Ajker Patrika

পাকিস্তানে ‘সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র, ভারতীয় দাবির সত্যতা কতটুকু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ১১: ২১
ভারতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মুরিদকের সেই কমপ্লেক্সের একটি ভবন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
ভারতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মুরিদকের সেই কমপ্লেক্সের একটি ভবন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে ভারতের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩ প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান জানিয়েছে, হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ভারতের দাবি, লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসী অবকাঠামো। তবে আল-জাজিরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পেয়েছে এটি মূলত একটি কমপ্লেক্স। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন ও মসজিদ রয়েছে। হামলায় একটি মসজিদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত ৬ মে দিবাগত রাতে মুরিদকেতে চালানো এই হামলাটি ছিল ভারতীয় সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিন্দুর’—এর অংশ। ভারত বলছে, এটি ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে চালানো প্রাণঘাতী হামলার প্রতিশোধ। ওই হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মুরিদকে শহরটি লাহোর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে। ইসলামাবাদ থেকে চার ঘণ্টার পথ। শহরটির জনসংখ্যা আড়াই লাখের বেশি। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত দাবি করে আসছে, এখানেই লস্কর-ই-তৈয়্যবার (এলইটি) সদর দপ্তর অবস্থিত।

হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ‘সরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কমপ্লেক্স’ নামে পরিচিত একটি বিশাল এলাকা, যেখানে একটি হাসপাতাল, দুটি স্কুল, একটি হোস্টেল ও একটি বড় মাদ্রাসা রয়েছে। ৮০টি আবাসিক ভবনের এই কমপ্লেক্সে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারসহ প্রায় ৩০০ মানুষ বসবাস করেন। মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানান, হামলার পরপরই কমপ্লেক্সের একটি প্রশাসনিক ভবনে তিনজন নিহত হন। তাঁরা সবাই ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ সেখানে জরুরি দায়িত্ব পালনের জন্য অবস্থান করছিলেন। এক কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

বুধবার ভারতীয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি মসজিদও। ঘটনাস্থলে থাকা এক উদ্ধারকারী কর্মকর্তা আল-জাজিরাকে বলেন, হামলার আধঘণ্টার মধ্যেই তিনি সেখানে পৌঁছেছিলেন। প্রশাসনিক ভবনের একটি ঘরের দিকে নির্দেশ করে তিনি বলেন, ‘প্রথম মরদেহ আমিই খুঁজে পেয়েছিলাম।’

সরকারি কর্মকর্তা তৌসিফ হাসান আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সেদিন রাতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রথম মুরিদকেতেই আঘাত হানে।’ তিনি জানান, মাঝরাতের কিছুক্ষণ পর তিনি বিকট দুটি শব্দ শোনেন। শব্দ দুটি দুই মিনিটের ব্যবধানে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা এর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম। কী ঘটেছে, আমি ঠিক বুঝতে পেরেছিলাম।’

এই কমপ্লেক্সের মসজিদটির নাম উম্মুল কুরা। এর বিশাল প্রার্থনা কক্ষের ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়েছে ভারতীয় হামলায়। ছাদের দুটি বিশাল গর্ত ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার স্থান নির্দেশ করে। তৌসিফ হাসান এবং তাঁর সহকর্মী উসমান জালিস জানান, দুই সপ্তাহ আগে পেহেলগাম হামলার পর পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ মুরিদকে হামলার ঝুঁকির মূল্যায়ন করেছিল। ভারত দীর্ঘদিন ধরে এই শহর ও কমপ্লেক্সটিকে এলইটির সদর দপ্তর বলে দাবি করে আসছে। এই দাবির কারণে হামলার আশঙ্কা ছিল।

উসমান জালিস আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছিল, মুরিদকে হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এ কারণেই আমরা কমপ্লেক্সের কর্মী ও বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম।’ যারা নিহত হয়েছেন, তারা জরুরি কাজের জন্য থেকে যাওয়া সীমিতসংখ্যক কর্মীর অংশ ছিলেন।

মসজিদের বারান্দার একপাশে একটি বড় টেবিলে ভবনগুলোতে আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরাগুলো রাখা ছিল। বিস্ফোরকের গন্ধ এবং ধাতব খণ্ডগুলোতে তখনো তপ্ত ছিল। তৌসিফ হাসান ও উসমান জালিস জোর দিয়ে বলেছেন, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে কমপ্লেক্সটির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আরও জটিল।

কমপ্লেক্সটি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন হাফিজ সাঈদ। তিনি জামাত-উদ-দাওয়া (জেইউডি) নামের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানেরও প্রতিষ্ঠাতা। জেইউডি দাতব্য সংস্থা হলেও এটি ব্যাপকভাবে এলইটি-এর ছায়া সংগঠন হিসেবে পরিচিত। কমপ্লেক্সের মাদ্রাসাটির নাম জামিয়া দাওয়া ইসলামি। এই নামটি জেইউডি-র নামে রাখা হয়েছে।

ভারতের অভিযোগ, হাফিজ সাঈদ ও এলইটি ভারতের ভূখণ্ডে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ২০০৮ সালের নভেম্বরের মুম্বাই হামলা। ওই হামলায় কয়েক দিনে ১৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

আবিদ হোসেন নামের ৫১ বছর শিক্ষক এই কমপ্লেক্সেই বসবাস করেন। তিনি জোর গলায় ভারতের দাবি অস্বীকার করেন। ভারত দাবি করেছিল, এটি ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ বা ‘কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদর দপ্তর।’ তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এই কমপ্লেক্সটি সব সময়ই ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। আমি গত ৩০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি এবং নিজেই এখানে শিক্ষকতা করি।’

ওই শিক্ষক আরও বলেন, এই এলাকা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো—এমন অভিযোগও সঠিক নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের সাঁতার, ঘোড়া চালানো বা শারীরিক প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়ার মতো মাঠ ও সুবিধা যদি থাকে, তবে কেন এর মানে হবে যে এখানে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়?’

২০১৯ সালে পাকিস্তানি সরকার জেইউডি-এর কাছ থেকে এই কমপ্লেক্সটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। সে সময় সাঈদ ও এলইটি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। নিষিদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন বন্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়া দেশগুলোর ‘ধূসর তালিকায়’ (গ্রে লিস্ট) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঝুঁকিও ছিল পাকিস্তানের।

মসজিদের পেছনে একটি রাস্তা রয়েছে। সেখানে দুটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। চারদিকে সোলার প্যানেল ও ভাঙা ইট ছড়িয়ে ছিল। হামলার রাতের কথা মনে করে বাসিন্দা আলী জাফর ধ্বংস হওয়া ভবনগুলোর পেছনের নিজের বাড়িটির দিকে নির্দেশ করেন। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের শব্দ অন্তত সাত কিলোমিটার দূরে থেকেও শোনা গিয়েছিল।’ তিনি পরিবারের সঙ্গে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। সেই বাড়ির কাছ থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

জাফর বলেন, ‘কয়েক দিন আগে কর্তৃপক্ষ আমাদের জায়গাটি ছেড়ে দিতে বলেছিল। তাই আমরা কমপ্লেক্সের বাইরে চলে গিয়েছিলাম।’ জাফর আরও বলেন, ‘এটা নিশ্চিত ছিল যে, ভারত এই এলাকায় হামলা চালাবে। কারণ, তাদের মিডিয়া বারবার মুরিদকেকে তুলে ধরছিল।’

তৌসিফ হাসান বলেন, শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ায় মাদ্রাসা ও স্কুল বন্ধ ছিল। তবে পুরো কমপ্লেক্সটি কঠোর সরকারি নজরদারিতে ছিল। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে সরকার প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন নিজের হাতে নেওয়ার পর আমরা নিশ্চিত করেছি যে এখানকার পাঠ্যক্রম ও শিক্ষাদান সম্পূর্ণভাবে তদারকি করা হয়।’

শিক্ষক আবিদ হোসেন জানান, সরকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সাঈদ আর কমপ্লেক্সে আসেননি। তিনি বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ও ২০০০ সালের শুরুর দিকে তিনি নিয়মিত আসতেন।’ সাঈদের বয়স এখন সত্তরের বেশি। ২০১৯ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২২ সালে পাকিস্তানের একটি আদালত দুটি ‘সন্ত্রাসে অর্থায়ন’ মামলায় তাঁকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই ধরনের অভিযোগে ২০২০ সালে তাঁকে আলাদা ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিলিস্তিন সংকট: অবশেষে গাজার ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মত হামাস

এএফপি, কায়রো
টানা দুই বছরের ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার সরবরাহ ব্যবস্থা। জাতিসংঘ বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। পাত্র নিয়ে পানির খোঁঁজে বেরিয়েছে শিশুরা। গতকাল গাজার খান ইউনিস এলাকায়। ছবি: এএফপি
টানা দুই বছরের ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার সরবরাহ ব্যবস্থা। জাতিসংঘ বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। পাত্র নিয়ে পানির খোঁঁজে বেরিয়েছে শিশুরা। গতকাল গাজার খান ইউনিস এলাকায়। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট কমিটির কাছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার শাসনভার হস্তান্তরে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজায় সক্রিয় অন্য সংগঠনগুলোও কায়রো বৈঠকের এই সমঝোতার বিষয়ে একমত হয়েছে।

হামাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বাধীন টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত অস্থায়ী এই কমিটি আরব দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় কাজ করবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকায় যেন প্রশাসনিক কোনো শূন্যতা না থাকে, সে জন্য অবিলম্বে কাজ শুরু করবে তারা।

গত শুক্রবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সামনে আসা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সব গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলন আহ্বানের প্রস্তাব এসেছে। ওই সম্মেলনে জাতীয় কৌশল নির্ধারণ এবং ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার (পিএলও) পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কায়রোতে হামাস ও ফাতাহর প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষ আগামী দিনগুলোতেও বৈঠক চালিয়ে যাবে এবং ইসরায়েলি চাপ মোকাবিলা করে অভ্যন্তরীণ ঐক্য জোরদারে কাজ করবে।

এই আলোচনার সমান্তরালে মিসরের গোয়েন্দাপ্রধান হাসান রাশাদ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এর মধ্যে হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদ, পিএলওর অন্তর্ভুক্ত ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে হামাস ও ফাতাহ যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা যৌথভাবে পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠনে রাজি হয়েছিল। তবে ফাতাহর অনেক নেতা তখন সেই চুক্তির সমালোচনা করেন। এখন ট্রাম্প-সমর্থিত প্রস্তাব ঘিরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা।

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার মুখে দীর্ঘদিন থেকে হামাস বলে আসছে, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তারা আর সরাসরি উপত্যকার শাসনকাজ পরিচালনায় আগ্রহী নয়। তবে পশ্চিমাদের দাবি অনুযায়ী নিজেদের যোদ্ধাদের নিরস্ত্র করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। তারা বলছে, একমাত্র স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলেই তাদের যোদ্ধারা অস্ত্র সমর্পণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অস্ত্র সমর্পণের পর তাঁদের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করা হবে।

এদিকে গাজায় স্থিতিশীলতা ফেরাতে পাঁচ হাজার সদস্যের একটি বাহিনী গঠনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পরিকল্পনায় নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে তুরস্কের আগ্রহ থাকলেও তাতে আপত্তি জানিয়েছে ইসরায়েল। তাদের আপত্তির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, এই বহুজাতিক বাহিনীর জাতীয়তা নিয়ে ইসরায়েলের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা একটি আবশ্যকীয় শর্ত।

ইসরায়েলের অভিযোগ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ। ফলে গাজায় স্থিতিশীলতা ফেরানোর বাহিনী থেকে তুরস্ককে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। অন্যদিকে এই বাহিনীতে তুরস্কের উপস্থিতি চায় হামাস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জোহরান মামদানি পতিতাবৃত্তির সমর্থক, অভিযোগ অ্যান্ড্রু কুমোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর ও মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু এম. কুমো। ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর ও মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু এম. কুমো। ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর ও মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু এম. কুমো আসন্ন নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মামদানি বহু বছর ধরে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়ার আইন প্রণয়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। কুমোর মতে এটি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক উদ্যোগ’।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে কুমো বলেন, ‘জোহরান মামদানি পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করার জন্য প্রস্তাবিত আইনের উদ্যোক্তা। এই আইন পাস হলে সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ আরও শোষণের শিকার হবেন এবং মানব পাচারকারীরা, গ্যাং সদস্যরা ও সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র আরও শক্তিশালী হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গভর্নর হিসেবে আমি এই বিলের বিরুদ্ধে বহু বছর লড়াই করেছি।’

কুমো অভিযোগ করেন, নিউইয়র্ক সিটি এরই মধ্যে কুইন্সে ‘মার্কেট অব সুইটহার্টস’-এর মতো এলাকাগুলোতে পতিতাবৃত্তি, অপরাধ ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। এই আইন পাস হলে শহরের প্রতিটি কোণে আবারও পতিতাবৃত্তি শুরু হবে।

তিনি বলেন, ‘এটি জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে মামদানির অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনায় এটি আশ্চর্যের কিছু নয়। তিনি এনওয়াইপিডির অর্থায়ন কমানোর পক্ষে ছিলেন, এমনকি পুলিশ যেন গার্হস্থ্য পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় হস্তক্ষেপ না করতে পারে, সেটিরও পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি পুলিশকে বর্ণবাদী, সমকামবিরোধী এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।’

কুমো বলেন, ‘মামদানি যে ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য, এই সংগঠনও একই নীতির সমর্থক।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমার কথা মনে রাখুন, বাস্তব জগতে এই আইন পাস হলে বিপদের দরজা খুলে যাবে। মামদানি হয়তো নিউইয়র্ক সিটির পুরোনো অন্ধকার সময়টা মনে রাখেন না, যখন টাইমস স্কয়ার ছিল অপরাধপ্রবণ, পতিতাবৃত্তির কেন্দ্র এবং মানুষ জানত, কোন এলাকাগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা সেই সময়ের ভয়াবহতা জানি এবং কেউই সেই যুগে ফিরে যেতে চায় না।’

কুমো বলেন, ‘আমাদের আরও বেশি করে সাহায্য করতে হবে সেই মানুষদের, যাঁরা জোরপূর্বক বা শোষণের শিকার হয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত হয়েছেন। নিউইয়র্ককে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে—তাদের জন্য পথ সহজ করা নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্রান্সে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে এই প্রথম কোনো নারীর যাবজ্জীবন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অভিযুক্ত বেঙ্কিরেদ ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর লোলাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। ছবি: এএফপি
অভিযুক্ত বেঙ্কিরেদ ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর লোলাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। ছবি: এএফপি

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক আলজেরীয় নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ফ্রান্সের একটি আদালত। দেশটিতে এই প্রথম কোনো নারীকে এমন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলো।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) আদালত অভিযুক্ত দাহবিয়া বেঙ্কিরেদকে (২৭) দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন। মামলার নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২২ সালে ১২ বছর বয়সী লোলা দাভিয়েকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করেছিলেন দাহবিয়া বেঙ্কিরেদ। এই ঘটনা সে সময় পুরো ফ্রান্সকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এবং বেঙ্কিরেদের অবৈধ অভিবাসী পরিচয় ঘিরে দেশটিতে তীব্র অভিবাসনবিরোধী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

দাহবিয়া বেঙ্কিরেদকে গ্রেপ্তার করা হয় লোলা নিখোঁজ হওয়ার পর। এরপর শিশুটির মরদেহ পাওয়া যায় প্যারিসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের লবিতে রাখা ট্রাঙ্কে। ওই ভবনেই কেয়ারটেকারের কাজ করতেন লোলার বাবা-মা।

রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারক বলেন, ‘অপরাধটি ছিল অতি নিষ্ঠুর ও নৃশংস। এটি প্রকৃত অর্থে একধরনের নির্যাতন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন ভয়াবহ ও অবর্ণনীয় পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার যে মানসিক আঘাত পেয়েছে, আদালত তা বিবেচনায় নিয়েছে।’

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রায় ঘোষণার আগে যুক্তি দেন, বেঙ্কিরেদের অপরাধের ‘চরম ভয়াবহতা’ ও ‘অমানবিক নিষ্ঠুরতা’ বিবেচনায় তার জন্য ‘যাবজ্জীবন’ শাস্তিই প্রাপ্য।

প্রসঙ্গত, ফরাসি দণ্ডবিধির অধীনে যাবজ্জীবন দেশটিতে সর্বোচ্চ সাজা এবং এতে কোনো শর্তে মুক্তি বা শাস্তি কমানোর সুযোগ থাকে না।

তদন্তে জানা গেছে, বেঙ্কিরেদ ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর লোলাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

বিচার চলাকালে বেঙ্কিরেদ আদালতে নিজের অপরাধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যা করেছি, তা ভয়াবহ।’ তবে তিনজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাঁর মধ্যে ‘মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিপজ্জনক বা সাইকোপ্যাথিক প্রবণতা’ রয়েছে এবং তাঁর মানসিক অবস্থাকে চিকিৎসার মাধ্যমে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

ঘটনার পর ফ্রান্সের রক্ষণশীল ও অতি ডানপন্থী রাজনীতিকেরা কড়া অভিবাসন আইনের দাবি তুলেছেন। কারণ বেঙ্কিরেদ স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ফ্রান্সে অবস্থান করছিলেন এবং দেশ ছাড়ার নির্দেশনা মানেননি। তবে নিহত লোলার মা রাজনীতিবিদদের অনুরোধ করেছেন, যেন তাঁরা তাঁর মেয়ের মৃত্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করেন।

প্রসঙ্গত, ফ্রান্সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এর আগে এমন সাজা পেয়েছিলেন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার মিশেল ফুরনিরে এবং ২০১৫ সালের প্যারিস হামলার অন্যতম অভিযুক্ত সালাহ আবদেসলেম। ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৩০ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ৪১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মহারাষ্ট্রে ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছেন এক ব্যক্তি। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে দুই বছরের যমজ কন্যাসন্তানের গলা কেটে হত্যা করেছেন ওয়াসিম জেলার এক বাসিন্দা। পরে নিজেই থানায় গিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন ওই ব্যক্তি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম রাহুল চাভান। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছিলেন চাভান। পথে স্ত্রীর সঙ্গে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা হয় তাঁর। ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রী রাগ করে বাবার বাড়িতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

স্ত্রী চলে যাওয়ার পর রাহুল একাই দুই মেয়েকে নিয়ে রওনা দেন। পথে বুলধানা জেলার আঞ্চারওয়াড়ি এলাকার একটি জঙ্গলে গাড়ি থামিয়ে দুই শিশুকে সেখানে নিয়ে যান। পরে নির্মমভাবে তাদের গলা কেটে হত্যা করেন।

ঘটনার পর রাহুল সরাসরি ওয়াসিম থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন এবং দুই মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুদের মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হত্যার পর রাহুল প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে মরদেহে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেছিলেন। আংশিকভাবে দগ্ধ অবস্থায় দুই শিশুর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে বুলধানা জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দগ্ধ হওয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। বিষয়টি ফরেনসিক পরীক্ষা ও ময়নাতদন্তের পর স্পষ্ট হবে।

ওয়াসিম জেলার ডিএসপি মনীষা কদম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলের নমুনা সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত