Ajker Patrika

প্রতিটি বাড়িই একেকটি দ্বীপ

প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার
Thumbnail image

সবুজ-শ্যামল, শান্ত, ছায়াঘেরা, মনোরম এক জনপদ। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ, পাখির কোলাহল, ঝিঁঝির ডাক আর জোনাকির স্বপ্নিল ওড়াওড়ি। এমনই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের মোহনীয়, বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঢাকা বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যা ধরা দেয় নতুন রূপে, নতুন বৈশিষ্ট্যে। প্রকৃতির এমনই অপরূপ রূপে সাজানো এক নান্দনিক গ্রাম মৌলভীবাজারের অন্তেহরি।

কাউয়াদিঘি হাওরকে কেন্দ্র করে অন্তেহরি গ্রামে লোকবসতি গড়ে ওঠে প্রায় শত বছর আগে। জেলার রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বড় এই জলাভূমির অবস্থান। হাওরপাড়ের এ গ্রামটিতে বাস করে প্রায় ছয় হাজার মানুষ। অধিকাংশ গ্রামগুলোতে শুধু প্রকৃতির আচরণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়, বর্ষা সবকিছুর সঙ্গেই গ্রামের জীবনযাত্রার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ঋতুবদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় গ্রামের রং, রূপ, লাবণ্য।

শাপলা-শালুক আর হিজল-তমাল-করচের বন অন্য গ্রাম অন্তেহরিকে দিয়েছে স্বতন্ত্র এক রূপ। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জলাবদ্ধ থাকায় গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে জলের গ্রাম নামেও। বর্ষার শুরুতে এই গ্রামের খাল, বিল, পুকুর কিংবা গ্রামীণ রাস্তাঘাট সব একাকার হয়ে যায় হাওরের পানিতে। বিশেষ করে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জলের গ্রাম হিসেবে নিজেকে পূর্ণ রূপে আবিষ্কার করে অন্তেহরি। ইতিমধ্যে এই গ্রামটি ‘সোয়াম ভিলেজ অন্তেহরি’ নামে পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।

সিলেট থেকে অন্তেহরি গ্রামে ঘুরতে পর্যটক মিনহাজ মোরশেদ বলেন, ‘এখানে ভালো লাগার সব রসদ রয়েছে। হাওরের স্বচ্ছ পানি, পাখিদের কলকাকলি সব মিলিয়ে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি।’ 
গোছালো জলারবন ধরে পুরো গ্রামটি ঘুরে বেড়ানো যায় নৌকা দিয়েই। এখানে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যাতায়াতের মাধ্যমও কেবল নৌকা, যা দেখে মনে হতে পারে প্রতিটি বাড়িই যেন একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এই গ্রামের কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছেন জেলেরা। আবার কোথাও একেবারে ফাঁকা শুধু থইথই পানি। মাঝেমধ্যেই পথ আটকে দাঁড়াবে গাছের ডালপালা। যেতে হবে ওগুলো সরিয়েই।

তবে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে অন্তেহরি গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়ে যেতে বসেছে বলে জানালেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী রিপন দে। তিনি জানান, এখানে নানা সমস্যা রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চাইলে এই গ্রামকে আরও বেশি পর্যটকবান্ধব করে তুলতে পারতেন। এ ছাড়া দুই বছর আগেও এখানে প্রচুর শাপলা-শালুক দেখা যেত, কচুরিপানার স্তূপের কারণে এখন সেগুলো আর দেখা যায় না। 
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় সদস্য অমর দাশ জানালেন, জেলা প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে এই গ্রামকে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করে চারটি আকর্ষণীয় নৌকা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে এবং একটি ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে।

নাগরিক জীবনের দৈন্যতা ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য অন্তেহরি হতে পারে এক আদর্শ গ্রাম। মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে অন্তেহরি গ্রামের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। শহরের চাঁদনীঘাট ব্রিজসংলগ্ন জগতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজিচালিত অটোতে সরাসরি চলে যাওয়া যাবে অন্তেহরি বাজারে। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে ঘুরে দেখা যাবে পুরো গ্রাম। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত