Ajker Patrika

স্নাতকের অর্ধেক চলে গেল পরীক্ষা ছাড়াই

রবিউল আলম, ঢাকা
স্নাতকের অর্ধেক চলে  গেল পরীক্ষা ছাড়াই

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তর হোসেন মোল্লা গত বছরের ১ জানুয়ারি উচ্চশিক্ষায় যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর মাত্র আড়াই মাস। আর বসা হয়নি ক্লাসে। হয়নি কোনো পরীক্ষা। এখনো পড়ে আছেন সেই প্রথম বর্ষে। ২০২০ গড়িয়ে ২০২১ সালের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সময় পার হয়ে গেলেও কোনো সেমিস্টার পরীক্ষা হয়নি।

শিক্ষা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, চার বছরের স্নাতকে ছয় মাস অন্তর সেমিস্টার হওয়ার কথা। সেই হিসাবে অন্তর হোসেনের গত বছরের জুনে প্রথম, ডিসেম্বরে দ্বিতীয় ও চলতি বছরের জুনে তৃতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় পার হয়ে গেলেও তিনি প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে পারেননি।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অন্তর হোসেন বলেন, ‘অনলাইনে গত ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হয়েছে। এরপর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তৃতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়নি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা নিয়মিত পরীক্ষা শেষ করে চতুর্থ সেমিস্টারে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে যে সুখের স্বপ্ন দেখেছি, তা বিষাদে পরিণত হচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ওসামা মোহাম্মদ মইন বলেন, ‘এত দিন চলে গেল। আমরা এখনো প্রথম বর্ষেই পড়ে আছি। দুই সেমিস্টার পরীক্ষা দেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হলে দেখা যাবে, জুনিয়রসহ একই বর্ষে আছি। কে জুনিয়র, কে সিনিয়র বোঝাই মুশকিল হবে।’

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁদের জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হয়েছিল, তাঁরা ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র আড়াই মাস। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে ক্লাসের ঘোষণা দিলেও এতে উপস্থিতি ছিল সামান্য। অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এখনো পরীক্ষা দিতে পারেননি। যদিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৬ শিক্ষার্থীকে শর্ত সাপেক্ষে দ্বিতীয় বর্ষে প্রমোশন দেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের এসব পরীক্ষায় পাস করতে হবে।

হাতে গোনা কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা শুরু করেছে। এর বাইরে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারছেন না। অনলাইন পরীক্ষায় শতভাগ উপস্থিতি সম্ভব নয়, গ্রাম-শহর বৈষম্য বাড়বে ইত্যাদি অজুহাতে এসব বিশ্ববিদ্যালয় এখনো অনলাইনে পরীক্ষা শুরু করেনি। যদিও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা শুরু করেছে, তারা শতভাগ উপস্থিতিতেই পরীক্ষা নিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ বিক্ষিপ্তভাবে অনলাইনে পরীক্ষা নিলেও অধিকাংশ বিভাগ এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

আবার অনলাইনে ঠিকঠাকমতো ক্লাস না হওয়ায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা শিক্ষণ ঘাটতিতে রয়েছেন। শিক্ষাবিদেরা মনে করেন, বিশেষ ক্লাসের পর পরীক্ষা হলে শিক্ষণ ঘাটতি কিছুটা হলেও পোষানো যাবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর তাড়াতাড়ি শিক্ষার্থীদের প্রমোশন ও যেনতেন পাস না দিয়ে রিভিশন ক্লাস করাতে হবে। কমপক্ষে দুই মাস এসব শিক্ষার্থীর রিভিশন ক্লাস দরকার।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব আইনে চলে। আমরা তাদের বলেছি, তারা অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারবে। এমনকি একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরেও পরীক্ষা নিতে পারবে। রিকভারি গাইডলাইনও দিয়েছি। তারা না মানলে আমরা তো আর জোর করতে পারি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনের আগে এসআই-এএসআইদের ব্যক্তিগত তথ্য তালাশে পুলিশ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

ইরানি নকশার ড্রোন হয়ে গেছে রাশিয়ার, ক্ষোভ বাড়ছে তেহরানে

যারা একাত্তরে ফিরতে চায়, তারা চব্বিশ অস্বীকার করে: নাহিদ

ফ্লাইট এক্সপার্ট: গ্রামবাসীর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়েছেন এমডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত