Ajker Patrika

স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা

ভারতে রপ্তানির সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে

  • দুই দফায় ভারত নিষিদ্ধ করল ১৭টি পণ্য
  • ভারতে রপ্তানির প্রায় পুরোটাই যেত স্থলবন্দর দিয়ে
  • রপ্তানি কমার পাশাপাশি বাড়ছে ব্যয়ও
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
ভারতে রপ্তানির সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে

মাসদেড়েক আগে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে আট ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে ভারত। নিষেধাজ্ঞার এ তালিকায় নতুন করে পাট ও ওভেন কাপড়সহ ৯ ধরনের পণ্য যুক্ত করেছে দেশটি। ভারতে বাংলাদেশ থেকে যে ২ বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি হয়, তার সিংহভাগই নিষেধাজ্ঞার পণ্যের তালিকায় পড়ে গেছে। আবার এসব পণ্যের প্রায় পুরোটাই স্থলবন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি করা হয়। ফলে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে এর মধ্যে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি কমেছে। আর সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করায় ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ বেড়েছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ভারত অনেক দিন ধরে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। দুই বছর ধরে তা একটু একটু করে কমছে। আর এখনকার পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি রপ্তানিকে আরও সংকটে ফেলে দেবে।

জানা যায়, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে গত শুক্রবার ভারতের কর্তৃপক্ষ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নয়টি পণ্য ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, একাধিক ভাঁজের বোনা (ওভেন) কাপড়, একক শণ সুতা, পাটের একক সুতা ও বিশেষ তিন ধরনের কাপড় রয়েছে এ তালিকায়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, ভারত নতুন করে যে ৯টি পণ্যের ওপর স্থলবন্দর নিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে, এসব পণ্য থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ১৫০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, যার প্রায় সবটাই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পাঠানো হয়েছিল।

তবে ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে যাওয়া বাংলাদেশি পণ্য এবং নভশেবা সমুদ্রবন্দরের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

এর আগে গত ১৭ মে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক পণ্য, ফলমূল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, কোমল পানীয়, সুতা, প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী, কাঠের ফার্নিচারসহ নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানিতে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত।

তার আগে ৯ এপ্রিল নেপাল ও ভুটান ছাড়া অন্য কোনো দেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও বাতিল করে দিল্লি।

দেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল। দেশীয় এ প্রতিষ্ঠানটি বছরে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে ভারতে। এই রপ্তানির পুরোটাই ভোমরা, আখাউড়া, বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো হতো। স্থলবন্দর বন্ধ হওয়ার পর থেকে এ রপ্তানির ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে এখন যেটুকু রপ্তানি হচ্ছে, তাতেও ১০ শতাংশের বেশি বাড়তি খরচ লাগছে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এখন শুধু ভোমরা স্থলবন্দরটাই ব্যবহার করতে পারছি। এ বন্দর দিয়ে আগে শুধু কলকাতা ও দার্জিলিংয়ের আশপাশের অঞ্চলে রপ্তানি হতো। কিন্তু এখন এখান দিয়ে প্রবেশ করে সেভেন সিস্টার্সের রাজ্যগুলোতেও পণ্য নিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগছে। আগে এক দিনেই বিভিন্ন রাজ্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারতাম আমরা। শুধু সময়ই নয়, খরচও বেড়েছে ১০-১৫ শতাংশ।’

তৌহিদুজ্জামান আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের ৩০ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। যদি এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকে তবে বছর শেষে আমাদের খাদ্যপণ্য খাতেই ২০০ কোটি টাকা রপ্তানি কমবে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, তৈরি পোশাকের পর ভারতে পাট ও পাটজাত পণ্যই বেশি যাচ্ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। যদিও ২০১৭ সালে দেশটি বাংলাদেশি পাটপণ্যে ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’ শুল্ক আরোপ করে, যা ২০২৩ সালে আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর শেখ শামসুল আবেদিন জানান, ভারতের নতুন সিদ্ধান্তের প্রভাব দেশের পাটশিল্পে কতটা পড়বে, তারা সেটি বিশ্লেষণ করছে। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে কাঁচা পাট রপ্তানি হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। তবে স্থলবন্দর না হলে নৌপথ দিয়ে কীভাবে রপ্তানি চালু রাখা যায়, সে আলোচনা এর মধ্যেই শুরু হয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাৎসরিক বাণিজ্যের পরিমাণ সাড়ে ১২ থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারত রপ্তানি করে সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যার অধিকাংশই তৈরি পোশাক খাতের। এ ছাড়া প্লাস্টিক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পাট, চামড়া, সুতা, মাছসহ ৯০-১০০ ধরনের পণ্য রয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে মোট ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। যার মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিই ছিল ৬৪৫ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া ওভেন, টেক্সটাইল, পেপার ইয়ার্ন রপ্তানি হয় ১৯০ মিলিয়ন ডলার।

নানা বিধিনিষেধে ভারতে রপ্তানি আগে থেকে কমতির ধারায় ছিল। ২০২২ সালে ভরতে রপ্তানি ছিল ২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালে কমে ১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

পোশাক খাতের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ইতিমধ্যে তাঁরা ভারত হয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানির বিকল্প পথ্য তৈরি করেছেন। তাই তৈরি পোশাক খাতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। শুধু ভারতে যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হতো, তা বাড়তি খরচ দিয়ে সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে পাঠাতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগের নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা আমরা কটিয়ে উঠেছি। বিকল্প হিসেবে সিলেট দিয়ে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাচ্ছি। আর নতুন করে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাতে তৈরি পোশাক খাতে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।’

সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই এসব পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্যই বেশি ক্ষতিকর হবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পোশাকের পর পাট রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমার মনে হয়, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত আমাদের স্বার্থেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

অপারেশন সিঁদুরে নেতৃত্ব দেওয়া অফিসার হচ্ছেন ভারতের র-এর প্রধান

পিআর পদ্ধতিতে ভোটাররা জানবেন না কে তাঁর এমপি, এটি বাংলাদেশের জন্য অনুপযুক্ত: সালাহউদ্দিন

নীলফামারীতে 'আটক' কুমিল্লার দুই সাংবাদিক

ডেঙ্গুতে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তার মৃত্যু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত