Ajker Patrika

বাজেটে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় নজর দিতে হবে: আতিউর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বাজেটে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় নজর দিতে হবে: আতিউর রহমান

আগামী বাজেটে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘গরিবের জন্য সবচেয়ে বড় কর হলো মূল্যস্ফীতি। মানুষের কষ্ট লাঘবে এখানে নজর দিতে হবে। আগামী বাজেটে প্রবৃদ্ধির কথা না বলাই ভালো। আমাদের প্রবৃদ্ধির হার অনেক ভালো। তাই এবার প্রবৃদ্ধি কম হলেও আগামী বাজেটে আমাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে নজর দিতে হবে।’ 

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামোটরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন আতিউর রহমান। সংস্থাটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। 

সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন অংশীজনকে বাজেট বিষয়ে তথ্য ও গবেষণা সহযোগিতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাংক এশিয়া ও উন্নয়ন সমন্বয় যৌথভাবে ‘আমাদের সংসদ’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। 

২০২৪-২৫ সালের বাজেটে কাঠামোগত অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে জানিয়ে অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান বলেন, ‘আসন্ন বাজেটে অনেক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিফলন ঘটবে। বেশ কিছু কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। গত দুই-আড়াই বছরে আমরা ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে যে ধরনের সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি, তা কখনো করিনি। বৈদেশিক মুদ্রা বা ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনফ্লো এত বেশি ছিল যে, বাড়তি ডলার কীভাবে ম্যানেজ করব সেই সংকট ছিল। এখন উল্টো হয়ে গেছে। স্বল্পতা (স্কারসিটি) সংকট তৈরি হয়েছে।’ 

ডলারের ক্ষয় রোধে আমদানি সংকোচনের সমালোচনা করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান। তিনি বলেন, আমদানির মধ্যে রপ্তানি আছে। রপ্তানির জন্য উৎপাদনের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আমদানি করতে হয়। সেটা বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব জায়গায় কাঠামোগত সমস্যা তৈরি হয়েছে। আগামী বাজেটে এই সব কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। 

মুদ্রানীতিতে সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সেটি কার্যকর হচ্ছে না। এ বিষয়ে ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে শুধু চাহিদা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো যায় না। সরবরাহের দিকটাও বাড়াতে হবে। কিন্তু সরবরাহ থাকার পরেও মূল্যস্ফীতি কমছে না। বাজারে গেলে দেখা যাবে পণ্যের সরবরাহের ঘাটতি নেই। তার মানে বিক্রেতার ক্রয় খরচ অনেক বেশি। যে পণ্য আমদানি করা হয় সেটির দাম বেড়েছে অনেক কারণে। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা চিন্তা করতে হবে। এবারের বাজেটে মূল বিষয় হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি। 

তিনি বলেন, আগামী বাজেট সংকোচনমূলক করতে হবে। এর সঙ্গে মুদ্রানীতির যোগসূত্র থাকবে। 

তবে রাজনীতিবিদদের জন্য প্রবৃদ্ধি খুব আকর্ষণীয় বিষয় উল্লেখ করে সাবেক গভর্নর বলেন, রাজনীতিবিদেরা প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে অর্থনীতি ভালো আছে এই কথা বলতে পছন্দ করেন। তবে স্থিতিশীলতার অভাব হলে বলা যায় না যে, অর্থনীতি ভালো আছে। 

কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর জন্য প্রবাসীদের আয়ের ওপর করের খড়্গ চাপানোর পক্ষে নন উন্নয়ন সমন্বয় সভাপতি ড. আতিউর। তিনি বলেন, ‘কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে। তবে কোনোভাবেই রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা তুলে নেওয়ার পক্ষে নই।’ 

বাজেটের মতো সংশোধিত বাজেট নিয়ে কাজ করার জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংশোধিত বাজেট নিয়ে আলোচনা করতে হবে। অনেক খাতেই বরাদ্দকৃত টাকা খরচ করতে পারে না। সেটা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে দেওয়া হয় না। বরাদ্দ দেওয়া হয় জনপ্রশাসনে। তাতে খুব বেশি ফল আসে না। এসব বিষয়ে কথা বলতে হবে। 

মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন—ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্যসচিব জাহিদ রহমান, ব্যাংক এশিয়ার হেড অফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স সিদ্দিক ইসলাম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত