Ajker Patrika

কুমারখালীতে সুদখোরের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত ব্যবসায়ীরা, বিচারের দাবি

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ২০: ৩১
কুমারখালীতে সুদখোরের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত ব্যবসায়ীরা, বিচারের দাবি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সুদের ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান নয়নের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন ৬ জন ব্যবসায়ী। তাঁর হামলা ও মামলার ভয়ে পরিবার-পরিজন ও ব্যবসা ছেড়ে পথেঘাটে জীবনযাপন করছেন তাঁরা। এই সুদে ব্যবসায়ীর খপ্পর থেকে বাঁচতে এবং বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ব্যবসায়ীরা। 

আজ সোমবার দুপুরে কুমারখালী হলবাজারসংলগ্ন গ্রীণ রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ব্যবসায়ী মো. শরিফুল ইসলাম, মো. শামীম রেজা, মো. হাবিবুর রহমান, মো. সুরুজ আলী, মো. মান্নান শেখ ও মোছাম্মৎ তন্নি খাতুন। 

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে শামীম রেজা বলেন, ‘চিহ্নিত সুদে ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান নয়নের কাছ থেকে ফাঁকা চেকের মাধ্যমে ২ শতাংশ সুদে ধাপে ধাপে প্রায় ১৪ লাখ টাকা গ্রহণ করি। বিপরীতে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা সুদসহ আসল পরিশোধ করি। কিন্তু নয়ন চেক ফেরত না দিয়ে আরও ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দিতে থাকেন। পরে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কুষ্টিয়া বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুইটি মামলা করেন। 

দুর্গাপুর গ্রামের মো. মনসুর আলীর ছেলে সুতার ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চড়া সুদে নয়নের কাছ থেকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ফাঁকা চেকে প্রায় ছয় বছরে ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা গ্রহণ করি। বিপরীতে সুদ-আসলসহ প্রায় ২৮ লাখ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তী সময়ে নয়ন চেক ফেরত না দিয়ে আরও ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তিনি নিয়মিত হুমকি প্রদান করতে থাকেন। একপর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা ও পরিবার ছেড়ে পথেঘাটে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। টাকা না পেয়ে তিনি কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেও করেছেন।’ 
 
বাঁখই মহব্বতপুর গ্রামের শামীম রেজার স্ত্রী তন্নি বলেন, ‘নয়নের অত্যাচারে আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন। নয়ন উপজেলা রোডে অবস্থিত দোকানে প্রবেশ করে আমাকে মারধর করেন। পরে জোরপূর্বক দোকানের ড্রয়ারে থাকা ব্যাংকের স্বাক্ষরিত ও অস্বাক্ষরিত চেক বই ছিনিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে কোর্টে আমার নামে ২০ লাখ টাকার একটি মামলা করেন।’ 

সংবাদ সম্মেলনে দুর্গাপুরের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নয়নের কাছ থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে এ যাবৎকালে কয়েকটি ধাপে মোট ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তী সময়ে তাঁর কাছে প্রদানকৃত ফাঁকা চেকটি ফেরত চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ ছাড়াও নয়ন বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদান করতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে আরও ১৬ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন তিনি। 

উপজেলার কুন্ডুপাড়ার বাসিন্দা সুরুজ আলী বলেন, একটি ফাঁকা চেক দিয়ে নয়নের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা গ্রহণ করি। এ যাবৎকালে বিভিন্ন সময় মোট ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। পরবর্তীতে নয়নের কাছে থাকা চেকটি ফেরত চাইলে তিনি আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। উক্ত টাকা না দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান এবং প্রতারণা করে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। 

উপজেলার বাঁখই গ্রামের মো. মান্নান শেখ লিখিত বক্তব্যে বলেন, নয়নের কাছ থেকে এক লাখ টাকা গ্রহণ করি। বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে তাঁকে ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। পরে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা না দেওয়ায় বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছেন তিনি। 
 
লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘নয়ন একজন চিহ্নিত বিএনপির কর্মী ও সন্ত্রাসী। তাঁর নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এই সুদে ব্যবসায়ীর ভয়ে আমরা ব্যবসা, পরিবার ও পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। পথেঘাটে জীবনযাপন করছি। সুদখোরের হাত থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ 

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সুদে ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান নয়ন ও তাঁর বাবা মাহমুদুর রহমান মানুর মোবাইলে বারবার কল দেওয়া হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, আসাদুজ্জামান নয়নের নামে সুদে টাকা ধার দেওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত