Ajker Patrika

পাচিল টপকে কিশোরীর গোসলের ভিডিও ধারণ, প্রভাবশালীদের চাপে সমঝোতা

তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
পাচিল টপকে কিশোরীর গোসলের ভিডিও ধারণ, প্রভাবশালীদের চাপে সমঝোতা

রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকায় অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীর গোসলের ভিডিও ধারণের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে সমঝোতা করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। প্রভাবশালীদের চাপে ওই ছাত্রীর অভিভাবককে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে সমঝোতায় বাধ্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

গত ২ মে একই বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্র মোবাইল ফোনে প্রতিবেশী ওই ছাত্রীর গোসলের ভিডিও ধারণ করে। বিষয়টি টের পেয়ে ধাওয়া দিয়ে ওই ছাত্রকে আটক করে ছাত্রীর পরিবার।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত রোববার (৮ মে) তালন্দ বাজারের বক্স মার্কেটের একটি হোমিও চিকিৎসকের দোকানে বিষয়টি মীমাংসার জন্য সালিস বসে। সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়াও তালন্দ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারকে সালিশনামায় সই করতে বাধ্য করা হয়। সালিসের নামে অভিযুক্ত ছাত্রের পরিবারের কাছ থেকে টাকাও আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সালিসের সত্যতা স্বীকার করলেও টাকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে বাথরুমে গোসল করছিল। প্রাচীর টপকে মোবাইলে গোসলের ভিডিও ধারণ করে ওই ছাত্র। পালানোর সময় তাকে মোবাইলসহ ধরা হয়। তিনি এর বিচার চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয়রা সালিসে বিষয়টি রফা করেন। সমাজে সবার সঙ্গে সদ্ভাব রেখে বসবাস করতে হবে, তাই এ নিয়ে আর কোনো অভিযোগ করতে চান না তিনি।

সালিসনামা লিখে দিয়েছেন তালন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন। এর সত্যতা স্বীকারও করেছেন তিনি। এই শিক্ষক দাবি করেন, ঘটনার আদ্যোপান্ত তিনি জানেন না। তা সত্ত্বেও সালিশনামা লিখে দিলেন কেন জানতে চাইলে বলেন, এটি একটি সাধারণ সালিসনামা ছিল।

ঘটনা না জেনেই সালিসনামা লেখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেন, ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত দুজনই তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঘটনার পর অভিযুক্ত ছাত্রের বাবা তাঁর কাছে এসেছিলেন। পরে এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবাকে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। এরপরই দুপক্ষ নিজেদের মধ্যে বসে সমঝোতা করে নিয়েছে। 

সমঝোতা বৈঠকে নিজে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করে এই শিক্ষক। তবে প্রায় ওই হোমিও ওষুধের দোকানে তাঁরা ১০-১৫ জন অবসর সময়ে নিয়মিত আড্ডা দেন বলে স্বীকার করেন।

তানোর পৌরসভার মেয়র ইমরুল হক সেই সালিস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে ফোন রিসিভ না করায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পৌর মেয়রের ছোট ভাই রানাও বৈঠকে নিজে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, ঘটনাটি সম্পর্কে তেমন কিছুই তিনি জানেন না। এমনকি ওই সালিসে কে কে উপস্থিত ছিল সে বিষয়েও জানেন না।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তানোর থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ঘটনাটি মীমাংসা যোগ্য নয়। এমন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই আইনের আশ্রয় নিতে পারেন ভুক্তভোগী। তবে এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রী কিংবা তার পরিবার থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত