Ajker Patrika

দুই দফা তদন্তে বদলির সুপারিশ, তবুও বহাল প্রধান শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ২২: ৪১
দুই দফা তদন্তে বদলির সুপারিশ, তবুও বহাল প্রধান শিক্ষক

২০ বছর ধরে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গড়ে তুলেছেন প্রভাব বলয়। গ্রামের মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছেন। তিনি হলেন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সুধন খল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র তালুকদার। তাঁর বিরুদ্ধে শেখ রাসেল কর্নার স্থাপন, বিদ্যালয় এসএমসির সভাপতির সই জাল করাসহ বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে দুই দফা তদন্তে তাঁকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করা হয়েছে।

 ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে দেওয়া প্রতিবেদনে ‘প্রধান শিক্ষকের দাপ্তরিক কাজে গাফিলতি ও অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম, অসামঞ্জস্যতা রয়েছে’ বলে উল্লেখ করেন। প্রতিবেদনটি লিটন তালুকদারের বিরুদ্ধে যাওয়ায় সন্তুষ্ট হননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুব জামানকে পুনরায় তদন্তের দায়িত্ব দেন।

চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি মাহবুব জামানের সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রধান শিক্ষক লিটনের বিরুদ্ধে অনিয়মিত উপস্থিতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি সত্য নয়। তবে ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে লিটন তালুকদার সুধন খল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মরত। অনেক দিন থাকার ফলে এলাকায় তাঁর প্রভাব বলয় সৃষ্টি হয়েছে। একটি পক্ষকে তিনি কাছে টেনে নিয়েছেন। অন্যপক্ষকে প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি করেছেন। এতে বিদ্যালয় পরিচালনার কাজে বিঘ্ন ঘটছে। প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে তাঁকে অন্যত্র বদলি করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’ এতে অখুশি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বিষয়টি চাপা দিয়ে রাখেন। 

সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকেও ওই প্রধান শিক্ষককে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। লিটন চন্দ্র তালুকদারের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা-অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করার কারণে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ ছাড়া পদায়ন বাণিজ্যসহ অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও। উপায় না পেয়ে গ্রামের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ৯ এপ্রিল সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সত্যব্রত তালুকদার। অনুলিপি দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনারকেও। ১৪ এপ্রিল সহকারী বিভাগীয় কমিশনার অনুপমা দাস সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালককে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র তালুকদার বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। সভাপতি বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ করা টাকায় ভাগ চেয়েছিলেন, আমি দিতে সম্মত হইনি বলেই তিনি এসব করছেন।’

সভাপতি সত্যব্রত তালুকদার বলেন, ‘গ্রামবাসী জানেন আমাদের বিষয়ে। আমি বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়াতে প্রধান শিক্ষক এসব কথা বলছেন। তিনি অনেক দিন ধরে সময় মতো বিদ্যালয়ে আসেন না; এখনো এ রকম চলছে।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকদের বদলি করার এখতিয়ার আমার নাই। এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা, সত্য হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’

সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘অভিযোগটি পেয়েছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, দাতা ও বিভিন্ন সদস্য শিক্ষক লিটন চন্দ্র তালুকদারের স্বেচ্ছাচারিতা-অনিয়মের বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তা ও দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত