Ajker Patrika

রমজান সামনে রেখে সবজির বাজার চড়া

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২২, ২১: ৫৩
রমজান সামনে রেখে সবজির বাজার চড়া

রোজার বাকি আর একদিন। এদিকে বেড়ে গেছে কাচা সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম। কিছু সবজির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।

পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত রোজা শুরুর আগে আগে বাজার চড়া হয়। এবার অবশ্য রমজানের বেশ আগ থেকেই বাজার অস্থিতিশীল হয়েছিল। সয়াবিন তেল তো দামের দিক থেকে মানুষকে একহাত দেখিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। কিন্তু এখন রমজানের আগে আগে এর কোনোটিই কাজে আসছে না বলে মনে হচ্ছে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে, যা গতকালই ছিল ৫০-৬০ টাকা। শসার কেজি ৭০-৮০ টাকা, গতকাল যা ছিল ৬০ টাকা। করলার দামও চড়া। বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। আকার ভেদে লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকা দরে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে কিছু সবজির দাম। এর মধ্যে কাঁচা মরিচ ৪০-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ / ৩০ টাকা ও টমেটো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আগামীকাল কাঁচা সবজির দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন অনেক খুচরা ব্যবসায়ী। তাঁরা বলেন, এখন একটু কমে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সকালে দাম আরেকটু বাড়তে পারে। কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, কাল সকালে আরও বেশি মানুষ আসবে। চাহিদার তুলনায় পণ্য কম, তাই বাড়তে পারে।

চাল, ডাল ও বিভিন্ন ধরনের মসলার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

রোজার একদিন আগে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে রায়ের বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোজার কারণে বাজারে ক্রেতা বেশি। চাহিদাও গতকালের চেয়ে অনেক বেশি। আর চাহিদা বাড়ার কারণে দামও একটু বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সবাই একবারে বেশি করে পণ্য কেনায় বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। আর তখনই ব্যবসায়ীরা একটু দাম বাড়িয়ে দেন। সকালে দাম আরও বেশি ছিল। বেগুন এখন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও সকালে ছিল ১০০ টাকা কেজি।

কথা হয় বাজার করতে আসা ক্রেতা সামির হোসেনের সঙ্গে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আজ ছুটির দিন, তাই বাজারে এসেছি। কাল রাতে সাহরি খেতে হবে। কাল আবার অফিস, তাই আজই এসেছি বাজারে। কিন্তু সবকিছুর দাম তুলনামূলক বেশি। যেমন পারছে দাম নিচ্ছে। আমরা অসহায়। কারণ, আমাদের তো কিনতেই হবে।’

তবে মাছের বাজারে এখনো দাম এতটা বাড়েনি। রায়ের বাজার ও জিগাতলা মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিছু মাছের দাম বাড়লেও বেশ কয়েকটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে কোনোটার দাম কমেনি। রুই মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ছিল ২৬০-২৮০ টাকা। কালিবাউশের কেজি ২৬০ টাকা, যা গতকালও ছিল ২৪০-২৫০ টাকা। এ ছাড়া গ্রাসকার্প আকার ভেদে ২৩০-২৮০ টাকা, বোয়াল ৬০০-৮০০ টাকা, পাঙাশ বড় ৩৫০ টাকা, ছোট আকারের পাঙাশ ১৫০-১৭০, তেলাপিয়া ১৫০-১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কই মাছ (চাষের) ২০০ টাকা কেজি, মাগুর ৬০০ টাকা, কাতল ৩২০-৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাতলের কেজি গতকালও ছিল ২৮০-৩০০ টাকা ছিল। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা কেজি, চিংড়ি আকার ভেদে ৪০০-৬০০ টাকা কেজি। ইলিশ মাছ বড় আকারের ১০০০ থেকে ১২০০, মাঝারি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষত রমজান সামনে রেখে রুই ও কাতল মাছের দাম গড়ে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

মাছ ব্যবসায়ী মাহতাব আলী কিছু মাছের দাম বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘রোজার আগে একটু দাম বাড়ে। সবাই ভালো জিনিস খেতে চায়। দামের চিন্তা করে না।’ কেন বাড়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আড়তে দাম বেড়ে যায় তাই আমাদেরও বাড়াতে হয়।’

রুই-কাতলের মতো বড় মাছের দাম বাড়লেও অধিকাংশ মাছের দাম এখনো স্থিতিশীল আছে।

তবে মসলার বাজার স্থিতিশীল। আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি, রসুন (চায়না) ১৩০, দেশি ৫০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে দেশি রসুনের দাম ছিল ৬০ টাকা কেজি। কমেছে পেঁয়াজের দাম; বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া অন্য মসলার দাম আগের মতোই আছে।

ভোজ্যতেলের বাজার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ টাকায়। অর্থাৎ, প্রতি লিটারের দাম পড়ছে ১৫২ টাকা। কিন্তু এই একই তেল এক বা দুই লিটার কিনলে লিটারপ্রতি দাম পড়ছে ১৬০ টাকার বেশি।

মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা করে, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়।

এদিকে চালের দাম আছে আগের মতো। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর মসুরের ডাল সরুটা ১৩০ টাকা, মোটা ডাল ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি। বুটের ডাল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত