Ajker Patrika

শিল্পকারখানা: ঋণে উচ্চ সুদহারের আঘাত শিল্পে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
শিল্পকারখানা: ঋণে উচ্চ সুদহারের আঘাত শিল্পে

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদহার বাড়িয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত জুলাইয়ে ৯ শতাংশের সীমা তুলে দিয়ে স্মার্ট (৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় রেট) পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতি মাসেই বাড়ছে ঋণের সুদহার। এতে কমতে শুরু করেছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি, যার প্রভাব পড়ছে শিল্পে। শিল্পমালিকেরা বলছেন, উচ্চ সুদহারের কারণে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। এতে এই খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পূবালী ব্যাংক থেকে গত বছরের জুলাই মাসে সাড়ে ৯ শতাংশ হারে ঋণ নেন উদ্যোক্তা আফিয়া বেগম। সেই থেকে প্রতি মাসে বাড়ছে সুদের হার। বর্তমানে তিনি ১৪ শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছেন। এভাবে বাড়তে থাকলে ঋণের বোঝা একটা পর্যায়ে অসহনীয় হয়ে পড়বে বলে শঙ্কায় আছেন তিনি। উদ্বিগ্ন এই ব্যবসায়ী বলেন, সুদের হার বৃদ্ধির তো একটা শেষ থাকা দরকার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে ব্যাংকগুলো স্মার্ট রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ আদায়ের সুযোগ পায়। গত জুলাইয়ে স্মার্ট সুদহার ছিল ৭.১০ শতাংশ। আর এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.৫৫ শতাংশ। স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে আরও সাড়ে ৩ শতাংশ যোগ করলে সুদের হার দাঁড়ায় ১৩.৫৫ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুদের হার দাঁড়াবে ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এভাবে সুদের হার বাড়তে থাকলে তা শিল্পের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমালিকেরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ডলার, গ্যাস, বিদ্যুতের সংকট আগে থেকেই ছিল। ফলে নতুন বিনিয়োগ হয়নি। এখন সুদের হার বৃদ্ধি খড়্গ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চললে বিনিয়োগ হবে না। বরং যেসব বিনিয়োগ মাঠে রয়েছে, সেগুলোর অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। উচ্চ সুদের কারণে বিনিয়োগ কমেছে। আর বিনিয়োগ কমায় উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে পড়ছে।’

সুদহার বৃদ্ধির পর থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ব্যাংকাররাও। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে অত্যন্ত উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে শিল্প উৎপাদন কমবে। ফলে অনাদায়ি ঋণ ও ফোর্স লোন বৃদ্ধি পাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ, আর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ।

পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক শামস মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, জ্বালানি ও ডলার-সংকটের সঙ্গে নতুন সংকট হলো সুদর হার টানা বৃদ্ধি। এতে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমদানি ব্যয় কমেছে ১৩ বিলিয়ন ডলার। অথচ রপ্তানি আয় বেড়েছে। আমদানি কমলে তো উৎপাদন কমবে। একই সঙ্গে হ্রাস পাবে কর্মসংস্থান। গত বছর পোশাক খাতে ৪০ হাজার শ্রমিক কর্ম হারান। এসব দিক বিবেচনায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত