Ajker Patrika

আগে কিনে রাখার ছুতোয় খুচরায় পেঁয়াজের দাম বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০: ৫০
আগে কিনে রাখার ছুতোয় খুচরায় পেঁয়াজের দাম বেশি

রাজধানীর কৃষিপণ্যের বড় আড়ত শ্যামবাজারে গতকাল শনিবার প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫-৯০ টাকায়। সেই পেঁয়াজের দাম রাজধানীর খুচরা বাজারে ১২০-১৩০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের ফারাক কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ টাকা। দেশের বিভিন্ন মোকাম, আড়ত ও পাইকারি বাজারে দুই দিন ধরে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা বাজারে উল্টো বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতারা নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। বেশির ভাগ বিক্রেতার দাবি, তাঁদের পেঁয়াজ আগের কেনা; তাই কম দামে বেচতে পারছেন না।

গতকাল বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মেসার্স মাহিন স্টোরের সাইনবোর্ডে লেখা থাকতে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ক্রয়মূল্য ১২২ টাকা, বিক্রয়মূল্য ১৩০ টাকা। ভারতের পেঁয়াজ ক্রয়মূল্য ১১০ টাকা, বিক্রয় মূল্য ১২০ টাকা। পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫-৯০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় ১২০ টাকা রাখার কারণ জানতে চাইলে ওই স্টোরের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার আগের কেনা। বর্তমান দামের পেঁয়াজ আমার কাছে নেই।’

পাশের আল আমিন স্টোরের ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, ‘পাইকারি বাজারের দাম কমছে কি না, এখনো জানি না। কম দামের পেঁয়াজ এখনো আমার দোকানে আনিনি।’

পশ্চিম রামপুরা এলাকার রাস্তার পাশে ভ্যানগাড়িতে পেঁয়াজ, আলু, রসুন বিক্রি করেন শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘শ্যামবাজার থেকে প্রতি কেজি বিদেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় কিনে এনেছি। এক বস্তা পেঁয়াজে ২-৩ কেজি পচা থাকে। কেজিপ্রতি ২০ টাকা মুনাফা ধরে বিক্রি করছি। পরিবহন খরচ আর পচা পেঁয়াজের দাম বাদ দিয়ে কেজিপ্রতি ১০ টাকার বেশি মুনাফা থাকছে না।’

এক পুলিশ কর্মকর্তা গতকাল আজিমপুর ছাপরা মসজিদের সামনে মামুনের দোকান থেকে ১৪০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনছিলেন। তিনি বলেন, তিন দিন আগেও পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা ছিল। দুই সপ্তাহ আগে তিনি ৮৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছিলেন। হঠাৎ করেই দাম বাড়ানো হয়েছে।

বিক্রেতা মামুন বলেন, ‘আমি শ্যামবাজার থেকে পেঁয়াজ কিনি না। কারওয়ান বাজার থেকে ১৩০ টাকা দরে আনছি। আমার পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে সামান্য লাভ ধরে ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি।’ ওই সময় মামুন একটি রসিদও বের করে দেখান। 
সম্প্রতি পেঁয়াজ, আলুসহ বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে দামের রসিদের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মানি রসিদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সময়ই ফেক (জাল) মানি রসিদ তৈরি করা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে।’

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মথুয়াপুর গ্রামের কৃষক মামুনুর রহমান বলেন, তিন-চার দিন ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ায় তাঁদের ওখানে দাম কমতে শুরু করেছে।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আমদানিকারক হাফিজুর রহমান বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ বাড়ায় তাঁদের বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক কমেছে। তাঁরা বিক্রি করছেন ৭৫-৯০ টাকা দরে।

মোকাম ও আড়তে দাম কমলে খুচরা বাজারেও কমা উচিত বলে মনে করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান জোরদার করা উচিত।

তবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, তাঁদের অভিযান অব্যাহত আছে। লোকবলের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিটি বাজারে অভিযান চালানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত দামে কোথাও পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। উল্টো দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত