন্তা করলে আমরা এই দুঃসময় থেকে স্বস্তি পেতাম।’

মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামান্না মাহমুদ বলেন, করোনার প্রথম ধাপে কর্মহীন নন–এমপিও প্রায় দেড় শ শিক্ষক-কর্মচারীকে জেলা প্রশাসকের বরাদ্দ থেকে গড়ে ১ হাজার টাকা হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জনপদে কর্মহীন সব পরিবারে খাদ্য ও নগদ সহায়তা বিতরণ চলমান রয়েছে। এবারও আমরা তাঁদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার তুলে দেব। এ ছাড়া কেউ খাদ্যের কষ্ট পেলে উপজেলা প্রশাসনকে বা ৩৩৩ হট লাইনে কল করার অনুরোধ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত