Ajker Patrika

বন্যা-পরবর্তী সময়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য 

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ০৫
বন্যা-পরবর্তী সময়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য 

বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর বন্যার্ত এলাকাগুলোতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে আসে। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পানি ও কীটপতঙ্গবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। তা ছাড়া বন্যার সময় পশুপাখি ও মানুষের মলমূত্র, ময়লা-আবর্জনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণ বাড়ে। বন্যার পানি নেমে গেলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, ঘর-বাড়ি খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করা এবং খাদ্যভ্যাসে সচেতন কীভাবে হবেন, সেসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক প্রকৌশলী ড. নাদিম খন্দকার। তিনি আর্সেনিক মিটিগেশন, ইউনিসেফের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। প্রায় ৩০ বছরের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সচেতনতামূলক কিছু পরামর্শ নিয়ে লিখেছেন পাঠকবন্ধু মো. খশরু আহসান।

বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাপনা কীভাবে করবেন?
বন্যার পানিতে বন্যার্ত এলাকার টিউবওয়েগুলো সব পানির নিচে তলিয়ে যায়। সম্পূর্ণ এলাকার ময়লা-আবর্জনা, মলমূত্র চারদিকে ছড়িয়ে পরায় টিউবওয়েলের পানিও অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। পানি কমে যাবার পর টিউবওয়েলের পানি কোনোভাবেই সাথে সাথে পান করা যাবেনা। এমনকি নলকূপ, কুয়া এবং অন্যান্য পানির উৎস থেকেও সরাসরি পানি পান করা, গোসল করা, কাপড় ধোঁয়া বা মুখে পানি নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। টিউবওয়েলের পানিকে বিশুদ্ধ করতে হলে প্রথমেই জেনে নিতে হবে টিউবওয়েলের পাইপের গভীরতা কতটুকু। সে অনুযায়ী প্রায় আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা টিউবওয়েলের পানি চেপে বের করে দিতে হবে। বাংলাদেশে অধিকাংশ পানির টিউবওয়েলের ক্ষেত্রে প্রতিটি ৫০ ফুট গভীরতার পাম্পের জন্য ১০ মিনিট সময় পর্যন্ত চেপে পানি বের করে দিতে হবে। অর্থাৎ, ১০০ ফুটের জন্য ২০ মিনিট এবং ১৫০ ফুটের জন্য ৩০ মিনিট চাপতে হবে। কোনোভাবেই বন্যার পানি পান করা যাবে না। খাওয়ার পানি ফুটিয়ে খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মকর্তারা আছেন। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের পরামর্শ এবং এলাকাগুলোতে অবস্থান নেওয়া মেডিকেল ক্যাম্প ও ফিল্ড ওয়ার্কে থাকা অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

ঘর-বাড়ি কীভাবে পরিষ্কার করবেন?
বন্যার পানি কমে এলে ঘর-বাড়ির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে বসবাস করা কোনোভাবেই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি এই সময় পানি ও কাদার সংস্পর্শে মানুষের শরীরে ছত্রাকের আক্রমণে চুলকানি বা চর্মরোগ দেখা দেয়। অতএব ঘর ও বাড়ির আঙিনা ফিনাইল দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ফিনাইলের পরিবর্তে ব্লিচিং পাউডারও ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের মেঝে, ঘরের সব কোনা, বাড়ির আঙিনাও ফিনাইল বা ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে সম্পূর্ণ স্যানিটেশান করতে হবে।

বন্যা-পরবর্তী সময়ে ত্রাণের তালিকায় কী কী থাকা প্রয়োজন?
বন্যার সময় এবং পরবর্তী সময়ের ত্রাণের তালিকার কার্যক্রমে কিছুটা ভিন্নতা আনা প্রয়োজন। বন্যা-পরবর্তী সময়ে ত্রাণের তালিকায় এন্টিসেপটিক সাবান, ব্লিচিং পাউডার, ফিনাইলসহ যেকোনো জীবাণুনাশক ইত্যাদি থাকতে হবে। মশার উপদ্রব কমাতে মশার কয়েল বা স্প্রেও থাকতে পারে তালিকায়। তালিকায় খাবার স্যালাইন থাকাও জরুরি। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ার স্যালাইন পাওয়া না গেলেও পরিবারগুলো যাতে নিজেরাই খাওয়ার স্যালাইন তৈরি করে নিতে পারেন, সেজন্য চিনি কিংবা গুড়, লবণ ও বিশুদ্ধ পানি এই তালিকায় যুক্ত করা উচিত।

খাওয়ার স্যালাইন কীভাবে তৈরি করবেন?
স্বাভাবিক তাপমাত্রার এক লিটার বিশুদ্ধ পানি, সঙ্গে ছয় চা-চামচ চিনি এবং আধা চা-চামচ লবণ মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে খাওয়ার স্যালাইন। মনে রাখতে হবে, ঘরে তৈরি খাওয়ার স্যালাইন ছয় ঘণ্টার মধ্যে পান করতে হবে। ছয় ঘণ্টা অতিক্রম হলে বানানো স্যালাইন ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে বানিয়ে পান করতে হবে। দেহের পানিস্বল্পতা মোকাবিলার জন্য খাওয়ার স্যালাইন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।

বন্যার্ত এলাকায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পরামর্শ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে সম্পূর্ণ স্কুলকে স্যানিটেশন করতে পারে। এত দিন স্কুল-কলেজগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ছিল। সরকারের কার্যক্রমের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরাই স্কুলকে সাজানোর কাজ করলে শিক্ষার্থীরা নিজের কাছে উৎসাহিত বোধ করবে। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয় এলাকাগুলোতে বিভিন্ন সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত