Ajker Patrika

৫ আগস্টের মতো আবারও রাস্তায় নামতে হবে, নেতা-কর্মীদের মির্জা ফখরুল

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০: ৩৩
Thumbnail image
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির জনসভায় মির্জা ফখরুল। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ৫ আগস্টে সবাই মিলে যেভাবে রাস্তায় নেমেছিলেন, তেমনি আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে রাস্তায় নামতে হবে। ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য; ভাতের অধিকার, ন্যায়বিচার ও সামাজিক অধিকার পাওয়ার জন্য।

আজ সোমবার তাঁর নিজ জেলা ঠাকুরগাঁও সদরের শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে সদর উপজেলা বিএনপির এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কি সত্যি সত্যিই পরিবর্তন চান? নাকি আবারও সেই আওয়ামী লীগের নৌকাতে ফিরে যেতে চান?’ তখন উপস্থিত সবাই না সূচক উত্তর দেন।

তিনি বলেন, ‘ওই যে ৫ আগস্টে সবাই মিলে যেভাবে রাস্তায় নেমেছিলেন, তেমনি আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে রাস্তায় নামতে হবে। রাস্তায় নামতে হবে অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। ভাতের অধিকার, ন্যায়বিচার ও সামাজিক অধিকার পাওয়ার জন্য।’

ফখরুল বলেন, ‘গত ১৫-১৬ বছর ধরে আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি, অনেক কষ্ট করেছি এবং অনেক কষ্ট ভোগ করেছি। তাই আজকে আমাদের কাছে সবচেয়ে যেটা বড় প্রয়োজন আমরা শান্তিতে থাকতে চাই, আমরা শান্তিতে একটি নির্বাচন করতে চাই। সে নির্বাচনে আমরা ভোট দিয়ে আমাদের যাকে পছন্দ তাকে নির্বাচিত করতে চাই।’

আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখন আর জেলে যেতে হবে না। আমরা এখন ওই শান্তিতে আছি যে রাত হলে পুলিশ বাড়ি আক্রমণ করবে না। অন্তত এটুকু শান্তিতে আছি, আমাদের ওই খেত বাড়িতে–ধান বাড়িতে অথবা গাছের ওপরে বসে থাকতে হবে না রাতে। যেটা আমাদের গত ১৫ বছর ধরে থাকতে হয়েছিল।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম যুদ্ধ করে। বুকের রক্ত দিয়ে লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। হিন্দু–মুসলমান ভাইয়েরা ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। আমরা সেটা ভুলি নাই। আমরা যে ভারতে গেলাম, উদ্বাস্তু হয়ে গেলাম, দেশে আমাদের বাড়িঘর পাক হানাদার বাহিনী লুট করে নিয়ে গিয়েছিল।

‘পরবর্তীতে আমরা স্বাধীন হলাম যুদ্ধ করে এবং একটি দেশ পেলাম। আমাদের মনে আশা ছিল যে শেখ মুজিবুর রহমান বড় নেতা। তিনি আমাদের একটি সুন্দর দেশ দেবেন, শান্তির দেশ। যেখানে আমরা পরস্পর ভাই ভাইয়ের মতো বাস করব। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা সেটা পাই নাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে গেছে হানাহানি–কাটাকাটি খুন-জখম-হিংসা।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার, যে নেতাকে (শেখ মুজিবুর রহমান) এত মানুষ ভালোবাসল, যে দলটাকে ভালোবাসত (আওয়ামী লীগ) সে দলটাই এ দেশের মানুষের ওপর চড়াও হলো।

রব সাহেবের (আ স ম আব্দুর রব) জাসদ আওয়ামী লীগ থেকে সেই সময় বের হয়ে আসছিল। দলটা মনে করেছিল, আওয়ামী লীগ সেই সময় ঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারছিল না। ওই সময় আওয়ামী লীগ দুর্নীতি-চুরি-লুটতরাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। স্বাধীনতার পরপরই জাসদের প্রায় ৩০ হাজার নেতা-কর্মীকে আওয়ামী লীগ হত্যা করে।’

বিএনপির এ প্রবীণ নেতা বলেন, ‘গত ৫০ বছর ধরে আমরা লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি, শান্তির দেশ–ভালোবাসার দেশ–উন্নয়নের দেশ গড়ার জন্য। দুর্ভাগ্য আমাদের, আওয়ামী লীগের হাতে যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসল ২০০৮ সালে এরপর আবার শুরু হলো অত্যাচার–নির্যাতন।

‘এবারের কায়দাটা ভিন্ন, কয়েকটি দল রাখল গণতন্ত্রের একটা ফ্যাসাদ থাকল। আবার শুরু করল বাকশালি একদলীয় ব্যবস্থা। পরে ২০১২ সালে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তিনবার ভোট দিতে পারিনি। আওয়ামী লীগ ভোটের ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছিল।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন একটা দাবি উঠেছে যে আমরা একাই সব করে ফেলেছি, আর আমরা যে ১৫ বছর ধরে মাইর খেলাম, মামলা খেলাম, গাইবি মামলা হলো জেল–জুলুমের শিকার হলাম।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির জনসভায় মির্জা ফখরুল। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির জনসভায় মির্জা ফখরুল। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি বলেন, ‘শুধু আপনারাই হামলা-হামলার শিকার হন নাই, একই সঙ্গে সদরের প্রায় সাত হাজার আসামি ১০০টি ওপরে মামলা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ। ৭০০ মানুষকে গুম করে দিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দেশটা কারও বাপের না। আমাদের রক্ত পানি করে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা সবাই জান দিয়ে পেয়েছি বাংলা। কারও দানে পাওয়া নয়। এই দেশটা আপনাদের, এই মাটি আপনাদের। এই মানুষগুলো আপনাদের। আপনাদেরকেই রক্ষা করতে হবে এ মাটি ও দেশ।

‘আমরা কারও ওপর প্রতিহিংসা চালাতে চাই না, কারও ওপর প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমরা সবাইকে নিয়ে ভালোবেসে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। আসুন আমরা সবাই মিলে সে লক্ষ্যে কাজ করি।’

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, দপ্তর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরীফ ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত