Ajker Patrika

স্বামীর সঙ্গে পরকীয়া সন্দেহে গৃহকর্মীকে হত্যা করেন গৃহকর্ত্রী

শেকৃবি (ঢাকা) প্রতিনিধি
স্বামীর সঙ্গে পরকীয়া সন্দেহে গৃহকর্মীকে হত্যা করেন গৃহকর্ত্রী

দেড় বছর আগে জীবিকার সন্ধানে স্বামীসহ দিনাজপুর থেকে ঢাকায় আসেন পারভীন ওরফে ফেন্সি আরা। স্বামী মোমিনুল রিকশা চালান। এতে সংসার চলতো না। তাই ফেন্সি আরা গুলশানের নিকেতনে একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেন। ওই বাসায় কাজ নেওয়ার পর থেকে মোমিনুল তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতেন না। 

এদিকে গৃহকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক সন্দেহে ফেন্সির সঙ্গে প্রায়ই গৃহকর্ত্রীর ঝগড়া হতো। গত বুধবার (১ ডিসেম্বর) ঝগড়ার একপর্যায়ে গৃহকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেন গৃহকর্ত্রী। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গত শুক্রবার গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

গ্রেপ্তার গৃহকর্তার নাম সৈয়দ জসীমুল হাসান ও গৃহকর্ত্রী সৈয়দা সামিনা হাসান। 

এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, একটি লাঠি ও বিছানার চাদর ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করে পিবিআই। আজ রোববার পিবিআই ঢাকা মহানগর উত্তরের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এসব তথ্য জানান। 

জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর তুরাগ দিয়াবাড়ীর ঝাউবন এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে তুরাগ থানা-পুলিশ। এই সংবাদের ভিত্তিতে পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশনায় ঢাকা মহানগরের (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম পুলিশ পরিদর্শক (বি) মোহাম্মাদ তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মরদেহ শনাক্তের জন্য একটি জরুরি টিম পাঠান। পিবিআই তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অজ্ঞাতনামা নারীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করে। 

জানা যায়, নিহতের নাম পারভীন ওরফে ফেন্সি আরা। তিনি গুলশান নিকেতনের ৬ নং সড়কের ১৫ নং বাড়ির এ-১ /ফ্ল্যাটে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি দিনাজপুর চিরিরবন্দর আলোকডিহি সরকার পাড়া। বাবার নাম রমজান আলী। মরদেহ শনাক্তের পর পিবিআইয়ের তদন্ত দল গ্রামের বাড়িতে স্বামী মোমিনুলসহ অন্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত হয়। 

এদিকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গৃহকর্তা সৈয়দ জসীমুল হাসান জানান, গত ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে অবৈধ সম্পর্ক সন্দেহে ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে তাঁর স্ত্রী সৈয়দা সামিনা হাসান ফেন্সি আরাকে লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করেন। এতে জ্ঞান হারান ফেন্সি, বাঁচাতে গিয়ে বুকে চাপ দিলে বুকের হাড় ভেঙে যায় ও মৃত্যু হয়। এরপর স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে মরদেহ গোপনের উদ্দেশে ড্রাইভার রমজান আলীর (৪১) সহায়তায় প্রাইভেটকারে করে তুরাগ দিয়াবাড়ী এলাকায় ঝাউবনে ফেলে আসে। 

ঘটনা তদন্তকালে আরও জানা যায়, ফেন্সি ওই বাসায় কাজ নেওয়ার পর থেকে তাঁর স্বামী মোমিনুল দেখা সাক্ষাৎ করতে পারতেন না। এতে তিনি গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর তিনি ওই বাসায় গিয়ে একদিন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসেন। এরপর গত অক্টোবরে তিনি গ্রামের বাড়ি চলে যান। 

জিজ্ঞাসাবাদে মোমিনুল আরও জানান, ওই বাসায় তাঁর স্ত্রী কাজ নেওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা জসীমুল হাসান প্রতি মাসে তাঁর মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা করে পাঠাতেন। যদিও মাসে ৭ হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। 

স্ত্রী ফেন্সি নিহতের ঘটনায় স্বামী মোমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার তুরাগ থানায় হত্যা মামলা করেছেন। 

মামলাটি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পিবিআই ঢাকা মহানগর (উত্তর) তদন্তভার গ্রহণ করে পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে। পিবিআইয়ের চেষ্টায় ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা তরুণীর মরদেহ শনাক্ত ও মূল আসামি গ্রেপ্তার এবং আলামত উদ্ধার সম্ভব হয়। আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণে আজ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত