Ajker Patrika

বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সৈয়দপুরে উধাও ৩ পরিবার

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২২, ২৩: ৩১
বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সৈয়দপুরে উধাও ৩ পরিবার

সৈয়দপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে পাঁচ দিন ধরে হদিস নেই তিনটি পরিবারের। শিশুসহ মোট ১৫ সদস্যের ওই পরিবারগুলোর বাড়ির প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। গ্রামবাসীর ধারণা, কয়েকটি এনজিও এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে মোট প্রায় ৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রাতের আঁধারে পরিবারগুলো পালিয়ে গেছে। তাঁরা ভারতে পাড়ি দিয়েছেন বলে অনেকের ধারণা। 

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভুজারী পাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের গণেশ চন্দ্র (মৃত) সূত্রধরের তিন ছেলে কমল চন্দ্র সূত্রধর (৫৬), পরিমল চন্দ্র সূত্রধর (৫২) ও নির্মল চন্দ্র সূত্রধর (৪৮)। বড় ভাই কমল পেশায় দিনমজুর। অন্য দুই ভাই পরিমল ও নির্মল ব্যবসায়ী। তাঁদের বাড়ির পাশে পোড়ারহাটে পরিমলের রয়েছে ‘গণেশ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ এবং নির্মলের ধান-চালের পাইকারি ব্যবসা। নির্মল চন্দ্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মেসার্স শুভ ট্রেডার্স’। তাঁরা উভয়েই ব্যবসার কথা বলে ব্র্যাক, আশা, গার্ক এনজিওসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন। গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাতের কোনো এক সময় ওই তিন ভাই নিজ নিজ বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে গেছেন। 

নির্মল চন্দ্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স শুভ ট্রেডার্সআজ শনিবার দুপুরে সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কমল, পরিমল ও নির্মলের বাড়িতে তালা ঝুলছে। কথা হয় প্রতিবেশী গীতা রায় সূত্রধরের সঙ্গে। তিনি জানান, মঙ্গলবার দিনে ওই তিন পরিবারের সদস্যরা বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু পরদিন বুধবার সকালে বাড়িগুলোর প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখেন তিনি। গীতা রায় বলেন, ‘শুনেছি তাঁদের অনেক দেনা আছে। তাই হয়তো পাওনাদারের চাপে রাতের কোনো এক সময় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।’ 

গ্রামের বাসিন্দা রাব্বী ইসলাম জানান, প্রতিদিনই বিভিন্ন পাওনাদার তাঁদের খোঁজে আসতেন। বিভিন্ন এনজিওর লোকজনই বেশি। তিনি আরও জানান, তাঁদের পাকা বাড়িসহ ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই। 

গ্রামের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই তিন পরিবারের ঋণের পরিমাণ আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। 

পরিমলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘গণেশ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছেজানা গেছে, পোড়ারহাট বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী গৌতম চন্দ্র মোহন্ত ও সাগর আলী, কসমেটিকস দোকানদার গল্লু মিয়া, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হেলাল হোসেনসহ এমন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জনের কাছ থেকে ব্যবসার কথা বলে টাকা ধার নিয়েছেন তাঁরা। 

ওষুধ ব্যবসায়ী গৌতম চন্দ্র মোহন্ত ও সাগর আলী জানান, ধান ও ভুট্টা কেনার কথা বলে নির্মল চন্দ্র মোট ১০ লাখ টাকা ধার নেন। এক মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার শর্তে টাকা নিয়েছিলেন তিনি। 

এ প্রতিবেদক সরেজমিনে উপস্থিত থাকতেই উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নীলফামারী সদরের কাজিরহাট শাখার ম্যানেজারসহ কয়েকজন মাঠকর্মী আসেন তাঁদের খোঁজে। এ ব্যাপারে কথা হয় ব্র্যাকের ম্যানেজার আইয়ুব আলীর সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁর শাখা থেকে নির্মল চন্দ্র সূত্রধর ব্যবসার জন্য ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। মাসিক কিস্তি ৩৮ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার কিস্তি দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। ওই দিন কিস্তি আদায় করতে এসে তাঁকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও বাড়িতে কোথাও পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 

বাড়ি ছেড়ে পালানোর পর ওই তিন পরিবারের বাড়ির সামনে পাওনাদাররা ভিড় করছেনবোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঋণের চাপে ওই তিন পরিবার বাড়ির ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি আমি শুনেছি। তাঁদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আজ শনিবার বিষয়টি সৈয়দপুর থানার ওসিকে মোবাইলে জানিয়েছি।’ 

জানতে চাইলে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দিয়েছি।’ 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম হুসাইন বলেন, ঋণের দায়ে তিন পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরটি এখনো জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত