Ajker Patrika

মুজিবনগরে ঘর তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ, ইউএনও'র অস্বীকার

প্রতিনিধি
মুজিবনগরে ঘর তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ, ইউএনও'র অস্বীকার

শাল্লা: চারদিকে শুধু পানি আর পানি। ডুবে গেছে ফসলের মাঠ, সবজি ক্ষেত। পানিতে চতুর্দিক শুধু থৈ থৈ করছে। কিছু দুর পরপর একেকটি গ্রাম। আর এই গ্রামগুলোকে দুর থেকে দেখলে মনে হয় ছোট ছোট দ্বীপ। এই দ্বীপের মধ্যেই গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে হাওরপাড়ে শুরু হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ। শাল্লা উপজেলার মুজিবনগর গ্রামে সরকারি প্রকল্পের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে নির্মাণাধীন কয়েকটি ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

প্রকল্পের আওতায় ভেড়া মোহনার পাড়ে ১১৬টি ঘর নির্মাণ করে মুজিবনগর নামে একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রামের অনেকেই পূর্বের জায়গা জমি বিক্রি করে এখানে এসে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে আশ্রয় নেন। কিন্তু এখানে এসেও দুর্ভোগ থেমে থাকেনি। প্রকল্পের ১০০টি ঘরের কাজ সমাপ্তি ঘোষণা করা হলেও প্রত্যেকটি ঘরে বসবাসের অনুপযোগী। ঝড় তুফান আসলেই ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকেন গ্রামের লোকজন। বৃষ্টির পানিতে ঘরে হাঁটু পানি জমে থাকে। এছাড়াও এই প্রকল্পের ঘর নির্মাণ নিয়েও রয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারিভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলায় ১ হাজার ৪৩৫ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ঘর পাচ্ছে। ২ শতাংশ খাসজমিতে দুই কক্ষের সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হবে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে ১১৬টি ঘর এক জায়গায় নির্মাণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মুজিবনগর গ্রাম প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী মোশাইদ মিয়া, আহান নুর ও তাহের মিয়া বলেন, এই ঘরের জন্য আমরা সর্ব শান্ত হয়েছি। ঘর নির্মাণের জন্য সিমেন্ট, কাঠ ও মাটি ভরাটের কাজটুকু আমাদের নিজেদের টাকায় করতে হয়েছে। অথচ সরকারি ঘর বিনা টাকায় দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন পন্থায় টাকা খরচ করানো হয়েছে।

মুজিবনগর গ্রামে ঘর পেয়েছেন মৃত আরশ আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম। গত ৩০ মে নির্মাণাধীন ঘরটির দেয়াল ভেঙে পড়ে। পরে সেটি মেরামত করে দেওয়া হয়। ফাতেমা বেগম বলেন, সিমেন্ট কম ও বালু বেশি দেওয়া হচ্ছে। ঘরের নির্মাণকাজ চলাকালে দক্ষিণ পাশের দেয়াল ধসে পড়ে। পরে ইউএনও এসে ঠিক করে দিয়েছেন। ঘরের কাঠ আবার আমাদের টাকায় কিনতে হয়েছে। এছাড়াও সিমেন্টও আলাদাভাবে আমাদের কাছ থেকে ঠিকাদার নিয়েছে। নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের জন্য তিনি ধারদেনা করে ঠিকাদারকে সাত হাজার টাকাও দিয়েছেন। তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঘর নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদার লাকু দাস। সুবিধাভোগী শাপলা বেগমের ছেলে নুর হোসেন বলেন, ঘর নির্মাণে ঠিকাদার তাঁর কাছে পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছেন। টাকা না দেওয়ায় নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

আবুল কাশেম নামের আরেক সুবিধাভোগী বলেন, ঘরের মেঝে নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদার সিমেন্ট কিনে দিতে বলছেন। ঘরের চালায় ব্যবহার করা কাঠ এখনই ভেঙে পড়ছে। তিন ইটের ভিত্তি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ঘর। দেয়ালের ওপর লিন্টন না করেই টিন লাগানো হয়েছে।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মোক্তাদির হোসেন বলেন, নতুন মাটির কারণে নির্মাণকাজ চলাকালে একটি ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছিল। পরে ওই ঘরের দেয়াল ভালোভাবে নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণে কোনো টাকা আদায় করা হয়নি। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে বালু মাটি হওয়ায় কয়েকটি ঘর ধসে গেছে। এগুলো মেরামতের জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত