Ajker Patrika

সংকটে দেশের অর্থনীতি, তিন মাসে কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় ৪ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২: ১০
Thumbnail image

অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি ও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতায় মানুষের কাজের সুযোগ কমছে। নতুন কাজের সুযোগ হচ্ছে না; উল্টো কমছে কর্মসংস্থান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপের তথ্য বলছে, তিন মাসেই দেশে প্রায় ৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান কমেছে।

ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা জানান, রপ্তানিতে ক্রয়াদেশ কমছে। রেমিট্যান্সে ধীরগতি। ডলার সংকটে চাপে আছে ব্যবসা-অর্থনীতি। কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি মানুষকে চরমভাবে ভোগাচ্ছে। এসব কারণেই কর্মসংস্থান কমছে।

বিবিএসের ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড লেবার উইং একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক এপ্রিল-জুন সময়ে ৩ লাখ ৯০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান কমেছে। এ সময়ে দেশের মোট কাজে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার। এর আগের প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কাজে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১১ লাখ। সুতরাং তিন মাসেই ৪ লাখের মতো কর্মসংস্থান কমেছে। বিবিএস বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক জেলা পর্যায়ের ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা থেকে প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে এ জরিপের তথ্য সংগ্রহ করে।

এ ব্যাপারে বিবিএসের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জরিপের তথ্য বলছে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। তবে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার আসল কারণ নিয়ে আমরা কাজ করিনি। সত্যিকার অর্থে কর্মসংস্থান কেন কমছে, এটা নিয়ে অন্য কোনো সংস্থা গবেষণা করে দেখতে পারে।’

জানা যায়, প্রায় দুই বছর ধরেই অর্থনীতি নানান সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবও পড়ে স্থানীয় অর্থনীতিতে। ডলার সংকট, পণ্য পরিবহনে বাড়তি খরচ, জিনিসপত্রের লাগামহীন দাম পুরো জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সর্বত্র। বিশেষ করে ব্যক্তি খাত, নতুন বিনিয়োগ, রপ্তানিতে এর চাপ পড়ে।

এরই মধ্যে ডলার সংকটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এতে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমেছে। ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা জানান, দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনের অনিশ্চয়তার বিষয়টিও বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রসারে বাধার কারণ হয়ে উঠেছে। উদ্যোক্তারা রয়েসয়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। ফলে মানুষের কাজের সুযোগ কমছে। ব্যবসা-রপ্তানিতেও এর প্রভাব পড়েছে।ব্যবসা-উদ্যোগ-রপ্তানি পরিস্থিতি খারাপ হলে স্বাভাবিকভাবেই কাজের সুযোগ কমে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বাবু বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি পণ্যের ক্রয়াদেশ কমছে। এটা অন্তত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

আরও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরাও জানান, অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। ডলারের কারণে জিনিসপত্রের পেছনে খরচ বেড়েছে। ব্যবসায় মুনাফা কমেছে। ফলে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান নতুন কাজে কাউকে নিয়োগ দিচ্ছে না, আবার কেউ কেউ ছাঁটাইও করেছে।

জরিপের তথ্য বলছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ছিল ৬১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তা নেমে এসেছে ৬০ দশমিক ৭৪ শতাংশে। এ সময় শিল্প খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ১ কোটি ২২ লাখ থেকে কমে ১ কোটি ২১ লাখে নেমে এসেছে। তবে সেবা খাতে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ৫ লাখ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত