Ajker Patrika

১০ পাতার বেশি পড়া দেখলেই ভয় পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ

আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ২৩: ৫৩
১০ পাতার বেশি পড়া দেখলেই ভয় পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ

দিন দিন পড়ার দক্ষতা হারিয়ে ফেলছে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, এটি বেশ উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে, গত পাঁচ বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো দীর্ঘ লেখা বুঝে পড়ার আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্লেট সাময়িকীতে লেখা এক সম্পাদকীয়তে ইলিনয়ের নর্থ সেন্ট্রাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক অ্যাডাম কৎস্কো বলেন, গত পাঁচ বছরে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা লক্ষ্য করেছেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধৈর্য নিয়ে পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। এই পাঁচ বছরের চার বছরই অবশ্য করোনা মহামারি ও এর পরবর্তী প্রভাবের মধ্য দিয়ে কেটে গেছে। 

অধ্যাপক কৎস্কোর পাঠদানের বেশির ভাগ অংশজুড়ে থাকে মানবিক ও দর্শন বিষয়ে কিছু নির্দেশনা ও লেখাপত্র। তিনি বলেন, ‘আমার শিক্ষকতা জীবনের বেশির ভাগ সময়টাতেই আমি ন্যূনতম প্রত্যাশা নিয়ে ক্লাসে অন্তত ৩০ পৃষ্ঠা পড়তে দিই। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা ১০ পৃষ্ঠার বেশি পড়া দেখলেই ভয় পায়! না বুঝেই কোনোরকম ২০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ার পরই ছেড়ে দেয়।’ 

 ২০২০ ও ২০২১ সালে কোভিড লকডাউনের কারণে পড়ালেখায় বেশ ক্ষতি হয়েছে—তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এ ক্ষতি ধারণার চেয়েও বেশি বলে উল্লেখ করেছেন লেখক ও শিক্ষকেরা। 

কৎস্কো বলেন, ‘মহামারির আগেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধৈর্য নিয়ে পড়ার আগ্রহে ভাটা পড়েছিল। এখন যেসব শিক্ষার্থীর কথা আমি বলছি, তারা লকডাউনে স্কুলের বন্ধের সময় হাইস্কুলে থাকার কথা। তাই তাদের ততদিনে অনলাইনে জ্ঞানার্জন এবং মৌলিক পাঠ দক্ষতা তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা।’ 

শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয়ে মৌলিক ধারণা দিতে এখন তাদের আগের চেয়ে বেশি সময় দিতে হয়। 

তবে মহামারির সময় স্কুল বন্ধের আগেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদেরা। এক দশক ধরে পড়ার জন্য প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে স্মার্টফোন। পাশাপাশি ‘পরীক্ষার জন্য পড়া’ এই শিক্ষণ পদ্ধতি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় জেঁকে বসেছে।

তথাকথিত ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষার নামে বুঝে পড়ার জন্য সহায়ক ধ্বনিবিদ্যাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এখন শুরু হয়েছে ‘ভাইবস–বেজড লিটারেসি’! এটি মূলত কোনো ছবি বা ইলাস্ট্রেশন দেখে সঠিক শব্দ অনুমান করতে শেখার প্রক্রিয়া। এনসিসির সহকারী অধ্যাপক কৎস্কো এবং অন্যরা বলছেন, এখন শিক্ষার্থীদের শব্দকে ভেঙে উচ্চারণ করতে শেখানো হয় না।

কৎস্কো বলেন, ‘স্মার্টফোনের প্রভাব ছাড়াও শিক্ষার্থীদের অপরিচিত শব্দ বুঝতে চাওয়ার অনাগ্রহও তাদের পড়ার দক্ষতা তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করছে।’

এ ছাড়া শিক্ষকেরাও শিক্ষার্থীদের এই অনাগ্রহতে মৌনসম্মতি দেন। তাঁরা শুধু পরীক্ষায় পাস করার জন্য ছোট ছোট রচনা দেন, বড় বিষয়ের একটি সংক্ষিপ্তসার পড়তে দেন; শিক্ষা বা জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে পড়া দেন না। 

অধ্যাপক কৎস্কো বলেন, ‘আমরা অন্তত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বর্ধিত আলোচনা ও যুক্তিতর্ক করার দক্ষতা বিকাশে এভাবে সক্রিয়ভাবে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে পারি। যেকোনো পেশা বা শিক্ষাস্তরেই তাদের এ দক্ষতার প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত