Ajker Patrika

ছোট্ট সায়মা দাদির কাছে ফিরল ঠিকই, তবে লাশ হয়ে

দিনাজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৪, ২২: ৩৫
ছোট্ট সায়মা দাদির কাছে ফিরল ঠিকই, তবে লাশ হয়ে

অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাতে থাকা দাদি নাতনিকে একনজর দেখার জন্য ছটফট করতে থাকেন। মায়ের ইচ্ছে পূরণে স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দেন মোমিনুল হক। সারা রাতের জার্নি শেষে দিনাজপুরে পৌঁছাতে মাত্র আর ১০ কিলোমিটার দূরত্বে সড়ক দুর্ঘটনায় থমকে গেল সবকিছু। 

পাঁচ মাস বয়সী সায়মা মেহনাজের সঙ্গে আর দেখা হলো না দাদির। তার আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁকে যেতে হলো না ফেরার দেশে। প্রথমবারের মতো দাদা-দাদির কোলে উঠল সায়মার নিথর দেহ। গুরুতর আহত হয়েছেন বাবা মোমিনুল হক আর মা শিল্পী আক্তার। 

আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় দিনাজপুর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ী বাজারসংলগ্ন চকরামপুর এলাকায় ফলবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় সায়মা মেহনাজ ছাড়া আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয়ে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ২৮ ব্যক্তি।  

মোমিনুল-শিল্পী দম্পতির বাড়ি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার খোচনা বাংলাবাজার এলাকায়। কয়েক বছর ধরে দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন গাজীপুরে। সেখানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সহকারী ল্যাব ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত আছেন তিনি। 

দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যের কারণে অসুস্থতায় ভুগছেন মোমিনুলের মা, অর্থাৎ মেহনাজের দাদি আমেনা বেগম (৫৬)। ঈদের আগে ১৩ জুন চিকিৎসার জন্য আমেনা বেগমকে ভর্তি করা হয় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেই থেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। ঈদে বাড়িতে আসতে পারেননি মোমিনুল হক। এদিকে অসুস্থ মা ছোট্ট নাতনিকে (মেহনাজকে) দেখতে চেয়েছিলেন। তাই সপরিবারে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। 

আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, লাশ ঘরে নিথর পড়ে আছে সায়মা মেহনাজের মরদেহ। তৃতীয় তলার করিডরে বিছানায় অজ্ঞান হয়ে আছেন তাঁর বাবা মোমিনুল হক। আর চতুর্থ তলায় মেডিসিন ওয়ার্ডে শুয়ে আছেন মা শিল্পী আক্তার। 

মেহনাজের চাচা শাহীন ইসলাম (২৪) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোমিনুলের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মেফতাহুল জান্নাত (৭)। সে ভালো আছে। ভাই ও ভাবির অবস্থা আশঙ্কাজনক। উভয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে মা অসুস্থ হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মা বারবার মেহনাজকে দেখতে চাচ্ছিলেন। তা ছাড়া ঈদেও ভাই-ভাবি বাড়িতে আসতে পারেননি। তাই সপরিবারে বাড়িতে আসছিলেন। পথেই এ রকম একটা দুর্ঘটনা শিকার হলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত