Ajker Patrika

ধারাবাহিক পতনে কমেছে পুঁজিবাজারে ঝুঁকি, বাড়ছে সম্ভাবনা

  • সার্বিক পিই রেশিও ১০-এর নিচে।
  • গত সপ্তাহে ১৯ খাতের ১৪টির পিই রেশিও ২০-এর নিচে।
  • ১২ মাসের মধ্যে ৮ মাসই কমেছে পিই।
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ সময় ধরে থেমে থেমে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের পরিপ্রেক্ষিতে, এখন তা হতাশ বিনিয়োগকারীদের জন্য লোকসান কমানোর এবং নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে দেওয়ার ইঙ্গিতও দিচ্ছে। শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার ফলে বাজারটি এখন অবমূল্যায়িত হয়ে পড়েছে এবং এর ফলে পুঁজিবাজারে একটি অদ্ভুত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাজারের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১০-এর নিচে অবস্থান করছে, যা একটি ঐতিহাসিক সংকেত দিচ্ছে। এই পতনশীল পরিসংখ্যান নির্দেশ করে যে, পুঁজিবাজারে ঝুঁকি এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, ফলে এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।

এর মানে হচ্ছে, এটি এমন একটি সময়, যখন পুঁজিবাজারের দুর্বলতা আসলে তার শক্তির মধ্যে পরিণত হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন কম দামে উচ্চ সম্ভাবনা খুঁজে পাচ্ছেন। যেখানে সুচিন্তিত বিনিয়োগ দীর্ঘ মেয়াদে লোভনীয় মুনাফা নিশ্চিত করতে পারে।

একটি কোম্পানির পিই রেশিও নির্ধারিত হয় তার শেয়ারের বাজারমূল্য এবং শেয়ারপ্রতি আয়ের (ইপিএস) ভিত্তিতে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের শেষে যদি একটি কোম্পানির ইপিএস হয় ১০ টাকা এবং শেয়ারের বাজারমূল্য হয় ২০০ টাকা, তবে ওই বছরে কোম্পানির পিই রেশিও হবে ২০। অর্থাৎ, শেয়ারপ্রতি আয়কে শেয়ারের বাজারমূল্য দিয়ে ভাগ করলে যে ফলাফল আসে, সেটি কোম্পানির পিই রেশিও হিসেবে গণ্য হয়।

পিই রেশিও ২০-এর মানে হলো, যদি কোম্পানির অন্যান্য পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকে এবং আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, তবে বিনিয়োগকারী ২০ বছরে তাঁর পুরো বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পাবেন। একইভাবে, পুরো বাজারের পিই রেশিও এভাবে নির্ধারিত হয়।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলেন, একটি কোম্পানির পিই রেশিও যত কম, তত বেশি লাভজনক হতে পারে, কারণ কম পিই রেশিও মানে শেয়ার কম দামে পাওয়া যাচ্ছে, যা বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে। তবে, পিই রেশিও ২০ বা তার বেশি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ এটি অতিরিক্ত মূল্যায়নের ইঙ্গিত দেয়। কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ কোম্পানির পিই রেশিও কম থাকতে পারে, যা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তাই, পিই রেশিওর পাশাপাশি কোম্পানির অন্যান্য মৌলিক বিষয়ও বিচার করা প্রয়োজন।

দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারদর বর্তমানে চরম নিম্নমুখী, ফলে বেশির ভাগ শেয়ারই অতিরিক্ত মূল্যছাড়ে রয়েছে। এটি একদিকে মন্দার সংকেত, অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্ভাবনাময় সুযোগ সৃষ্টি করেছে। শেয়ারদরের পতন ও অবমূল্যায়নের কারণে বেশির ভাগ শেয়ার এখন ঝুঁকিমুক্ত বলে মনে হচ্ছে, কারণ বাজার স্বাভাবিক মূল্যায়নে ফিরে আসতে পারে। তাই বিনিয়োগকারীরা সঠিক বিশ্লেষণ করে লাভজনক সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যমতে, চলতি বছরে ১২ মাসের মধ্যে ৮ মাসে পিই রেশিও কমে গেছে, যা বাজারের ঝুঁকিহ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। জানুয়ারিতে পিই রেশিও ছিল ১২ দশমিক ৩২, যা ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে ১২ দশমিক ৯৮ হয়েছিল। তবে দরপতনের পর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এটি যথাক্রমে ১১ দশমিক ৭৩, ১০ দশমিক ৯৯ এবং ৯ দশমিক ৭৮-এ নেমে আসে। জুন থেকে আগস্টে কিছুটা বেড়ে তা ১০ দশমিক ২২, ১০ দশমিক ১৯ ও ১১ দশমিক ২৮-এ পৌঁছায়। পরে আবার কমে সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৬৬, অক্টোবরে ১০ দশমিক ০৫ এবং নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ৯ দশমিক ৫১-এ চলে আসে। বর্তমানে এটি ৯ দশমিক ৪৪-এ অবস্থান করছে।

বিআরবি সিকিউরিটিজের শীর্ষ নির্বাহী আলমগীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পিই রেশিও কমলে বাজার বিনিয়োগবান্ধব হয়। দরপতনে শেয়ারদাম কমে যাওয়ায় ঝুঁকি কমেছে এবং বিনিয়োগকারীদের ভালো রিটার্ন পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

তথ্যমতে, গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারের ১৯টি খাতের মধ্যে ৩টিরই পিই রেশিও ১০-এর নিচে ছিল। আর ১০ থেকে ২০-এর মধ্যে রয়েছে ১১টি। বাকিগুলোর অবস্থান ২০-এর চেয়ে বেশি।

গত সপ্তাহের খাতভিত্তিক পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মিউচুয়াল ফান্ড ৩.৩৪, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ৫.৮, ব্যাংক ৬.৩৮, সেবা ও আবাসন ১০.৭৩, প্রকৌশল ১০.৮১, বস্ত্র ১০.৮৯, ওষুধ ও রসায়ন ১১.২৩, টেলিযোগাযোগ ১২.৫৬, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১২.৬৩, বিমা ১৩.২৫, খাদ্য ১৩.৭৪, সিমেন্ট ১৪.৩১, বিবিধ ১৬.৯, তথ্যপ্রযুক্তি ১৮.৬৪, পেপার ২৬.৬২, চামড়া ৩৫.৮৬, পাট ৪০.৪১, ভ্রমণ ৬০.১১ এবং সিরামিক ৮৯.২৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজারে পতনের ফলে শেয়ারগুলো অবমূল্যায়িত হয়ে পড়েছে এবং পিই রেশিও কমেছে, যা বিনিয়োগকারীদের ভালো মুনাফা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত