Ajker Patrika

রাজশাহীতে তরিক বাহিনীতে তটস্থ নেতা-জনপ্রতিনিধিরাও

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০: ৪০
রাজশাহীতে তরিক বাহিনীতে তটস্থ নেতা-জনপ্রতিনিধিরাও

জনপ্রতিনিধিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া, স্থানীয় নেতাদের তুলে এনে কোপানো– একের পর এক এমন ঘটনা ঘটিয়ে আবারও রাজশাহীতে আলোচনায় এসেছেন সন্ত্রাসী তরিকুল ইসলাম (তরিক)। অভিযোগ রয়েছে, এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছেন তিনি। ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে ভিড়ে যাওয়া তরিক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। নিয়মিত মাদক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাগালের বাইরে রয়েছেন তিনি।

তরিকুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহী শহরের বোয়ালিয়া থানার বালিয়াপুকুর এলাকায়। একসময় ছাত্রদল কর্মী ছিলেন। ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হলে তাঁর মুক্তির দাবিতে ছাত্রদলের উদ্যোগে পোস্টারও সাঁটানো হয়। পরে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে ছাত্রলীগে ভিড়ে যান। এরপর নগর ছাত্রলীগের কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদকের পদও পান। তবে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গত ১৯ আগস্ট তরিকুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। এরপরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থামেনি। প্রায়ই সামাজিক মাধ্যমে তরিক বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্রের মহড়ার ছবি ও ভিডিও দেখা যায়। 

তরিকের উত্থান যেভাবে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সান্ধ্য কোর্সবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। সেদিন ছাত্রলীগের ভাড়াটে হিসেবে হামলায় অংশ নিয়ে গুলি চালান তরিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। গুলিবিদ্ধ হন অনেকেই। এরপরই ২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর মহিষবাথান থেকে পিস্তল, ৬টি গুলি, দুটি ম্যাগজিনসহ তিনি গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পেয়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আবদুল ওয়াহেদ খান টিটোর অনুসারী হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, টিটোর সুপারিশেই তরিক নগর ছাত্রলীগের পদ পান। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে টিটো বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি। যে কেউ এসে ছবি তোলে। তরিক ছাত্রলীগ করত বলেই ছবি তুলেছে।’

এ প্রসঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘তরিক উচ্ছৃঙ্খল এটা ঠিক। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী মহানগরীতে ছাত্রদল ও শিবিরকে প্রতিরোধে তরিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাই রাজনৈতিক চাপের কারণেই তরিককে পদ দেওয়া হয়।’

স্থানীয় লোকজন বলছে, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় একসময় নিজের বাহিনী গড়ে তোলেন তরিক। তরিক এবং তাঁর ভাই তহিদুল ইসলাম (আদর) কিশোর বয়স থেকেই মাদকাসক্ত। শৈশব থেকেই ছিনতাই ও ছিঁচকে চুরিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকা, ভদ্রা মোড়, তালাইমারি মোড়, মুন্নাফের মোড়, বালিয়াপুকুরসহ আশপাশের এলাকার ছিনতাইকারীদের নিয়ে বাহিনী গড়ে তোলেন তরিক ও আদর।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, এই বাহিনীতে আছেন সন্ত্রাসী লালন, সনেট শেখ, ফয়সাল, আরিফুল ইসলাম আরিফ, উজ্জ্বল, রুবেল, ফাহিম, শাকিল, মনির, ইমন, বিপ্লব, সজল, পলাশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক তরুণ। তরিক বাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সনেট। এরপর পর্যায়ক্রমে আদর, আরিফ ও ফয়সাল এ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।

গত কয়েক বছরে তরিকের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা হয়েছে। তরিক এবং তাঁর বাহিনীর সদস্যরা আগ্নেয়াস্ত্রসহ বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সনেট শেখের বিরুদ্ধে মামলা আছে ১১টি। ফয়সাল ৯ মামলার আসামি। তরিকের ভাই আদরের বিরুদ্ধে ৫টি এবং আরিফের বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে। বাহিনীর অন্যদের বিরুদ্ধেও অন্তত একটি মামলা রয়েছে।

তরিক এবং তাঁর বাহিনীর সদস্যদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, তরিক এবং তাঁর বাহিনী সম্পর্কে পুলিশের কাছে সব তথ্য রয়েছে। তাঁরা তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তরিক এবং তাঁর বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাও রয়েছে। তাঁরা আত্মগোপনে থাকায় গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। 

কথায় কথায় গুলি, মারধর
গত ২৩ নভেম্বর রাতে নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে একটি সালিস বৈঠক চলছিল। সেখানে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে যান তরিক। সালিসের সমঝোতা নিজেদের পক্ষে না আসায় কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরকে লক্ষ্য করে গুলি করেন তরিক। তবে গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আওয়ামী লীগ কর্মী একরামুল হকের (গুড্ডু) পায়ে লাগে। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় একরামুল হকের ছোট ভাই আকতারুল ইসলাম বোয়ালিয়া থানায় তরিক ও তাঁর বাহিনীর ১৭ জন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত চারজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে তরিক এবং অন্যরা পলাতক।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তরিক বাহিনী মহানগর যুবলীগের জনশক্তি ও কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মানিকের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তরিক এবং তাঁর সহযোগী শাকিল রিভলবার বের করে কয়েকটি গুলি ছোড়েন। তরিকের অন্য দুই সহযোগী আশিক এবং সনেট যুবলীগ নেতা মানিকের পেটে ছুরিকাঘাত করেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মহানগর যুবলীগের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের (পশ্চিম) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সুজনের ওপর হামলা চালায় তরিক বাহিনী। সুজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। সুজন বলেন, ‘আমি হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসাধীন ছিলাম। কোনোরকমে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি।’

তরিক বাহিনীর এমন বেশ কিছু হামলার ঘটনা পুলিশের নথিতেও রয়েছে। এসব ঘটনায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। আবার ছাড়া পেয়ে শুরু করেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

সর্বশেষ হামলার শিকার কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তরিক আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। শতাধিক মানুষের সামনে তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র এবং দেশি ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এরা এলাকায় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাঁদের কারণে এলাকায় শান্তি নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত