টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
পুঁজিবাজারে অনিয়ম, তদবির ও অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ওপর নজরদারি জোরদারের সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স। এই লক্ষ্যে তারা একটি শক্তিশালী ‘ওভারসাইট বডি’ বা নজরদারি সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যা আইনত স্বীকৃত ও কার্যকর একটি পরিদর্শনকাঠামো হবে। সম্প্রতি বিএসইসিকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ওভারসাইট বডির সদস্য হবেন সাতজন। এতে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআরের চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং বাজারসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। কমিশনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাই এর মূল লক্ষ্য।
এ বিষয়ে টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘একটা ওভারসাইট বডি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। বিএসইসি কোনো কিছুর ব্যত্যয় ঘটালে সেই বডি এর বিপরীতে করণীয় সুপারিশ করবে। সুশাসন বা ব্যালেন্স রাখার জন্য এটি করা হয়েছে। বিগত সময়ে দেখা গেছে, বিএসইসির যে কাজ, সেগুলো করা হয়নি। আগে এ রকম অনেক কিছু ঘটেছে। আমাদের সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো, আগের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু যাতে না ঘটে। বিএসইসি তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে এই ওভারসাইট বডির কিছু করার থাকবে না।’
তদবিরে ক্ষতিগ্রস্ত পুঁজিবাজার
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতীতে একতরফা ও তদবিরপ্রসূত সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়েছে। ২০১৮ সালে মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ একতরফা ১০ বছর বাড়ানোর উদাহরণ তুলে ধরা হয়, যেখানে ইউনিট হোল্ডারদের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে।
বিএসইসি নিজের ক্ষমতা ঠিকভাবে প্রয়োগ করলে কোনো অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। একটা বডিকে নজরদারির জন্য আরেকটা বডি গঠনের কোনো যুক্তি নেই। ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম,সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা
অভিযোগ রয়েছে, কয়েকজন অসাধু ফান্ড ম্যানেজারের তদবিরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাতে তাঁরা দীর্ঘ সময় ব্যবস্থাপনা ফি নিতে পারেন; অথচ অধিকাংশ ফান্ড বিনিয়োগকারীদের কাঙ্ক্ষিত মুনাফা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে মিউচুয়াল ফান্ড এবং পরিচালকদের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো খাতের ওপর।
ফ্লোর প্রাইস আরোপের ঘটনাও আলোচনায় এসেছে। টাস্কফোর্স বলেছে, এই সিদ্ধান্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের বাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে।
আইপিও অনুমোদনে বিতর্ক
আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, যেমন ডিএসইর আপত্তি উপেক্ষা করে রিং শাইন টেক্সটাইলের আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে মালিকপক্ষ অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে যায় এবং বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারান।
নিয়োগে স্বচ্ছতা ও যোগ্য নেতৃত্ব
বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনার তাগিদ দিয়েছে টাস্কফোর্স। তারা প্রস্তাব করেছে, নিয়োগের জন্য ‘সার্চ কমিটি’ থাকবে ওভারসাইট বডির অধীনে, যেখানে দক্ষতা, সততা ও বাজার সম্পর্কে জ্ঞান থাকাকে প্রধান যোগ্যতা বিবেচনা করা হবে।
আগেও হয়েছিল, কিন্তু ব্যর্থ
২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর বিএসইসি একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছিল, যা ২০১৪ সালে মাত্র একবার বৈঠক করে আর কার্যকর থাকেনি। কমিটিতে অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ড. জায়েদী সাত্তার, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপগভর্নর, এফবিসিসিআই সভাপতি এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সদস্য ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে টাস্কফোর্স এবার আইনি ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো স্থায়ী ও প্রভাবশালী কমিটির পক্ষে মত দিয়েছে।
নীতিনির্ধারণে বিএসইসি, পরিচালনায় স্টক এক্সচেঞ্জ
টাস্কফোর্সের আরেকটি সুপারিশ হলো, বিএসইসি যেন নীতিনির্ধারণেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর দৈনন্দিন পরিচালনাসহ বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হোক স্টক এক্সচেঞ্জকে, যাতে স্বাভাবিক গতি বজায় থাকে এবং রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত প্রভাব কমে।
টাস্কফোর্সের সুপারিশের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এসব বডি গঠনের পক্ষে আমি নই। বিএসইসি নিজের ক্ষমতা ঠিকভাবে প্রয়োগ করলে কোনো অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। একটা বডিকে নজরদারির জন্য আরেকটা বডি গঠনের কোনো যুক্তি নেই। বিএসইসিতে যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সঠিক আইন প্রয়োগ করলে পুঁজিবাজারে কোনো অনিয়ম হওয়ার কথা নয়।’
আরও খবর পড়ুন:
পুঁজিবাজারে অনিয়ম, তদবির ও অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ওপর নজরদারি জোরদারের সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স। এই লক্ষ্যে তারা একটি শক্তিশালী ‘ওভারসাইট বডি’ বা নজরদারি সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যা আইনত স্বীকৃত ও কার্যকর একটি পরিদর্শনকাঠামো হবে। সম্প্রতি বিএসইসিকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ওভারসাইট বডির সদস্য হবেন সাতজন। এতে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআরের চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং বাজারসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। কমিশনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাই এর মূল লক্ষ্য।
এ বিষয়ে টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘একটা ওভারসাইট বডি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। বিএসইসি কোনো কিছুর ব্যত্যয় ঘটালে সেই বডি এর বিপরীতে করণীয় সুপারিশ করবে। সুশাসন বা ব্যালেন্স রাখার জন্য এটি করা হয়েছে। বিগত সময়ে দেখা গেছে, বিএসইসির যে কাজ, সেগুলো করা হয়নি। আগে এ রকম অনেক কিছু ঘটেছে। আমাদের সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো, আগের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু যাতে না ঘটে। বিএসইসি তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে এই ওভারসাইট বডির কিছু করার থাকবে না।’
তদবিরে ক্ষতিগ্রস্ত পুঁজিবাজার
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতীতে একতরফা ও তদবিরপ্রসূত সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়েছে। ২০১৮ সালে মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ একতরফা ১০ বছর বাড়ানোর উদাহরণ তুলে ধরা হয়, যেখানে ইউনিট হোল্ডারদের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে।
বিএসইসি নিজের ক্ষমতা ঠিকভাবে প্রয়োগ করলে কোনো অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। একটা বডিকে নজরদারির জন্য আরেকটা বডি গঠনের কোনো যুক্তি নেই। ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম,সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা
অভিযোগ রয়েছে, কয়েকজন অসাধু ফান্ড ম্যানেজারের তদবিরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাতে তাঁরা দীর্ঘ সময় ব্যবস্থাপনা ফি নিতে পারেন; অথচ অধিকাংশ ফান্ড বিনিয়োগকারীদের কাঙ্ক্ষিত মুনাফা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে মিউচুয়াল ফান্ড এবং পরিচালকদের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো খাতের ওপর।
ফ্লোর প্রাইস আরোপের ঘটনাও আলোচনায় এসেছে। টাস্কফোর্স বলেছে, এই সিদ্ধান্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের বাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে।
আইপিও অনুমোদনে বিতর্ক
আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, যেমন ডিএসইর আপত্তি উপেক্ষা করে রিং শাইন টেক্সটাইলের আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে মালিকপক্ষ অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে যায় এবং বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারান।
নিয়োগে স্বচ্ছতা ও যোগ্য নেতৃত্ব
বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনার তাগিদ দিয়েছে টাস্কফোর্স। তারা প্রস্তাব করেছে, নিয়োগের জন্য ‘সার্চ কমিটি’ থাকবে ওভারসাইট বডির অধীনে, যেখানে দক্ষতা, সততা ও বাজার সম্পর্কে জ্ঞান থাকাকে প্রধান যোগ্যতা বিবেচনা করা হবে।
আগেও হয়েছিল, কিন্তু ব্যর্থ
২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর বিএসইসি একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছিল, যা ২০১৪ সালে মাত্র একবার বৈঠক করে আর কার্যকর থাকেনি। কমিটিতে অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ড. জায়েদী সাত্তার, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপগভর্নর, এফবিসিসিআই সভাপতি এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সদস্য ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে টাস্কফোর্স এবার আইনি ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো স্থায়ী ও প্রভাবশালী কমিটির পক্ষে মত দিয়েছে।
নীতিনির্ধারণে বিএসইসি, পরিচালনায় স্টক এক্সচেঞ্জ
টাস্কফোর্সের আরেকটি সুপারিশ হলো, বিএসইসি যেন নীতিনির্ধারণেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর দৈনন্দিন পরিচালনাসহ বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হোক স্টক এক্সচেঞ্জকে, যাতে স্বাভাবিক গতি বজায় থাকে এবং রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত প্রভাব কমে।
টাস্কফোর্সের সুপারিশের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এসব বডি গঠনের পক্ষে আমি নই। বিএসইসি নিজের ক্ষমতা ঠিকভাবে প্রয়োগ করলে কোনো অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। একটা বডিকে নজরদারির জন্য আরেকটা বডি গঠনের কোনো যুক্তি নেই। বিএসইসিতে যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সঠিক আইন প্রয়োগ করলে পুঁজিবাজারে কোনো অনিয়ম হওয়ার কথা নয়।’
আরও খবর পড়ুন:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি সত্ত্বেও ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে। ভারতের দুটি সরকারি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটিই জানিয়েছেন। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে সূত্রগুলো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
১ ঘণ্টা আগেগাড়ি ও প্রযুক্তিপণ্য দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দক্ষিণ কোরিয়ার বড় রপ্তানি খাত হিসেবে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সৌন্দর্য প্রসাধনী পণ্য, বিশেষ করে—স্কিনকেয়ার ও কসমেটিকস মার্কিন গ্রাহকদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
১ ঘণ্টা আগেব্যক্তি করদাতাদের (Individual Taxpayers) জন্য আগামীকাল সোমবার থেকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে চার ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ ২২ বছর পর রাজশাহীতে আবারও বেজেছে কারখানার সাইরেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ‘রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস্’ এখন প্রাণ-আরএফএলের হাতে হয়ে উঠছে কর্মসংস্থানের নতুন বাতিঘর। গতকাল শনিবার বিকেলে ‘বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস্’ পরিদর্শনে এসে আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন নৌপরিবহন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা...
৯ ঘণ্টা আগে