Ajker Patrika

‘বিয়েশাদি ছাড়া মাছ-মাংস কপালে জোটে না’

মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
‘বিয়েশাদি ছাড়া মাছ-মাংস কপালে জোটে না’

মৌলভীবাজারে তেল, চাল, ডালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে দফায় দফায় মাছ-মাংস ও ডিমের দাম বেড়েছে। ব্যয় বাড়লেও আয় না বাড়ায় এসব এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সপ্তাহে একদিনও মাছ মাংস বা ডিম জুটছে না নিম্ন আয়ের মানুষদের। ডাল-ভাতের জন্য নিয়মিত জীবনযুদ্ধ করতে হচ্ছে। ভিন্ন পেশার একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা যায়। 

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বিয়ে-ওয়ালিয়া ইত্যাদিতে একমাত্র ভরসা ছিল ডিম ও ব্রয়লারের মুরগি। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে এত অধিক হাড়ে ব্রয়লারের মুরগির দাম বেড়েছে যা আর সাধ্যের মধ্যে নেই। কিছুদিন আগেও ১৩০ টাকা কেজি ছিল আর এখন ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একটা মুরগি কিনতে গেলে ৫০০ টাকা লাগে। 

একই সঙ্গে বাজারে সবচেয়ে কমদামি মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি হাঁস বা মুরগির ডিম ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে শীতের সবজি অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান সময়ে ডাল-ভাত খাওয়া অনেক কষ্টের আর মাছ মাংস খাওয়ার সাধ্য নেই। কয়েক দিন পরেই রোজা মাস শুরু হবে। বেঁচে থাকার জন্য অনেকে কষ্ট করেও ডাল-ভাত দিতে পারছে না পরিবারের সদস্যদের মুখে। 

আজ বুধবার সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি ১৩০ থেকে ২৪৫ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৩ টাকা, দেশি মুরগি আকার বেঁধে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, গরুর মাংস ৬৫০ থেকে বেড়ে ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মাছের বাজারে দেখা যায়, পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। 

কমলগঞ্জ উপজেলার শহীদ নগরেরএকটি মুদি দোকানতবে হঠাৎ করে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে জেলার ফিড ব্যবসায়ীরা জানান, ফিডের পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে এ জন্য মুরগির দাম বেড়েছে। গত কয়েক দিন আগেও ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ফিডে ১৬০ টাকা বেড়েছে। আর গত এক বছরের প্রতি বস্তায় ৮৫০ টাকা বেড়েছে। শুধু ফিড নয় ফিডের পাশাপাশি বাচ্চা, ওষুধেরও দাম বেড়েছে। 

জেলা শহরের রিকশাচালক কাদির মিয়া বলেন, ‘গত এক মাসে একদিন মুরগির মাংস খেয়েছি। ছেলে-মেয়েরা বলে মাছ-মুরগি নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি নিতে পারি না।’ 

দিনমজুর ইউসুব আলী বলেন, ‘সপ্তাহে তিন চারদিন কাজ করি। এই টাকা দিয়ে ডাল ভাত জোগান দিতে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের মতো মানুষেরা অনাহারে একদিন মরেই যাবে।’ 

চা শ্রমিক নাইডু বলেন, ‘আমার জন্মের পর থেকে শুধু রাতে হাফ প্লেট ভাত আর সারা দিনে একটা রুটি ছাড়া আর কিছুই কপালে জুটে না।’ 

সবজি ব্যবসায়ী খালিদ মিয়া বলেন, ‘সবজি বেঁচে অনেক কষ্ট করে পরিবার চালাচ্ছি। আমাদের অবস্থা যেন নুন আনতে পান্তা ফুরায়।’ 

মোদির দোকানে কর্মচারী ছদরুল মিয়া বলেন, ‘৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। এই টাকা দিয়ে মা-বাবার ওষুধ, পরিবারে খরচ কীভাবে চালানো সম্ভব। মাছ-মাংস একমাত্র বিয়েশাদি ছাড়া আর চোখে দেখা হয় না।’ 

শিক্ষক শামসুল আহমদ বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো অনেক কষ্ট করে চলছি। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা ও পরিবারের খরচ করে মাস শেষে ঋণ করে চলতে হয়। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, রমজানের আগে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার মনিটরিং করা হবে। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি ও মাংসের দাম কি কারণে বাড়ানো হয়েছে এর ওপর নজরদারি করা হবে। এ ছাড়া যে সব পুণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বনশ্রীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার আমিনুল ছাত্রলীগের, সুমন শ্রমিক দলের নেতা

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

মুসলিম ছেলে বিয়ে করে পরিবারহারা, স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে ঢাকায় এসে ধর্ষণের শিকার

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

মাদারীপুরে ৩ খুন: ঘটনার পেছনে পা ভাঙার প্রতিশোধসহ ৩ কারণ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত