Ajker Patrika

দিন শেষ হতে থাকায় রপ্তানিকারকদের উদ্বেগ

  • পাল্টা শুল্কের স্থগিতাদেশ শেষ হতে মাত্র ১০ দিন
  • চলতি সপ্তাহেই সিদ্ধান্তের আশা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বিশ্বের বেশ কিছু দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছিল। সে সময়সীমা শেষ হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো চুক্তি বা সুরাহা না হওয়ায় চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে সরকার বলছে, এ বিষয়ে আলোচনা ও দর-কষাকষি চলছে।

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে আসছে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা অর্থাৎ বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এতে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ। নতুন হারের এ শুল্ক কার্যকরের তারিখ ছিল গত ৯ এপ্রিল। তবে ওই দিনই আবার যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের ওপর আরোপিত নতুন শুল্কহার কার্যকর করা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। সে স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৯ জুলাই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি সপ্তাহে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সে বৈঠকগুলোতেই সিদ্ধান্ত আসবে। তাঁরা জানান ইতিমধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) প্রস্তাবিত ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যাগ্রিমেন্ট’-এর খসড়ার জবাব দিয়েছে। জবাবে বেশ কয়েকটি শর্তে পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরও ন্যায্য একটি চুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করার পর উভয় দেশের মধ্যে কয়েক দফা সরাসরি ও অনলাইন বৈঠক এবং চিঠি চালাচালি হয়েছে। ইউএসটিআরের সঙ্গে ২১ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বৈঠক করে বাংলাদেশ। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ছয়টি বিষয় স্পষ্ট করে জানতে চাওয়া হয়। ৪ জুন চিঠি দিয়ে এসব বিষয়ে দেশটিকে স্পষ্ট করে জানানো হয়। এরপর ১২ জুন একটি পাল্টা শুল্ক চুক্তির খসড়া করা হয় এবং ১৭ জুন তা নিয়ে অনলাইন বৈঠক করা হয়। পরে ২৪ জুন ওই খসড়ায় কিছু সংশোধন করে ইউএসটিআরকে দেওয়া হয়।

দুই পক্ষের সর্বশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। সে আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউএসটিআরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চ।

খলিলুর রহমান এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা দলের সঙ্গে বাংলাদেশের সংলাপে খুব ভালো অগ্রগতি হয়েছে। উভয় পক্ষ দ্রুততম সময়ে চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে আন্তরিক চেষ্টা চালাচ্ছে।’

আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, আজ ২৯ জুন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে শিগগিরই সমাধান করা দরকার। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি আমাদের আরও সুনির্দিষ্ট এবং আরও সিরিয়াস হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।’

বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান অবশ্য দাবি করেছেন, পাল্টা শুল্কের বিষয়ে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। অন্য কোনো দেশ এত এগোতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘ইউএসটিআরের প্রতিটি চিঠির উত্তর দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে এবং সেটা ভালো কিছু হবে। আগামীকাল সোমবার বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ইতিমধ্যে রয়েছেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে।’

নিটওয়্যার শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘আমরা নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। গ্যাসের সংকট, এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনসহ নানা বাধা অতিক্রম করতে হচ্ছে আমাদের। এর মধ্যে যদি এই শুল্কের সমাধান দ্রুত না হয়, তবে রপ্তানি বিশাল চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ঠেকাতে ইতিমধ্যেই দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। ইউএসটিআরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় তা তুলে ধরেছেন খলিলুর রহমান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের অনুরোধে ইউক্রেন থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

একইভাবে বেসরকারি বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে। এ ছাড়া জ্বালানি বিভাগ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। গত এপ্রিলের পর থেকে এ পর্যন্ত স্পট মার্কেট (তাৎক্ষণিক ক্রয়) থেকে যে এলএনজি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগ নেওয়া হচ্ছে মার্কিন কোম্পানি থেকে।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে লবিস্ট প্রতিষ্ঠান (পেশাদার তদবিরকারী) নিয়োগ দিতে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কারণ বিষয়টি নিয়ে আমাদের উদ্বেগ বাড়ছে। সময় রয়েছে মাত্র ১০ দিন। অথচ মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা কত দূর এগিয়েছে, তার কিছুই আমরা জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

অপারেশন সিঁদুরে নেতৃত্ব দেওয়া অফিসার হচ্ছেন ভারতের র-এর প্রধান

পিআর পদ্ধতিতে ভোটাররা জানবেন না কে তাঁর এমপি, এটি বাংলাদেশের জন্য অনুপযুক্ত: সালাহউদ্দিন

নীলফামারীতে 'আটক' কুমিল্লার দুই সাংবাদিক

ডেঙ্গুতে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তার মৃত্যু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত