Ajker Patrika

‘কোন আইনে রাষ্ট্রপতি গুচ্ছে থাকার আদেশ দিয়েছেন সেটি স্পষ্ট নয়’

জবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৫: ৩৮
‘কোন আইনে রাষ্ট্রপতি গুচ্ছে থাকার আদেশ দিয়েছেন সেটি স্পষ্ট নয়’

গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কোন আইনে রাষ্ট্রপতি আদেশ দিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

আজ বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ কে এম লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়। এর আগে গত সোমবার শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে অনলাইনে এক জরুরি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ মার্চ ৬৪তম বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল সভায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। তবে উক্ত সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ করতে প্রশাসন কালক্ষেপণ শুরু করে। শিক্ষকবৃন্দের উপর্যুপরি দাবির মুখে ৩০ মার্চ কার্যবিবরণী প্রকাশ করে। গত ৬ এপ্রিল ৬৫তম বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ ইউনিট কমিটি গঠন করা হয় এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিট কমিটি কাজও শুরু করে। 

এতে আরও বলা হয়, জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫’ অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিল ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। কাজেই একাডেমিক কাউন্সিলে পাস হলে তা বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা থাকে না। এই পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আবারও কালক্ষেপণ শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভা ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করিয়ে ৭০০ শিক্ষকের মতামত ও চাওয়াকে অগ্রাহ্য করেন। এ সময় বিভিন্ন মহল রাষ্ট্রপতির আদেশের কথা বললেও আমরা সেটা বিশ্বাস করিনি, কারণ জাতীয় সংসদ কর্তৃক পাস করা বিশ্ববিদ্যালয় আইন রহিতকরণ ছাড়া এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি সম্ভব নয় বলে অনেকেই মনে করেছেন। যা হোক, সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং দিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য অনুরোধ করে।’ 

শিক্ষক সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি সার্কুলার দেওয়ার পথে, তখনই সুকৌশলে আনা হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তি মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমাদের আচার্যের অভিপ্রায় বা আদেশ। এই আদেশ হাতে পাওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তড়িঘড়ি করে ১৭ এপ্রিল ৬৬তম একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভা ডাকে। সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শিক্ষক সমিতিকে একটি সাধারণ সভা করে উক্ত বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের সভা দুই দিন পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এই যুক্তিতে উপাচার্য সেই সময়টুকু দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এই পর্যায়ে সমিতির পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয় এবং বলা হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০০ শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি, কাজেই সাধারণ সভার মতামত না জানিয়ে এতে মত দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশাসন এ কথায় গুরুত্ব দেয়নি। বরং বলেছে, রাষ্ট্রপতির আদেশের ওপর কোনো বিতর্ক থাকা যাবে না, তাহলে এটি অবমাননার শামিল হবে।’

একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়ের আইনি পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করে শিক্ষক সমিতির এক সদস্য বলেন, এই আদেশ ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫’-এর পিতৃ আইনের ওপর কাজ করতে পারে না এবং রাষ্ট্রপতি কোন আইনে এই আদেশ দিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু প্রশাসন সেই বিশ্লেষণেও গুরুত্ব দেয়নি। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘গত ৬৬তম একাডেমিক কাউন্সিলে আমরা বলেছি যে রাতের মধ্যে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা করব এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনে রাতেই উপাচার্যকে জানাব। কিন্তু তিনি সেই অনুরোধ রাখেননি। এত কিছুর পরেও এবং রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি নিয়ে আইনগত প্রশ্ন থাকলেও রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় ও প্রজ্ঞাপনকে সম্মান জানিয়ে আমরা এবারের মতো গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় শর্তসাপেক্ষে অংশগ্রহণে মত দিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত