Ajker Patrika

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল

অনুপস্থিতিই যেন নিয়ম, সেবাবঞ্চিত রোগীরা

  • দুদিনের উপস্থিতির প্রমাণপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, অনেকে অনুপস্থিত
  • ১৮৬ চিকিৎসক, কর্মীর মধ্যে গত রোববার উপস্থিত ছিলেন ১২৩ জন
  • গত সোমবার উপস্থিত ছিলেন ৮৩ জন, ১০২ জন অনুপস্থিত
  • আউটডোরে অপেক্ষায় থাকেন রোগীরা, দেখা মেলে না চিকিৎসকের
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ০৮: ৪০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে রোগীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, আউটডোরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলে না। চিকিৎসক এলেও চেম্বারে বসেন বেলা ১টার পর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশির ভাগই নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। যাঁরা হাসপাতালে আসেন, অফিস শুরুর সময় তাঁরা বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার মেশিনে পাঞ্চ করলেও হাসপাতাল ছাড়ার সময় পাঞ্চ করেন না। ফলে হাসপাতাল ছাড়ার সময়ের রেকর্ড থাকছে না।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত অফিস করেন। কিন্তু বায়োমেট্রিক মেশিনে সমস্যার কারণে অনুপস্থিতির সংখ্যা বেশি।

গত সপ্তাহের রোববার ও সোমবার হাসপাতালের সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতির প্রমাণপত্র এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, ১৮৬ চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে গত রোববার উপস্থিত ছিলেন ১২৩ জন, অনুপস্থিত ৬২ জন। ছুটিতে ছিলেন একজন। গড় উপস্থিতির হার ৬৬ ভাগ। পরদিন সোমবার উপস্থিত ছিলেন ৮৩ জন, অনুপস্থিত ১০২ জন। এদিনও একজন ছুটিতে ছিলেন। গড় উপস্থিতি ছিল ৪৫ ভাগ।

উপস্থিতি প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, সোমবার ২৮ চিকিৎসকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৯ জন। অনুপস্থিত ছিলেন ১৯ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. বিপুল চন্দ্র ঘোষ, ডা. সর্বানী বিশ্বাস, ডা. আশুতোষ সিংহ, জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. এ এস এম বদরুল ইসলাম, ডা. লিপিকা দাস, ডা. লোপা রানী সরকার, ডা. মোহাম্মদ আলী, ডা. সুমন রায় চৌধুরী, ডা. অলক কুমার সাহা, ডা. চিন্ময় সাহা পোদ্দার, ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী সরকার, ডা. মো. মিসবাহ উদ্দিন, ডা. মো. নিরুপম রায় চৌধুরী, ডা. মোহাম্মদ আলী আশরাফ সোহাগ, ডা. তৌকির আহমেদ ও ডা. মোহাম্মদ রেজাউল কবির।

হাসপাতালে নার্স রয়েছেন ১২৭ জন। এর মধ্যে সোমবার উপস্থিত ছিলেন ৫২ জন। ৭৫ জনই অনুপস্থিত।

গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার আউটডোরে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন পৌর শহরের ওয়েজখালীর বাসিন্দা মো. মুজিবুর মিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি রুমের সামনে রোগীরা বসে আছেন সকাল ১০টা থেকে। এখন বাজে দুপুর সাড়ে ১২টা। কোনো চিকিৎসক আসেননি।’

এ ব্যাপারে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা ডা. বিষ্ণু প্রসাদ চন্দ বলেন, হাসপাতালে ৫২ ভাগ চিকিৎসকের পদ শূন্য। এ ছাড়াও পুরো হাসপাতালের প্রায় ৫৭ ভাগ জনবলের পদ খালি। সকালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রোগী দেখেন। এ জন্য আউটডোরে যেতে বিলম্ব হয়।

সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহসভাপতি অ্যাডভোকেট খলিল রহমান বলেন, ‘অনুপস্থিতি নিয়ে যে অভিযোগ, সেটি নতুন নয়। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য হলো পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। কেউ কেউ ভালো করছেন, আবার অনেকের অবহেলা আছে। এটি নিশ্চিত করতে না পারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দুর্বলতা।’

সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুনাজ্জির হোসেন সুজন বলেন, ‘সুনামগঞ্জে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকে অনিয়মিত। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নিজেও নিয়মিত অফিসে আসেন না। তাহলে সবাইকে দেখভাল করবেন কীভাবে?’

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন বায়োমেট্রিক মেশিন নষ্ট ছিল। বিদ্যুৎ না থাকলে ফিঙ্গার দেওয়া যায় না। অনেকেই হাসপাতালে আসেন, তবে বায়োমেট্রিক মেশিনে ফিঙ্গার দেন না। আগামীতে আসা-যাওয়ার সময় বায়োমেট্রিক মেশিনে ফিঙ্গার দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন বলেই কি জামিন পেলেন না অধ্যাপক আনোয়ারা

হঠাৎ ব্যাংকের ভেতরে সবাই অচেতন

সৌদি আরবে পুরুষের ‘অবাধ্য’ হলে নারীর যে পরিণতি হয়

নাহিদের সাবেক পিএ আতিক মোর্শেদের স্ত্রী জুঁইকে দুদকে তলব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত