Ajker Patrika

ছড়াবেষ্টিত গ্রামটি

আব্দুর রব, মৌলভীবাজার
ছড়াবেষ্টিত গ্রামটি

গ্রামবাসীর ধারণা, প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এই গ্রাম। বালিগাঁও মূলত কয়েকটি ছড়াবেষ্টিত গ্রাম। গ্রামের পূর্ব দিকে কুচিমুড়া ছড়া গিয়ে মিশেছে পলিভরা বিলে। বালুযুক্ত পুরানউলি ছড়া গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে উদনা ছড়া চালনা বিলের বুক চিরে বইছে। জনশ্রুতি আছে, এই ছড়াগুলোর তলদেশে বালু পাওয়া যেত বলে জনপদটির নাম হয়েছে বালিগাঁও। অতীতে গুতুমছড়া নামে একটি বালুযুক্ত ছড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যেত, আজ যা বিলুপ্ত। জানালেন, এই গ্রামের গল্পকার ও লেখক মহিদুর রহমান।

গ্রামের তিন দিকে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। এসব ফসলি জমির রয়েছে বিভিন্ন নাম। যেমন চালনা বিল, পলিভরা বিল, ফুটিবান্দ, গঙ্গাধরী, গুফরাপুর, বাবনীঘাট ইত্যাদি। এসব ছোট ছোট বিলে গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে ফসল ফলায়। ফসলের পাশাপাশি বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। বর্ষা যখন শেষ হয়ে আসে, শীতের শুরুতে বিলগুলোতে মাছ ধরার অঘোষিত উৎসব শুরু হয়ে যায়।

গ্রামের বিশাল একটি অংশ সুফিবাদে বিশ্বাসী। গ্রামে কয়েকজন অলির মাজার রয়েছে। মাজারগুলোয় ওরসকে কেন্দ্র করে গ্রামে মেলা বসে। গ্রামবাসীর কাছে এসব ওরস উৎসবের মতো।

গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষ প্রবাসে থাকেন। সেখান থেকে তাঁরা বিপুল অর্থ পাঠান। অনেকে ইউরোপ-আমেরিকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে পরিবার তথা এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে। বলা চলে, প্রবাসীরাই এখন গ্রামের অর্থনীতির চালিকাশক্তি।

প্রবাসী ছাড়াও গ্রামে সরকারি চাকুরে, ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। গ্রামের মানুষ বেশ কর্মঠ। পুরুষেরা খেতখামার আর নারীরা গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত। নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য গ্রামে রয়েছে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র।

আশির দশকে গ্রামটি নিরক্ষরমুক্ত হয়। এখন এ গ্রামে নিরক্ষর লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রয়েছেন শিক্ষক, চিকিৎসক ও আইনজীবী। ১৯৪৫ সালে গ্রামে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল বালিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে এলাকার তরুণ ও প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় একটি আধুনিক হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু হবে এ বছর। পাঠদান শুরু হবে ২০২৩ থেকে।

মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাকামী গ্রামবাসীর আছে উল্লেখযোগ্য অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের দানু মিয়ার বাড়ি, বড়বাড়ি, জমাদার বাড়িসহ বিভিন্ন বাড়িতে মুক্তিবাহিনী গোপনে আশ্রয় নিত। এর ফলে প্রাণ দিতে হয়েছে দানু মিয়াকে। নিজ বাড়িতে মুক্তিবাহিনীকে আশ্রয় দেওয়া ছিল তাঁর অপরাধ, জানান শহীদ দানু মিয়ার দ্বিতীয় সন্তান আতাউর রহমান মধু।

বিকশিত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে শহীদ দানু মিয়া ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহীদ দানু মিয়া স্মৃতি পাঠাগার। গ্রামের তরুণেরা পত্রিকা পাঠ, বই পড়ায় বেশ মনোযোগী। জানান, পাঠাগারের পরিচালক আবদুল হান্নান।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত গ্রামের তরুণ-তরুণীরা প্রতি বিজয় দিবসে তিন দিনব্যাপী বিজয় উৎসবের আয়োজন করেন। গ্রামীণ মেলা, লোকজ উৎসব এবং প্রায় হারিয়ে যাওয়া সব ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন থাকে তাতে। সাহিত্য-সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও আনন্দ বিনোদনে বালিগাঁও অগ্রসর গ্রাম হিসেবে জেলাব্যাপী পরিচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত