Ajker Patrika

কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমেছে, ভোগান্তি কমেনি

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪, ২১: ৫২
Thumbnail image

বাড়ির পাশে গবাদিপশু রাখার মাটির ঢিবি। ঢিবির ওপর মাচান করে সেখানে পাতা হয়েছে খাট। ওপরে জিও ব্যাগ আর পলিথিন দিয়ে তৈরি চালা। চারদিকে পলিথিনে ঘেরা। এভাবেই তৈরি ঝুপড়িঘরে খাটের ওপর বসে রয়েছেন রূপবানু (৪৫)। খাটের পাশে বাঁশের মাচায় চুলা, হাঁড়ি-পাতিলসহ তৈজসপত্র। এক মাস ধরে এই ঝুপড়িতেই রূপবানুর সংসার। চারদিকে পানি; কিন্তু রূপবানুর খাবারের পানি সীমিত। শুধু পানি নয়, খাদ্যসংকটে রূপবানু ঠিকমতো তিনবেলা খেতেও পারেন না। 

রূপবানুর বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মশালের চর গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত হাছেন মণ্ডলের স্ত্রী তিনি। চলতি বন্যায় পানিবন্দী রূপবানু গৃহবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। অভাব তাঁর নিত্যসঙ্গী। গতকাল সোমবার দুপুরে পশ্চিম মশালের চর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রূপবানুর বসতবাড়িতে হাঁটুপানি। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকার শব্দ শুনে পলিথিনে ঘেরা ঝুপড়িতে বসে উঁকি দিচ্ছিলেন তিনি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলেন সাহায্যের নৌকা কি না। ঝুপড়ির একেবারে কাছে নৌকা ভিড়িয়ে রূপবানুর কাছে জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চাই। জবাবে যা জানালেন, তা শিউরে ওঠার মতো। 

রূপবানু বললেন, ‘আমাদের খুব অসুবিধা। এক মাস থাইকা এই মাচানে আছি। বাইরে যাইতে পারি না। খাওয়া-দাওয়ার অভাব, ট্যাকাপয়সার অভাব। ধার কইরা চলতাছি। বাড়িতে টিউবওয়েল তলায় গেছে। শান্তিমতো পানিও খাইতে পারি না।’ 

রূপবানুর বাড়ির ঠিক পূর্বে তাঁর প্রতিবেশী আছির উদ্দিনের বাড়ি। পরিবার নিয়ে কীভাবে দিন কাটছে—এমন প্রশ্নে আছির উদ্দিন বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র এবার খুব ক্ষয়ক্ষতি কইরা গেছে। আমরা খুব কষ্টে আছি। এলাকায় কাজ-কাম নাই। যাগো কাছে কাজে যামু, তাগো বাড়িতেই পানি। জমা টাকা শ্যাষ কইরা অহন ধারে চলতাছি।’ 

ব্রহ্মপুত্রের জনবসতিপূর্ণ চরগুলোতে এখন এমনই অভাব আর ভোগান্তির গল্প। পানি নামতে শুরু করলেও বানভাসিদের ভোগান্তি কমেনি। চারপাশে পানি, কাদা। সবচেয়ে বেশি সংকট কাজের। কাজ না থাকায় চরে চরে অভাব। রোজগার না থাকায় নিম্ন আয়ের দিনমজুর পরিবারগুলো চলছে ধারদেনার ওপর। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামতের বাড়তি খরচের জোগান কীভাবে হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলেছে, পুনর্বাসন সহায়তা না পেলে তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে, অনেকের পক্ষে অসম্ভব। যাত্রাপুর ঘাটে নৌকা থেকে নামার পরপরই শুরু হয় ঝুমবৃষ্টি। সে সময় রূপবানু আর তাঁর প্রতিবেশীদের ভোগান্তি চোখে ভাসছিল। 

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুর রহমান বলেন, ‘পশ্চিম মশালের চর গ্রামে আমি নিজে গিয়ে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করেছি। সহায়তা পাওয়ার যোগ্য কোনো পরিবার না পেয়ে থাকলে তালিকা যাচাই করে তাদের দেওয়া হবে।’ 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলায় সব নদ-নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল দিনভর সব নদ-নদীর পানি কমা অব্যাহত ছিল। 

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, চলমান বন্যায় জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত মানুষদের জন্য ৬০৯ টন চাল ও ২৬ হাজার ২৭০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত