Ajker Patrika

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম চলে যাওয়ার আজ ১২ বছর

রুম্মান আহমদ, দিরাই (সুনামগঞ্জ) 
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ৩১
Thumbnail image

আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না চলে না, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান, কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি, কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া, আমি কূলহারা কলঙ্কিনী, আমি বাংলা মায়ের ছেলে, কোন মেস্তরী নাও বানাইলোসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। আজ এই গুণী সাধকের ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। 

একুশে পদকপ্রাপ্ত এই বাউল সম্রাট ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। গুণী এই সাধকের মৃত্যুর ১২ বছরেও তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। স্বপ্ন ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠিত শাহ আব্দুল করিম সংগীতালয় থেকে নিজের লেখা গানগুলোর সঠিক সুরে ও সঠিক বাণীতে প্রচার করা। কিন্তু গানের শিক্ষক, যন্ত্রপাতি এবং ভবন না থাকায় তাঁর স্বপ্নগুলো স্বপ্ন থেকেই গেল। 

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইব্রাহীম আলী ও মাতার নাম নাইওরজান। দারিদ্র্য ও জীবনসংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সংগীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তাঁর স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। যাকে তিনি আদর করে ‘সরলা’ নামে ডাকতেন। 

ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তাঁর গান কথা বলে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি আধ্যাত্মিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। তিনি শরিয়ত, মারফতি, নবুয়ত, বেলায়াসহ সব ধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন। 

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তাঁর ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। তিনি কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী তাঁর গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। 

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের এ পর্যন্ত ৬টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হলো-আফতাব সংগীত, গণ সংগীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে এবং দোল মেলা। 

গুণী এই সাধক স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসহ দেশ বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার। 

এদিকে বাউল সম্রাটের ১২ তম প্রয়াণ দিবসে শাহ আবদুল করিম পরিষদের উদ্যোগে তাঁর নিজ বাড়ি উজানধলে মিলাদ মাহফিল, জীবন দর্শন নিয়ে আলোচনা ও করিম গীতির আসরের আয়োজন করা হয়েছে। 

শাহ আব্দুল করিম পরিষদ দিরাই শাখার সভাপতি আপেল মাহমুদ বলেন, শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্পপরিসরে বাউল সম্রাটের নিজ বাড়িতে মিলাদ মাহফিল, করিম গীতির আসর অনুষ্ঠিত হবে। 

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের একমাত্র পুত্র শাহ নুর জালাল বলেন, প্রত্যেক বছর আমার বাবার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের নিজ উদ্যোগে পালন করে থাকি। এতে সরকারিভাবে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতায় পাই না। এসব অনুষ্ঠান করতে আমাদের বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে বাড়ির পাশে মাটি ভরাটের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে এখনোও পাইনি। আমার বাবার নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত শাহ আব্দুল করিম সংগীতালয়টি চালু করা সম্ভব হয়নি। আমার বাবার ইচ্ছা ছিল যে এই সংগীতালয় থেকে তাঁর লেখা গানগুলোর সঠিক সুরে ও সঠিক বাণীতে যদি প্রচার হতো তাহলে তাঁর সৃষ্টিটা ঠিক থাকত। কিন্তু গানের শিক্ষক, যন্ত্রপাতি এবং ভবন না থাকায় সংগীতালয়ের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। 

এ ব্যাপারে করিম পুত্র শাহ নুর জালাল সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত