Ajker Patrika

মাস্কের সম্পদ এখন অনেক দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি!

মাস্কের সম্পদ এখন অনেক দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি!

আধুনিক বিশ্বে প্রথম কোনো ব্যক্তি হিসেবে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন ইলন মাস্ক। এক দিনেই তাঁর সম্পদ ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বেড়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার বাজারমূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার মধ্যেই মাস্কের সম্পদ হু হু করে বাড়ে। 

টেসলার সিইও ও সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের বর্তমান সম্পদ বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড, জেনারেল মোটরস (জিএম) এবং ভক্সওয়াগনের সম্মিলিন সম্পদের চেয়েও বেশি! 

ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত সম্পদের বর্তমান মূল্য ৩০২ বিলিয়ন ডলার। যেখানে জিএমের বাজারমূল্য ৭৮ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার, ফোর্ডের ৬৮ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার এবং ভক্সওয়াগনের বাজারমূল্য ১৪০ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। 

শুধু তা-ই নয়, মাস্কের একক সম্পত্তি এখন ডাইলমার এবং বিএমডব্লিউ গ্রুপের সম্মিলিত সম্পদের চেয়ে বেশি। এই দুই কোম্পানির বর্তমান বাজারমূল্য যথাক্রমে ১০৭ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলার এবং ৬৬ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। 

মার্কিন রেন্ট-এ-কার কোম্পানি হার্টজ একসঙ্গে ১ লাখ গাড়ির ক্রয়াদেশ দেওয়ার পরপরই টেসলার শেয়ারদর হু হু করে বাড়তে থাকে। দ্রুতই ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। 

মাস্কের পরই এখন সবচেয়ে বেশি সম্পত্তির মালিক আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জেফ বেজোস। তাঁর সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য ১৯৯ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য মাস্কের আগে তিনিই প্রথম ব্যক্তিগত সম্পতিতে ২০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন। 

টেসলা পঞ্চম মার্কিন কোম্পানি হিসেবে ট্রিলিয়ন ডলার ক্লাবে যোগ দিল। এর আগে আমাজন, অ্যাপল, মাইক্রোসফট এবং গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট এই ক্লাবের সদস্য হয়েছে। 

এদিকে পুঁজিবাজারে টেসলার ঘোড়া যখন ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে, তখন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানির মর্যাদা অ্যাপলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে মাইক্রোসফট। বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থ প্রান্তিকে প্রাক্কলিত রাজস্ব কমানোর পর এই ঘটনা ঘটলো। 

আরও মজার তথ্য হলো, মাস্কের সম্পদ এখন মিসর, পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, গ্রিস, কাতার এবং ফিনল্যান্ডের মতো দেশের বার্ষিক জিডিপির চেয়ে বেশি। পেপলের চেয়েও মাস্কের সম্পদ বেশি। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে পিটার থিয়েলের সঙ্গে তিনিই এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। 

মাস্কের সম্পদের বড় অংশই এসেছে টেসলা থেকে। তবে রকেট কোম্পানি স্পেসএক্সও তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছেন। সম্প্রতি ইলন মাস্ক টেক্সাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা বলেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন মার্জিন ঋণ আইন: দুর্বল কোম্পানিতে আর ঋণ দেওয়া যাবে না

  • শিগগিরই গেজেট জারি হবে।
  • ২৫ শতাংশ কমলেই মার্জিন কল, ৫০ শতাংশ কমলেই ফোর্সড সেল হবে।
  • একক কোম্পানির ঋণ ১০ কোটি টাকার বেশি নয়।
  • ঋণ দেওয়ার আগে খাতের পারফরম্যান্স বিবেচনা বাধ্যতামূলক।
  • বিনিয়োগকারী-ঋণদাতা বাঁচানোর আইন: বিএসইসি
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা 
নতুন মার্জিন ঋণ আইন: দুর্বল কোম্পানিতে আর ঋণ দেওয়া যাবে না

মার্জিন ঋণের কারণে অসংখ্য বিনিয়োগকারী সম্পূর্ণ অর্থ হারিয়ে পথে বসেছেন। একইভাবে পুঁজিবাজারে পতনের ফলে ঋণে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ঋণদাতারা। এর খেসারত দিচ্ছে পুরো বাজার। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঝুঁকি কমাতে আসছে নতুন মার্জিন ঋণনীতি। এতে ঋণের সীমা কড়াকড়ি করা হয়েছে। দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিতে ঋণ বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে মার্জিন কল ও বাধ্যতামূলক বিক্রির (ফোর্সড সেল) নতুন নির্দেশনা।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এসব বিধান রেখে ‘মার্জিন বিধিমালা, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন আজকের পত্রিকাকে জানান, নতুন নিয়মের লক্ষ্য—বিনিয়োগকারী ও ঋণদাতাকে নেগেটিভ ইকুইটির ফাঁদ থেকে রক্ষা করা। এ বিধান কার্যকর হলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে আসবে। শিগগিরই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

কেন প্রয়োজন ছিল নতুন আইন

দুই দশক ধরে বাজারে নিয়মের ফাঁকফোকর ও অতিরিক্ত ঋণ ব্যবহারের কারণে বহু প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ২০০৭ থেকে ২০১২ সালে অতিরিক্ত ঋণনির্ভর বিনিয়োগের ফলে ২০১০ সালের ধস ভয়াবহ ক্ষতিতে রূপ নেয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলক মার্জিন কল না দেওয়ায় নেগেটিভ ইকুইটি জমে, যার পরিমাণ প্রায় ১৫-২০ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের মোট ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৫০-৭০ হাজার কোটি টাকা।

কমিশনার সাইফুদ্দিন বলেন, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত বিনিয়োগকারীরা প্রথমবারের মতো বিনিয়োগ করে তাঁদের সঞ্চয় হারিয়েছেন। এ ক্ষতির স্মৃতি পুঁজিবাজারে এক প্রজন্মের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে।

নতুন নিয়মে কী বদল

মার্জিনযোগ্য শেয়ারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার নয়, এবার ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ারেও মার্জিন ঋণ দেওয়া যাবে। তবে কোম্পানিটির বছরে অন্তত ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। সামান্য ফ্রি ফ্লোট শেয়ার থাকা কোম্পানি (৫০ কোটি টাকার কম) মার্জিন ঋণ পাবে না।

নতুন আইনে দ্রুত সতর্কতা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আগের নিয়মে মূলধন ৫০ শতাংশ কমলে মার্জিন কল, ৭৫ শতাংশ কমলে বাধ্যতামূলক বিক্রি হতো; নতুন নিয়মে ২৫ শতাংশ কমলেই মার্জিন কল, ৫০ শতাংশ কমলেই ফোর্সড সেল হবে। এতে বিনিয়োগকারীরা আগেভাগে সতর্ক হয়ে ক্ষতি সীমিত রাখতে পারবেন।

ঋণের সীমা ও ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে বলা হয়েছে, কোনো ঋণদাতা তাঁর নিট সম্পদের তিন গুণের বেশি ঋণ দিতে পারবেন না। একক কোম্পানিকে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা বা নিট সম্পদের ১৫ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ ঋণ দেওয়া যাবে। প্রতি তিন মাসে মার্জিন অ্যাকাউন্টের পর্যালোচনা বাধ্যতামূলক।

বর্তমানে ১৭৭টি বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার নেগেটিভ ইকুইটি রয়েছে। বিএসইসি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে ক্ষতি মেটানোর পরিকল্পনা দিতে হবে; সময়মতো পদক্ষেপ না হলে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।

নতুন নিয়মে ঋণ প্রদানের আগে খাতের পারফরম্যান্স বিবেচনা বাধ্যতামূলক, যাতে বিনিয়োগকারী নিরাপদ থাকেন এবং প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ঝুঁকিতে না পড়ে।

বিএসইসি কমিশনার সাইফুদ্দিন জানিয়েছেন, এ বিধান কার্যকর হলে বিনিয়োগকারীরা অন্তত ৫০ শতাংশ অর্থ ফেরত পাবেন।

অর্থনীতিবিদ হেলাল আহমেদ জনি মনে করেন, নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

তবে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মানিক সতর্ক করে বলেছেন, খসড়া মার্জিন নিয়মে কিছু ফাঁকি রয়েছে। বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে সরে যেতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জ্বালানি সরবরাহ শুরু আজ: চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন মেরামত শেষে ফের সচল

  • পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ সিডিপিএল প্রকল্প দপ্তরের।
  • প্রথম দিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সরবরাহ করা হবে ৫০ লাখ লিটার।
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
জ্বালানি সরবরাহ শুরু আজ: চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন মেরামত শেষে ফের সচল

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহের প্রতিশ্রুতিতে গত ১৬ আগস্ট পতেঙ্গার ডেসপাস টার্মিনালে ছিল উৎসবের আমেজ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান উদ্বোধন করেন বহু প্রতীক্ষিত ‘সিডিপিএল’ পাইপলাইন প্রকল্পের। শুরু হয় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের যাত্রা, যা তখন নতুন আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু সেই ধারা টিকল না বেশি দিন।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতের অজুহাতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় সরবরাহ। এক মাস পেরিয়ে অবশেষে আবারও সচল হচ্ছে প্রকল্পটি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ বুধবার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ৫০ লাখ লিটার জ্বালানি তেল পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন কোম্পানি—পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল লিমিটেডকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে সিডিপিএল প্রকল্প দপ্তর। এর ফলে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপো পর্যন্ত আজ বুধবার সকাল থেকে পাইপলাইনে সরবরাহ করা নতুন জ্বালানি মিলবে।

বিপিসির তথ্য বলছে, বন্ধের আগেই পাইপলাইনে ৭টি পার্সেলে মেঘনা অয়েল ৩ কোটি ২২ লাখ লিটার, পদ্মা অয়েল প্রায় ৩ কোটি লিটার এবং যমুনা অয়েলও সমপরিমাণ তেল পাঠায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায়। আগে যেখানে ট্যাংকারে তেল পৌঁছাতে লাগত দুই দিন, সেখানে পাইপলাইন এখন সেই সময় কমিয়ে এনেছে মাত্র ১২ ঘণ্টায়। ঘণ্টায় ২৬০-২৮০ টন ডিজেল প্রবাহিত হতে পারে এই লাইনে, যা কার্যক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য প্রযুক্তিগত সাফল্য।

এই প্রকল্প দেশের জ্বালানি পরিবহনে এক নতুন যুগের সূচনা বলে ধরা হয়। প্রায় ৩৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ২৪৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মধ্যে গোদনাইল পর্যন্ত ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ, এরপর ফতুল্লা পর্যন্ত অংশে ১০ ইঞ্চি। ২২টি নদীর তলদেশ ছুঁয়ে গেছে এই পাইপলাইন; নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণে সংযুক্ত রয়েছে স্ক্যাডা, টেলিকমিউনিকেশন, লিক ডিটেকশন প্রযুক্তিসহ অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল। চলতি বছরের জুনে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক পরিবহন শুরু হয়। এরপর ১৬ আগস্ট পতেঙ্গায় ডেসপাস টার্মিনালে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ফাওজুল কবির খান।

উদ্বোধনের এক মাস পর জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগস্টে চালু হওয়ার পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্পের যান্ত্রিক রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন দেখা দিলে পরিবহন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। এখন সেই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ হয়েছে, তাই সবকিছু আবারও সচল হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা অয়েলের পরিচালন ও পরিকল্পনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, ‘রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প দপ্তর থেকে চিঠি পেয়েছি, প্রস্তুতিও সম্পন্ন। বুধবার (আজ) থেকে আবার পাইপলাইনে তেল যাবে।’

মেঘনা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহীরুল হাসানও নিশ্চিত করেছেন, মাসখানেক বিরতির পর নতুন করে সরবরাহ শুরু হচ্ছে আজ। এবার পুরোপুরি কার্যক্রমে গতি আসবে।

পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পাইপলাইনের নয়টি স্টেশন ও বরুড়ায় ২১ হাজার টন ধারণক্ষমতার নতুন ডিপোসহ পুরো প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। বছরে ৫০ লাখ টন তেল পরিবহনের সক্ষমতা অর্জন করলে এই প্রকল্পে প্রতিবছর প্রায় ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানায় বিপিসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জরুরি সংবাদ সম্মেলন

দেশি ব্যবসায়ীদের চেয়ে বিদেশিদের কথা শুনতে সরকার বেশি পছন্দ করে

  • তিন ধারায় আপত্তি জানিয়ে সংশোধিত শ্রম আইন-২০২৫ পুনর্বিবেচনার আহ্বান।
  • এলডিসি উত্তরণ তিন বছর পেছানোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি ব্যবসায়ীদের।
  • মাশুল না বাড়িয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ৩৫
সংশোধিত শ্রম আইনের তিনটি ধারায় আপত্তিসহ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে নূরুল কাদের অডিটরিয়ামে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে।	ছবি: আজকের পত্রিকা
সংশোধিত শ্রম আইনের তিনটি ধারায় আপত্তিসহ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে নূরুল কাদের অডিটরিয়ামে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিদেশিদের পরামর্শেই সরকার শ্রম আইনের কিছু কিছু ধারায় পরিবর্তন আনছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, সরকার দেশীয় ব্যবসায়ীদের চেয়ে বিদেশিদের কথা শুনতেই বেশি পছন্দ করছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা শ্রম আইনের তিনটি ধারায় আপত্তি তুলে ধরে সংশোধিত শ্রম আইন-২০২৫ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। আপত্তির বিষয় তিনটি হচ্ছে শ্রমিকের সংজ্ঞা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকের সর্বনিম্ন সংখ্যা ও শ্রমিকদের দ্বৈত প্রভিডেন্ট ফান্ড। এ ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে এলডিসি উত্তরণ রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করে প্রস্তুতির জন্য তিন বছর পেছানোর জোর দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর মুনাফায় থাকার পরও বাড়তি মাশুল নির্ধারণ করা অযৌক্তিক উল্লেখ করে এটি প্রত্যাহারের দাবি জানান তাঁরা।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সভাপতিত্বে ওই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ), বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) সিইও মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিজিএমইএর নির্বাহী কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শ্রম আইন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন যে বিষয়গুলোতে আপত্তি তোলা হচ্ছে, তা কেন আগে থেকে সরকারের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে সমাধান করা হয়নি—এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘বিদেশিদের পরামর্শে শ্রম আইন সংশোধন করছে সরকার। আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে সমস্যাগুলো জানাতে চেয়েছিলাম। আমরা চার মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চেয়েও পাইনি। অথচ স্টারলিংকের কোম্পানি স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট এলে তাঁর সঙ্গে উনি দেখা করেন। যে কোম্পানি ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। অথচ তিনি ৪০ বিলিয়ন ডলারের খাতের প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেন না।’

মাহমুদ হাসান খান বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কারও সঙ্গে নেগোসিয়েশন করতে হলে তার সঙ্গে বসতে হয়। তিনি যদি সময় না দেন তাহলে কীভাবে নেগোসিয়েশন করব? আমরা বারবার সময় চেয়েও পাইনি।’

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি থাকার বিধান রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন মোট শ্রমিকের অনুপাতের শর্তের বদলে ন্যূনতম শ্রমিকসংখ্যা বিবেচনার জন্য সুপারিশ করেছে। সে ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ন্যূনতম ৫০ এবং জাতীয়ভিত্তিক ইউনিয়নের জন্য ন্যূনতম ৪০০ জন শ্রমিকের সম্মতির সুপারিশ করে কমিশন।

তবে গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আইনের যে খসড়া অনুমোদন পেয়েছে, তাতে ন্যূনতম শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে ২০ জন করা হয়েছে দাবি করে মাহমুদ হাসান খান বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় একতরফাভাবে সেটি পরিবর্তন করে ২০-৩০০ শ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ধাপ করা হয়েছে ৫টি।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবতাবিবর্জিত বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। কারণ মাত্র ২০ জন শ্রমিক দিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠন করা হলে কারখানাগুলোতে এমন ব্যক্তিরা ট্রেড ইউনিয়ন করবেন, যাঁরা ওই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন।

তাঁরা বলেন, এটি অন্তর্দ্বন্দ্ব ও শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে ও উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমবে এবং উদ্যোক্তারা নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনায় নিরুৎসাহিত হবেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভারতে ১০ শতাংশ বা ন্যূনতম ১০০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন করা যায়। পাকিস্তানে ট্রেড ইউনিয়ন করতে সম্মতি লাগে ২০ শতাংশ শ্রমিকের।

ভবিষ্যৎ তহবিল ও সর্বজনীন পেনশন প্রগতি—দ্বৈত জটিলতার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, টিসিসির আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল একটি প্রতিষ্ঠান চাইলে ‘ভবিষ্যৎ তহবিল’ বা ‘প্রগতি’ যেকোনো একটি স্কিম বেছে নিতে পারবে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দিয়েছে, শ্রমিক চাইলে দুটি পদ্ধতিতেই অংশ নিতে পারবে, যা উদ্যোক্তাকে দুটি ভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাপনা সমান্তরালে চালাতে বাধ্য করবে। এতে প্রশাসনিক জটিলতা, ব্যয় বৃদ্ধি ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

শ্রমিকের সংজ্ঞা আগের মতোই রাখার দাবি জানিয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সংশোধিত শ্রম আইনের সংস্কার কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল একরকম। কিন্তু খসড়া প্রকাশ হওয়ার পর দেখলাম তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন। কার স্বার্থে এগুলো করা হয়েছে। আমরা শ্রমিক আইন পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ছিলাম না কখনই।’

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়াকে ভূরাজনৈতিক কোনো প্রভাব দেখছেন না বলেও জানান মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত অনেক ভালো। দেশে যারা আগে পরিচালনা করেছে, তারা কিছু শিখবে হয়তো এখান থেকে।

বন্দরের মাশুল প্রত্যাহারের দাবি

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ব্যবস্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের আওতায় দিতে সরকার চুক্তি করতে যাচ্ছে । আগামী ডিসেম্বরে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে চট্টগ্রামসহ তিনটি বন্দরের কনটেইনার ব্যবস্থাপনা চলে যাচ্ছে। এজন্যই সরকার ১৯৮০ সাল থেকে চলে আসা মাশুল ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল ফি ৪১ শতাংশ বাড়ানো অযৌক্তিক দাবি করে তাঁরা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সেবা ফি নেওয়া হয় ডলারে। ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ২৯ দশমিক ৮৯ টাকা। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে গত ৪০ বছরে টাকার অঙ্কে মাশুল ইতিমধ্যেই ৩০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বন্দরের মাশুল না বাড়িয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা।

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আরও তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের সুদের হার অনেক বেশি, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পণ্য নিয়ে যেতে এখনো ৭-৮ ঘণ্টা লাগে, জ্বালানির ঘাটতিতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব সমস্যা রেখে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করলে আমরা চরম প্রতিযোগিতায় পড়ব। এ ছাড়া প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে টিকফা, এফটিএর মতো কয়েকটি চুক্তি করতে হবে। এ জন্য তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করছি। তিন বছর পিছিয়ে দিলে বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিতে আরও সাত বছর সময় পাবে। তবে এসব সমস্যার সমাধান হলে আগামী বছরই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে কোনো আপত্তি নেই আমাদের।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রম আইনের তিন ধারায় কারখানামালিকদের আপত্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
শ্রম আইনের তিন ধারায় কারখানামালিকদের আপত্তি

শ্রমিকের সংজ্ঞা, ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিকের সংখ্যা ও দ্বৈত প্রভিডেন্ট ফান্ড—শ্রম আইনের এই তিন ধারায় আপত্তি জানিয়েছেন কারখানামালিকেরা।

সংশোধিত শ্রম আইন, ২০২৫ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই আহ্বান জানায়।

এ সময় প্রস্তুতির জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন তিন বছর পেছানো ও বন্দরের বাড়তি মাশুল প্রত্যাহারের দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলেন, উচ্চ সুদহার, পণ্য পরিবহনব্যবস্থার উন্নতি, গ্যাস-বিদুৎ সমস্যাসহ সব সমস্যা সমাধান করে প্রস্তুতি শেষ হলে আগামী বছরই গ্র্যাজুয়েশনে রাজি তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের ব্যবসায়ীদের চেয়ে ‘সরকার বিদেশিদের কথা শুনতেই বেশি আগ্রহী’ বলে অভিযোগ করা হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিদেশিদের পরামর্শে শ্রম আইন সংশোধন করছে সরকার। আমরা চার মাস ধরে সময় চেয়েও প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ পাইনি। ১০০ মিলিয়ন ডলারের স্টারলিংকের ভাইস চেয়ারম্যানকে তিনি সময় দেন, অথচ ৪০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিনিধিকে সময় দেন না।’

সরকারের উদ্দেশে মাহমুদ হাসান খান বলেন, শিল্প, শ্রমিক ও অর্থনীতির বাস্তব চাহিদা বিবেচনায় এমন একটি নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে, যা দেশের শিল্প খাতের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা নষ্ট না করে বরং টেকসই উন্নয়নকে সহায়তা করবে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্প খাত নানা চ্যালেঞ্জের মুখে। শ্রম আইন সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা যেন বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আইন এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে, যাতে এটি শিল্পের টেকসই বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের শিল্প খাতকে টিকে থাকতে হলে সরকারকে অবশ্যই একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

মাহমুদ হাসান খান সরকারের প্রতি গ্যাস-সংকটের দ্রুত সমাধান, কাস্টমস ও এনবিআর প্রক্রিয়ার সহজীকরণ, অবকাঠামো ও লজিস্টিক উন্নয়ন এবং স্বল্প ব্যয়ে অর্থায়নের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথ মসৃণ করতে হলে সরকারকে সময়োপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা অনুরোধ করছি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা অন্তত তিন বছর পিছিয়ে দেওয়া হোক।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি স্থিতিশীল ও উন্নত অর্থনীতি উপহার দিতে হলে উৎপাদনমুখী শিল্পের বাস্তব চাহিদা ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাস্তবতা বিবেচনা করে দ্রুত, ইতিবাচক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ নেতারা উল্লেখ করেন, শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় শিল্পের অংশীদারদের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত না হলে তা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তাঁরা সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।

এ সময় বক্তব্য দেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

বিকেএমইএর সভাপতি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলোচনায় শ্রম আইনে ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়ে যেভাবে চূড়ান্ত হয়েছি, এভাবে—“শ্রম আইনে প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে সরাসরিভাবে বা কোনো ঠিকাদার, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, ইহার মাধ্যমে মজুরি বা অর্থের বিনিময়ে কোনো দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরি, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা করণিক কাজে নিযুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী হিসেবে কোনো ব্যক্তি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, তবে ২(৪৯)(খ) নিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত সকল ব্যক্তি ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।” কিন্তু ‘‘কোনো ব্যক্তি’’-এর বদলে নতুন সংজ্ঞায় ‘‘কর্মকর্তা-কর্মচারী’’ যোগ করা হয়।’

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ব্যবস্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের আওতায় দিতে সরকার চুক্তি করতে যাচ্ছে চলতি মাসে। আগামী ডিসেম্বরে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে চট্টগ্রামসহ তিনটি বন্দরের কনটেইনার ব্যবস্থাপনা চলে যাচ্ছে। এ জন্য ১৯৮০ সাল থেকে চলে আসা একই মাশুল ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এতে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল ফি ৪১ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে দাবি করে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আমরা বলেছি, আগে কনটেইনার ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বাড়ানো হোক। আমরা উপকারটি আগে পাই, তারপরে চার্জ বাড়ানো যেতে পারে। একসঙ্গে না বাড়িয়ে ধারবাহিকভাবে ১০ শতাংশ হারে বাড়ানো যেতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দর গত বছরে দুই হাজার কোটি টাকার মতো মুনাফা করেছে। সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান তো মুনাফায় আছে। তাহলে কেন চার্জ বাড়ানোর প্রয়োজন?’

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর সেবা ফি নেওয়া হয় ডলারে। ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ২৯ দশমিক ৮৯ টাকা। বর্তমানে তা ১২২ টাকার বেশি হওয়ায় গত ৪০ বছর ধরে টাকার অঙ্কে ৩০৮ শতাংশ বেড়েছে বলে বক্তব্য তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি।

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আরও তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে টিকফা, এফটিএর মতো কয়েকটি চুক্তি করতে হবে। এগুলো করা হোক, নইলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। এ জন্য তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করছি।’

তিন বছর পিছিয়ে দিলে বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিতে আরও সাত বছর সময় পাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত এক বছরে পোশাক খাতে ২৫৮টি কারখানা বন্ধ হওয়ার তথ্য দিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, নানা কারণে তা বন্ধ হয়েছে। এটি চলমান প্রসেস, এটি হয়। কারখানাওয়াইজ বিশ্লেষণ করে বলা যাবে কারণগুলো কী।

যে তিন বিষয়ে আপত্তি—

১. ট্রেড ইউনিয়ন গঠন: ভারসাম্যহীন ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত

টিসিসি ও ওয়ার্কিং কমিটিতে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ধাপে ধাপে শ্রমিকের সংখ্যা নির্ধারণে একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল—যেখানে প্রথম ধাপে ৫০ থেকে ৫০০ শ্রমিকের কারখানায় ন্যূনতম ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ ছিল, কিন্তু পরে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় একতরফাভাবে সেটি পরিবর্তন করে ২০–৩০০ শ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ধাপ করা হয়েছে পাঁচটি।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবতাবিবর্জিত। কারণ, মাত্র ২০ জন শ্রমিক দিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠন করা হলে কারখানাগুলোতে এমন ব্যক্তিরা ট্রেড ইউনিয়ন করবেন, যাঁরা ওই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। এটি অন্তর্দ্বন্দ্ব ও শিল্পে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে এবং উৎপাদন ব্যাহত করবে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমবে এবং উদ্যোক্তারা নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনায় নিরুৎসাহিত হবেন।

২. ভবিষ্যৎ তহবিল ও সর্বজনীন পেনশন প্রগতি—দ্বৈত জটিলতা

টিসিসির আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল—একটি প্রতিষ্ঠান চাইলে ‘ভবিষ্যৎ তহবিল’ বা ‘প্রগতি’—যেকোনো একটি স্কিম বেছে নিতে পারবে।

কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দিয়েছে, শ্রমিক চাইলে দুটি পদ্ধতিতেই অংশ নিতে পারবে—যা উদ্যোক্তাকে দুটি ভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাপনা সমান্তরালে চালাতে বাধ্য করবে। এতে প্রশাসনিক জটিলতা, ব্যয় বৃদ্ধি ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

৩. শ্রমিকের সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা ও প্রশাসনিক ঝুঁকি

নতুন সংশোধনীতে শ্রমিকের সংজ্ঞায় ‘কর্মচারী/কর্মকর্তা’ যুক্ত করায় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক স্তর ও শ্রমিক স্তরের মধ্যে বিভাজন ভেঙে যাবে। এর ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, দায়িত্ব বণ্টনে বিভ্রান্তি তৈরি হবে এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় মারাত্মক সমস্যা দেখা দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত