Ajker Patrika

বাজারে সংকট সৃষ্টিকারীদের প্রভাব ভাঙা কঠিন: অর্থ উপদেষ্টা

  • বাজার ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীদের প্রভাব অত্যন্ত শক্তিশালী।
  • সব স্তরে অভিযান চালালে কৃত্রিম সংকট আরও বাড়তে পারে।
  • রমজানে সরবরাহ বাড়াতে চাল, ডাল, তেল, সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন।
  • পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে।
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

বাজার ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী প্রভাব এবং এ থেকে সৃষ্ট জটিলতা ভাঙা অত্যন্ত কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ মন্তব্য করেন, যেখানে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বিশদ অভিমত উঠে আসে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীদের প্রভাব অত্যন্ত শক্তিশালী। বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মধ্যম পর্যায়ের পাইকার ও আমদানিকারকেরা মিলিতভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন, যা একটি জটিল কাঠামো তৈরি করেছে। বিশেষ করে, কিছু ব্যবসায়ী সরবরাহ না করেও শুধু ডিও লেটারের মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলেন। এই জটিলতা সহজে দূর করা সম্ভব নয়।

সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বৃদ্ধি সত্ত্বেও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। দাম বাড়ার পর ব্যবসায়ীরা প্রায়ই মজুত করে এবং সরবরাহ সীমিত রাখে, যা ভোক্তাদের ওপর প্রভাব ফেলে।’

উদাহরণস্বরূপ, উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার পরও বাজারে প্রত্যাশিত সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধির দিন বাজারে সরবরাহ মোটামুটি ভালো থাকলেও ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়তে পারে—এমন আশায় সরবরাহে পিছিয়ে থাকেন। ফলে বাজারে সংকট তৈরি হয়।’ খুচরা পর্যায়ে অভিযান চালানো হলেও আসল সমস্যা তৈরি হয় উৎপাদক, মিলার ও পাইকারি পর্যায়ে। যদি সব স্তরে অভিযান চালানো হয়, তাহলে কৃত্রিম সংকট আরও বাড়তে পারে। বাজার ব্যবস্থায় এই প্রভাব এবং জটিলতা ভাঙা বেশ কঠিন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করুক, তবে অতিরিক্ত মুনাফা যেন না করে। উৎপাদনকারীদেরও যাতে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হয়, সেই চেষ্টাই করছি। এ জন্য আমরা সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’

সাংবাদিকদের অর্থ উপদেষ্টা জানান, আজকের বৈঠকে বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং আসন্ন রমজানে সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন চাল, ডাল, সয়াবিন তেল ও সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অবশ্য উপদেষ্টা দাবি করেন, ‘বাজার স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে; কারণ, বেশির ভাগ পণ্যই আমদানিনির্ভর। বাইরের দেশ থেকে আমদানি করে আনলোড করতে সময় লাগে।’

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা স্বীকার করেন, বাজারে কার্যকর মনিটরিং পুরোপুরি নিশ্চিত করা কঠিন। ভোক্তা অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষকেরা কত জায়গায় যাবেন? স্থানীয় পর্যায়ে ডিসি কমিটি গঠন করে বাজার মনিটরিং করা হয়। তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও যোগ করেন, বিদেশি ক্রেতারা অনেক বেশি সচেতন এবং তাঁরা দাম বেড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের ভোক্তারা সাধারণত বাড়তি দাম মেনে নিয়ে পণ্য কিনে নেন।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাজারে সবাই মিলে সঠিক দাম ঠিক করার চর্চা বাইরের দেশে দেখা যায় না। এখানে ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে দাম নির্ধারণ করেন। তাই ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। মনিটরিং সত্ত্বেও অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ তা সহ্য করে।’

ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘কেবল সরকারের মনিটরিং যথেষ্ট নয়, ভোক্তাদেরও তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজন হলে অভিযোগ জানাতে হবে।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ আশা প্রকাশ করেন, সবার সম্মিলিত উদ্যোগে বাজার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সহনীয় হবে এবং ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। তবে এর জন্য সময় ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত