Ajker Patrika

মালয়েশিয়া দিল সুখবর, ক্রোয়েশিয়া নিয়ে শঙ্কা

  • আটকে যাওয়া ৭ হাজার ৯৬৪ কর্মীকে নিতে রাজি মালয়েশিয়া।
  • তাঁরা যাবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় বোয়েসেলের মাধ্যমে।
  • বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কাজের অনুমতিপত্র ও ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে ক্রোয়েশিয়া।
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের প্রায় ১৮ হাজার কর্মীর গত বছর ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। নানান জটিলতায় তাঁদের যাওয়া হয়নি। এর মধ্যে ৭ হাজার ৯৬৪ জন প্রথম ধাপে দেশটিতে যেতে পারবেন বলে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। বৈদেশিক শ্রমবাজার নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে এমন সুখবর এলেও ক্রোয়েশিয়া নিয়ে দিয়েছে নতুন শঙ্কা। দেশটি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কাজের অনুমতিপত্র ও ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। রিক্রুটিং এজেন্সি ও কর্মী ভিসা পাওয়া কিছু বাংলাদেশির অপতৎপরতার জন্য এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আলম গতকাল সোমবার এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান গত ডিসেম্বরে ১৮ হাজার কর্মীর যাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হওয়ার বিষয়টি দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন ইসমাইলকে জানিয়েছিলেন।

সাইফুদ্দিন পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের কর্মীদের নেওয়ার জন্য যাচাই-বাছাই করতে হাইকমিশন ও মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের সমন্বয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। এই কমিটি গত এক মাসে দুটি বৈঠকে বসে। মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর কমিটি ১৮ হাজার কর্মীর মধ্যে ৭ হাজার ৯৬৪ জনকে প্রথম ধাপে দেশটিতে যাওয়ার জন্য বাছাই করে।

কবে নাগাদ ও কীভাবে এই ৭ হাজার ৯৬৪ জন কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারবেন—এই প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, এটা কারিগরি কমিটি ঠিক করছে।

কীভাবে এই ৭ হাজার ৯৬৪ জন কর্মীকে বাছাই করা হয়েছে—এমন প্রশ্নে একজন ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক আজকের পত্রিকাকে জানান, গত বছর মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে যেসব কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার বৈধ ভিসা ছিল, তাঁদের এ তালিকায় নেওয়া হয়েছে। তাঁদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় বোয়েসেলের (বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লি.) মাধ্যমে যতটা সম্ভব কম খরচে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই প্রক্রিয়ায় কোনো বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্টকে যুক্ত করা হবে না।

১৮ হাজার কর্মীর মধ্যে বাদ পড়া আরও ১০ হাজার কর্মীর কী হবে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, ৭ হাজার ৯৬৪ জনের যাওয়া চূড়ান্ত হয়ে গেলে বাকিদের বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে।

এদিকে ক্রোয়েশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত অনাবাসী রাষ্ট্রদূত তারেক মোহাম্মদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠানো এক চিঠিতে ক্রোয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে শঙ্কার বিষয়টি জানিয়েছেন।

২৩ জানুয়ারি পাঠানো চিঠিতে রাষ্ট্রদূত জানান, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অপতৎপরতার কারণে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কাজের অনুমতিপত্র ও ভিসা আর দেওয়া হবে না বলে জেনেছে দূতাবাস। চিঠিতে বলা হয়, ২০২৪ সালে ক্রোয়েশিয়া বাংলাদেশের ১২ হাজার ৪০০ নাগরিককে কাজের অনুমতিপত্র ও ভিসা দেয়। এর মধ্যে ৮ হাজারই ক্রোয়েশিয়ায় যায়নি। বাকি ৪ হাজার ৪০০ ব্যক্তির মধ্যে অর্ধেক দেশটিতে কাজে থাকতে পারে। ক্রোয়েশিয়ায় কাজের অনুমতিপত্র নিয়ে সেনজেনভুক্ত অন্য দেশে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক অবৈধভাবে কাজ করায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। বেআইনি অভিবাসন বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নিতেও ইইউ ক্রোয়েশিয়া সরকারকে বলেছে।

রাষ্ট্রদূত তারেক মোহাম্মদ জানান, বর্তমানে ৬ থেকে ৭ হাজার বাংলাদেশি ক্রোয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে থাকতে পারেন। যাঁরা প্রধানত নির্মাণ খাতে, রেস্তোরাঁয় ও খাবার সরবরাহসহ নানান কাজ করে থাকেন। দেশটিতে বিদেশি কর্মীদের জন্য কাজের পরিবেশ ও বেতন-ভাতা সেনজেনভুক্ত অনেক দেশের চেয়ে ভালো। তারপরও ক্রোয়েশিয়া পৌঁছার পর বাংলাদেশিরা অন্য দেশে চলে যান।

রাষ্ট্রদূত জরুরি ভিত্তিতে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে কর্মী পাঠানো ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে নজরদারির জন্য একটি চুক্তি সইয়ের উদ্যোগ নেওয়ারও তাগিদ দেন। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে কর্মী পাঠানো ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে নজরদারির জন একটি চুক্তি সই করা দরকার বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মোহাম্মদ হেগ থেকে একই সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করে থাকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত