Ajker Patrika

৫৬ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ইআরডির চিঠি

এডিপি সংশোধন ডিসেম্বরেই

  • ছয় মাস আগেই সংশোধনের উদ্যোগ।
  • লক্ষ্য উন্নয়নের গতি ধরে রাখা।
  • নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বৈঠক।
  • নির্ধারিত সময়ে তথ্য না দিলে সংশোধনের সুযোগ থাকবে না।
  • আগে ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চে এই তথ্য চাওয়া হতো।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
এডিপি সংশোধন ডিসেম্বরেই

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনিক ব্যস্ততা বাড়বে, মাঠের কাজে মনোযোগ কমবে, এমন আশঙ্কা থেকেই সরকার এবার আগেভাগে পদক্ষেপ নিয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের গতি ধরে রাখতে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা আরএডিপি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে ছয় মাস আগেই।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানিয়েছে, এবারের লক্ষ্য ডিসেম্বরের মধ্যেই সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত করা। অর্থাৎ অর্থবছর শেষ হওয়ার অনেক আগেই উন্নয়ন বাজেটের কাঠামো দাঁড় করাতে চায় সরকার, যেন নির্বাচনের সময় প্রকল্পের কাজ থমকে না যায়।

এ লক্ষ্যে ইআরডি থেকে উপসচিব জিনাত রহমান স্বাক্ষরিত এ সম্পর্কিত একটি চিঠি ইতিমধ্যে ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পগুলোর ঋণ ও অনুদান বরাদ্দ নির্ধারণের জন্য নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বৈঠক হবে। ইআরডির সচিবের সভাপতিত্বে আগামী ২ থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত এনইসি ভবনে এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

চিঠিতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে নিজ নিজ প্রকল্পের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ চাহিদা তুলে ধরতে বলা হয়েছে; যেখানে সতর্ক করে ইআরডি বার্তা দিয়েছে, নির্ধারিত সময়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তথ্য না দিলে পরে আর সংশোধনের সুযোগ থাকবে না।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের বছরে সরকারি প্রকল্পে সাধারণত কিছুটা ধীরগতি আসে। মাঠের কর্মকর্তারা নির্বাচনী দায়িত্বে ব্যস্ত থাকেন, ফাইল ঘুরতে সময় লাগে, অনেক প্রকল্পে কাজ থেমে যায়। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই এবার আগাম আরএডিপি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চ মাসে এই তথ্য জানতে চাওয়া হতো।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত বছর প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রত্যাশার নিচে ছিল। এবারের নির্বাচনের সময়ও জানুয়ারি থেকে কাজ ধীর হতে পারে। তাই আগেভাগেই আরএডিপি প্রস্তুত রাখা জরুরি, যাতে উন্নয়ন কার্যক্রম থেমে না যায়।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি আসবে স্থানীয় উৎস থেকে, আর বৈদেশিক সহায়তা থাকবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত—৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির এক-চতুর্থাংশের বেশি। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি, শিক্ষা ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি, গৃহায়ণ ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি এবং স্বাস্থ্য খাত ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।

তবে এসব বরাদ্দের বিপরীতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক প্রকল্প অনুমোদনের হার ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মাত্র তিনটি একনেক সভা হয়েছে। সেখানে ৩৫টি প্রকল্পে অনুমোদন মিলেছে মাত্র ২২ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার। ফলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মনে করছে, এখনই গতি না আনলে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে।

গত অর্থবছরের অভিজ্ঞতাও তেমন ভালো নয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি শেষ পর্যন্ত নেমে আসে ২ লাখ ২৬ হাজার ১৬৫ কোটিতে। কিন্তু সেখান থেকেও বাস্তবায়িত হয় মাত্র ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার এডিপি। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ অর্থই অব্যবহৃত থেকে গেছে।

এই অভিজ্ঞতা থেকেই সরকার এবার চাইছে পরিকল্পনা ও অনুমোদনের কাজ আগেভাগে শেষ করতে। নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক চাপ থাকলেও উন্নয়নের গতি যেন কমে না যায়, এই লক্ষ্যেই নতুন ছন্দে এগোচ্ছে আরএডিপি প্রণয়নের প্রক্রিয়া।

বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ সফল হলে নির্বাচনের সময়ও উন্নয়ন কার্যক্রম সচল থাকবে। আর ব্যর্থ হলে আগের বছরের মতোই বাজেট বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গ্রাহকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার জেলহাজতে

‎জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তাঁর ছাত্রী সপরিবারে পুলিশ হেফাজতে

পুরান ঢাকায় বাসার সিঁড়িতে জবি ছাত্রদল নেতার রক্তাক্ত লাশ

৪৯তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১২১৯

একের পর এক অগ্নিকাণ্ড নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জরুরি বৈঠক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত