Ajker Patrika

নিম্ন আয়ের মানুষ কিনছেনও কম, খাচ্ছেনও কম

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২২, ১৪: ২৬
নিম্ন আয়ের মানুষ কিনছেনও কম, খাচ্ছেনও কম

বাজারে গিয়ে নজর পড়ল এক সবজি ক্রেতার দিকে। তিনি কিনলেন দুটি বেগুন, একটি বড় আকারের আলু ও কিছু ধনেপাতা। দোকানদার তাঁকে জানালেন তরকারিগুলোর দাম হয়েছে ২৮ টাকা। তিনি (ক্রেতা) বললেন, ৩০ টাকা মিল করে দিতে। ৩০ টাকা মিল করতে দোকানি তাঁকে আরও কিছু ধনেপাতা দিলেন। 

এই একটি চিত্রই নিম্ন আয়ের মানুষদের বর্তমান পরিস্থিতিকে ফুটিয়ে তুলেছে। নিম্ন আয়ের অধিকাংশ মানুষ এখন কিনছেন কম, খাচ্ছেনও কম। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশ ছোঁয়া দামে নাভিশ্বাস তাঁদের। যা আয় করেন তা দিয়ে ঠিকমতো মাস চলে না বললেই চলে। 

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চালের দাম আগের চেয়ে চড়া। ধরনভেদ ৫ থেকে ১০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে চাল। এ ছাড়া কাঁচা সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার কমে পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। মাছের বাজারের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ২০০ টাকা নিচে কোন মাছ বাজারে নেই। 

বাজারভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। করলার দামও চড়া। বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে। আকারভেদে লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। কাঁচামরিচের দাম রোববার একটু কম থাকলেও আজ আবার তা ২০০ ছাড়িয়েছে। পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। কচুর মুখির দাম ৬০ টাকা। 

রায়ের বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বেশি দামে কিনে আনি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। আমরা তো ক্রেতা হারাতে চাই না। কিন্তু আমাদের বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নাই। তেলের দাম বাড়ার পর থাইকা সবকিছুর দাম আড়তে বাড়ছে।’ 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন রেজা। বাজার করতে এসে তিনি বলেন, বাজারে আসতেই ভয় লাগে। আজ চালের দাম দেখে আকাশ থেকে পড়েছি। কয়দিন আগে যে চাল ৭০ টাকা কেজি কিনেছি সেটা আজ ৮০ টাকা চাচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদে দেখলাম চালের দাম ১ থেকে ২ টাকা কমছে কিন্তু বাজারের চিত্র তো ভিন্ন। আমরা তো খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছি। 

এখন দিনে এক বার ভাত খাই জানিয়ে রেজা বলেন, রাতে রুটি খাই কিন্তু আটারও দামও বেশি। তবে হিসেবে করলে ভাতের চেয়ে কম খরচ হয় তাই এই পথই বেছে নিয়েছি। 

রায়ের বাজার ও জিগাতলা মাছ বাজার ঘুরে গেছে আকারভেদে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজিতে, কালবাউশের কেজি ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া গ্রাসকার্প আকারভেদে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, বোয়াল ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় পাঙাশ ২৮০ টাকা আর ছোটগুলো ১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাগুর ৬০০ টাকা, কাতল ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। বড় ইলিশ মাছ ১৮০০ টাকা কেজি, মাঝারিগুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় আর একবারে ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। 

কাঁচা সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার কমে নেইমাহতাব আলী নামের একজন মাছ ব্যবসায়ী বলেন, ‘সবকিছুর দাম বেশি তাই মাছের দামও একটু বেশি। আমরা তো আর মাছ চাষ করিনা, আমরা যেমন দামে কিনি তেমনই বিক্রি করি। আমরা যে খুব লাভ করি তা না। আড়তে দাম বাড়াইয়া দেয় আমরাও বাড়াই। আমাদেরও তো চলতে হবে।’ 

এদিকে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। বাজারভেদে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়, যা দুদিন আগে ছিল ৭০ থেকে ৭২ টাকা। আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, গুটি ৬৮ টাকা। 

তবে বাজারে কমেছে ডিম ও মুরগির দাম। ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা হালি। ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে যা ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজিতে। গরুর মাংসে দাম আগের মতই। 

নিত্যপণ্যের দামে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। তারা বলছে যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে সেভাবে তাদের আয় বাড়েনি। দুই/তিন বছর আগে যে আয় ছিল এখনো সেই আয়। কিন্তু এক বছর আগের চেয়ে সবকিছুর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত