Ajker Patrika

সিলেট ওসমানী হাসপাতাল

ওয়ার্ডে ঢুকতে না দেওয়ায় ২ প্রসূতির বারান্দায় সন্তান প্রসব, ১ নবজাতকের মৃত্যু

সিলেট প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকতে না দেওয়ায় দুই প্রসূতি বারান্দায় সন্তান প্রসব করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে সেখানে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে হাসপাতালে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় এ ঘটনা ঘটে।

এক প্রসূতি ও তাঁর স্বজনদের অভিযোগ, কর্তব্যরত নার্সদের কাছে রোগীর অবস্থা গুরুতর জানানোর পরও তাঁরা সিরিয়াল ধরার নির্দেশ দিয়ে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বারবার অনুরোধ করার পরও তাঁদের কিছু করার নেই বলে জানান নার্সরা।

অপর প্রসূতির স্বজনেরা বলছেন, তাঁরা ওয়ার্ডে ভর্তির সব প্রক্রিয়া শেষে করে আসার পরও দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা রোগীকে ওয়ার্ডে ঢুকতে দেননি। বাধ্য হয়ে বারান্দায় অবস্থান করার সময় প্রসবব্যথা ওঠে ওই রোগীর।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, তাঁদের লোকবল কম এবং ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি রোগী ভর্তি এই ওয়ার্ডে। সে কারণে তাঁরা ওই দুই প্রসূতিকে ওয়ার্ডে জায়গা দিতে পারেননি।

বারান্দায় সন্তান প্রসব করা ওই দুই প্রসূতি হলেন গোলাপগঞ্জের বাউসি গ্রামের রতন দাসের স্ত্রী মিতালী দাস (২৫) ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাটিবহর গ্রামের মো. শাহিনের স্ত্রী সুমি বেগম (১৯)। দুজনেই পুত্রসন্তান জন্ম দেন। তবে সুমি বেগমের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দুই প্রসূতির স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, গতকাল বিকেল ৪টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে পৌঁছান সুমি ও মিতালী এবং তাঁদের স্বজনেরা। স্বজনেরা কর্মরত নার্সের কাছে গেলেও তাঁদের কথা শোনেননি। বরং সিরিয়াল ধরার নির্দেশ দিয়ে দুই নার্স নিজেদের মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এ অবস্থায় বসে থাকা একজন প্রসূতির চিৎকার ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বসা অবস্থাতেই তিনি একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। তখন উপস্থিত স্বজন ও অন্যরা দ্রুত আড়াল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

এর ১০ মিনিট পরে অপর নারীও একইভাবে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। প্রসবের পরে অবশ্য টনক নড়ে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত নার্সদের। আসেন একজন চিকিৎসকও। দুই প্রসূতিকে স্থান দেওয়া হয় ওয়ার্ডে। সন্তান জন্ম দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই সুমি বেগমের নবজাতকের মৃত্যু হয়।

প্রসূতি সুমি বেগম বলেন, ‘আমরা নিচতলায় ভর্তির কার্যক্রম শেষ করে ওয়ার্ডে এলে সিকিউরিটি গার্ড আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেননি। আমার গুরুতর অসুস্থতার কথা বারবার জানালেও তাঁরা আমার অবস্থা বুঝতে চাননি। পরে প্রসবব্যথা উঠলে বাইরেই আমার সন্তানের জন্ম হয়। এরপর নার্সরা আসেন এবং আমাকে ভেতরে নিয়ে যান। পরে আমার সন্তানেরও মৃত্যু হয়। চিকিৎসক পেলে হয়তো আমার সন্তানের মৃত্যু হতো না।’

এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে আমাদের লোকবল কম। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী এই ওয়ার্ডে। একসঙ্গে কয়েকজন রোগী থাকায় আগে যাঁরা আসছিলেন, তাঁদের ওয়ার্ডে ভর্তি করে সেবা দিচ্ছিলেন চিকিৎসকেরা। আর ওই দুই অন্তঃসত্ত্বা জানাননি যে, তাঁদের অবস্থা গুরুতর। এ কারণে তাঁরা আসার পরপরই রোগীর প্রসবব্যথা উঠেছে এবং এই সমস্যাটা হয়েছে। এখানে কারও কোনো ত্রুটি আছে কি না, আমরা দেখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত