Ajker Patrika

বাজেটে এবারও উপেক্ষিত চা শ্রমিকেরা

কাজল সরকার
আপডেট : ০৪ জুন ২০২১, ১৫: ১২
বাজেটে এবারও উপেক্ষিত চা শ্রমিকেরা

হবিগঞ্জ: প্রতি বছরই বাজেটের আগে নিজেদের কিছু দাবি দাওয়া তুলে ধরেন চা শ্রমিকেরা। তবে প্রতিবারই বঞ্চিত থাকতে হয় তাদের।

এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে বাজেট ঘোষণা করলেন তাতে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে হতাশ শ্রমিকেরা।

চা শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জীবনমানের সব সূচকে পিছিয়ে থাকা চা শ্রমিকদের উন্নয়নে এবারের বাজেটে ১৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। এই জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা নিশ্চিত, ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষা ও প্রতিটি চা বাগানে আইসিটি সেন্টার স্থাপনের জন্য এই বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল। এ ছাড়াও চা শিল্পকে পুনরায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের সবশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী দেশে চা বাগানের সংখ্যা ২৪৬টি এবং চা শ্রমিকের সংখ্যা মোট ২ লাখ ১১ হাজার ৮৪২ জন।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিবন্ধন করা বাগানের সংখ্যা ১৬৭ টি। অন্যদিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে বাগানের সংখ্যা ২৩১টি এবং নিয়মিত শ্রমিক ১ লাখ ৩ হাজার। তাদের দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন প্রায় ১০ লাখ।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘বাংলাদেশে চা শ্রমিকেরা অবহেলিত একটি জনগোষ্ঠী। আমরা প্রতি বছর পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে আলাদা বরাদ্দের দাবি জানাই। কিন্তু সরকার আমাদের সেই দাবি কখনো রাখেনি।’

নৃপেন পাল বলেন, ‘এ বছর আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করেছি। জাতীয় সংসদে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট উত্থাপিত হয়েছে। আশা ছিল এবারের বাজেটে অন্তত চা শ্রমিকদের জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকবে। এবারও আমরা নিরাশ হয়েছি।’

নৃপেন পাল আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে অনুরোধ জানাব, বাজেটে আমরা নিরাশ হলেও চা শ্রমিকদের জন্য যেন বিশেষ নজর দেওয়া হয়। অন্তত চা শ্রমিকদের শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেন সরকার বিশেষভাবে নজর দেন।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক যুবরাজ ঝড়া বলেন, ‘শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সারা দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখনো চা শ্রমিক শিশুরা শিক্ষা বঞ্চিত। নারীরা গর্ভকালীন সঠিক চিকিৎসা পান না। যে কারণে মা ও শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। চা শ্রমিকেরা যেন এই অবহেলা থেকে মুক্তি পায়, এর জন্য জাতীয় বাজেটে চা শ্রমিকদের জন্য আলাদা বরাদ্দ চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমরা বঞ্চিত হয়েছি।’

চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন শিবলি খায়ের। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল থেকে এখন পর্যন্ত চা শ্রমিকেরা নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে আসছেন। তাদের নেই ভূমির অধিকার। শিক্ষা-চিকিৎসা বঞ্চিত এই শ্রমিকেরা যখন-তখন চাকরি হারাচ্ছে। অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে রয়েছে বেতন বৈষম্য। যে কারণে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও এই জনগোষ্ঠী দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে।’

শিবলি খায়ের বলেন, ‘চা শ্রমিকদের মতো বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে এভাবে পেছনে ফেলে দেশ কখনো এগিয়ে যেতে পারবে না। তাই তাদের উন্নয়নে সরকারকে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি প্রকাশিত ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী চা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে নবম। প্রতি বছর জাতীয় জিডিপির এক শতাংশ আসে চা শিল্প থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত