Ajker Patrika

মাতারবাড়ী ঘিরে বাংলাদেশে শিল্পাঞ্চল গড়তে চায় জাপান

আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ২২: ১৮
মাতারবাড়ী ঘিরে বাংলাদেশে শিল্পাঞ্চল গড়তে চায় জাপান

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ঘিরে বাংলাদেশে নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। সেখানে তৈরি পণ্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানে রপ্তানি করা হবে। এর ফলে বঙ্গোপসাগরসহ এতদঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত ৩০ কোটি মানুষের উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত ভূমিপরিবেষ্টিত প্রতিবেশী রাজ্যগুলো দিয়ে পণ্য সরবরাহের জন্য বন্দর ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে চায় জাপান। 

দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা গত মাসে ভারত সফরে এসে বঙ্গোপসাগর ও উত্তর-পূর্ব ভারত ঘিরে নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ার ভাবনা তুলে ধরেন বলে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে। 

কিশিদার সফরের পর জাপান বাংলাদেশের তিনটি অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্পে ১২৭ কোটি ডলার অর্থায়নের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে মাতারবাড়িতে একটি বাণিজ্যিক সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্পও আছে। ত্রিপুরাসহ সংলগ্ন ভারতের স্থলবেষ্টিত রাজ্যগুলোসহ বৃহত্তর আন্তর্জাতিক পরিসরে পণ্য পরিবহনের জন্য লক্ষ্য থেকে এই বন্দরের পরিকল্পনা। 

ভারতে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোশি সুজুকি গতকাল মঙ্গলবার রয়টার্সকে বলেন, ‘এটা ভারত ও বাংলাদেশ সবার জন্যই লাভজনক হতে পারে।’ 

গতকালই ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় ভারতীয়, বাংলাদেশি ও জাপানি কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে এই শিল্পাঞ্চল গড়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয় বলে তিনি জানান। 

হিরোশি সুজুকি বলেন, ২০২৭ সাল নাগাদ চালু হতে পারে মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্রবন্দর। তখন এই বন্দর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করে বড় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে। 

মাতারবাড়ি বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর, যেখানে বড় আকারের জাহাজ ভিড়তে পারবে। সেখান থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দূরত্ব একশ কিলোমিটারের মত। 

তাই আঞ্চলিক রপ্তানিকারকদের জন্য এই সমুদ্র বন্দর প্রবেশদ্বার হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেন দুই দিনের এ বৈঠকের আয়োজক গবেষণা সংস্থা এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের প্রধান সব্যসাচী দত্ত ৷

বৈঠকে জাপানের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিশান রেড্ডি। আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এই পরিকল্পনা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকে বিনিয়োগ আনতে সহায়ক হতে পারে। 

আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নামে কয়েকশ কোটি ডলারের চীনা উদ্যোগের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকাজুড়ে অবকাঠামো প্রকল্প গড়ে তুলছে ভারত ও জাপান। 

তিনশর বেশি জাপানি কোম্পানি এখন বাংলাদেশে কাজ করছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত সুজুকি বলেন, শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে শিল্প উৎপাদন আরও বাড়বে, বিদেশি কোম্পানিও বাংলাদেশের প্রতি আকর্ষিত হবে। 

প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ২৫ এপ্রিল জাপান সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য কয়েকজন জাপানি নাগরিকের হাতে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ সম্মাননা তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। 

এছাড়া সফরে বেশ কয়েকটি সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও জাপান দুই দেশই আশা করছে, এই সফর দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটা হবে শেখ হাসিনার ষষ্ঠ জাপান সফর। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে তিনি সরকারি সফরে প্রথম জাপানে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত