Ajker Patrika

ফুলবাড়ীতে লাম্পি স্কিন ডিজিজে প্রায় ৩২ গরুর মৃত্যু, আতঙ্কে খামারিরা

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
ফুলবাড়ীতে লাম্পি স্কিন ডিজিজে প্রায় ৩২ গরুর মৃত্যু, আতঙ্কে খামারিরা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলায় প্রায় ৩২টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার এলুয়াড়ী, আলাদীপুর, শিবনগরসহ ৩টি ইউনিয়নে বেশি লক্ষ করা গেছে এ রোগের প্রকোপ। অন্য ইউনিয়নগুলোতেও ধীরে ধীরে ছড়াচ্ছে এই রোগ। 

এদিকে কোরবানির ঈদের আগে এই রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে আতঙ্কে রয়েছেন খামারিরা। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়াসহ সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। তারা বলছেন, বছরে ২ বার এ রোগের দেখা দেয়। ভ্যাকসিন না থাকলেও নিয়ম মেনে সাধারণ চিকিৎসাতেই ভালো হয়। 

জানা গেছে, উপজেলার এলুয়াড়ি ইউনিয়নের রুদ্রানী গ্রামের মতিনের ১টি বকনা গরু মারা গেছে তিন দিন আগে, আক্রান্ত হয়েছে ৪ টি। একই এলাকার শফিকুল ইসলামের ১টি বকনা গরু মারা গেছে এক সপ্তাহ আগে, রুস্তম আলীর ১টি, নুরনাহারের ১টি, অজিতের ১টি, মাসুদের ১টি এঁড়ে গরু, হাসানুরের ১টি এঁড়ে গরু, আকবর আলীর ১টি, মন্টুর ১টি গাভি, মাবুদের ১টি বকনা গরু মারা গেছে। এগুলো গত দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই মারা যায়। এ ছাড়া একই ইউনিয়নের হাশিমপুর গ্রামের শামসুলের ১টি গরু মারা যায় দুই সপ্তাহ আগে। 

এলুয়াড়ি ইউনিয়নের উত্তর শিবপুর চৌধুরী পাড়া গ্রামের আনোয়ারের ১টি গরু, বেলাল হোসেনের ১টি, রেজাউলের ২টি, ঊষাহার খিয়ারপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের ১টি, গোলাম রব্বানীর ১টি ও আবদুল আজিজের ১টি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। 

আলাদিপুর ইউনিয়নের জামডাঙ্গার মানিকের ৬ মাসের ১টি এঁড়ে গরু, রাঙামাটির অনিল দত্তের ১টি গরু, মেলাবাড়ী গ্রামের জব্বারের ১টি গরু, নুরপুর গ্রামের মণিরের ২টি গরু মারা যায়। এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় আরও কিছু গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সেগুলোর তথ্য মেলেনি। 

তবে খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের বিপদ চন্দ্রের বাড়িতেও এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে কয়েকটি গরু। গকুল গ্রামের বাবলুর ৫টি গরুর মধ্যে ৪টি আক্রান্ত ও দেবীপুরের রফিকুলের গাভি আক্রান্ত হয়েছে। 

ফুলবাড়ী উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়া গরু। ছবি: আজকের পত্রিকা রাঙামাটি এলাকার অর্ণব গরুর খামারে প্রায় সাড়ে আটশো গরু রয়েছে, গত ২-৩ সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ কিছু গরু আক্রান্ত হয়েছে এর মধ্যে কয়েকটি বাছুর মারা গেছে, বলেও জানিয়েছেন ওই খামারের পল্লি চিকিৎসক মো. নুর ইসলাম। তবে তার চিকিৎসায় কিছু গরু সুস্থ হয়েছে। 

ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিবনগর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের সোমবারু বলেন, ‘দেড় মাস বয়সের বাছুর নিয়ে এসেছি। বাছুরটির সারা শরীর গুটি হয়ে ফুলে গেছে। এমনটি প্রায় পুরো উপজেলায়। আক্রান্ত গরুর শরীর চাকা চাকা হয়ে যাচ্ছে, লোম উঠে যায়, ক্ষত হয়ে শরীরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পা ফুলে যায়, শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আসে। জ্বরের সঙ্গে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়। খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ছটফট করতে করতে কিছু গরু মারা যাচ্ছে।’ 

এদিকে ফুলবাড়ীতে লাম্পি স্কিন ডিজিজ ছড়িয়ে পড়ায় ফুলবাড়ী প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে ৩১ মে পল্লি চিকিৎসকদের নিয়ে এক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফুলবাড়ী উপজেলার ৩২ জন পল্লিচিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন। প্রাণিসম্পদের চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্তদের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম ও ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নিয়ামত আলী। 

ফুলবাড়ী প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় নিবন্ধিত গাভির খামারের সংখ্যা ২৮ টি। এতে গাভি আছে ৪৮০টি। অনিবন্ধিত খামার আছে ২৮০টি, গাভি আছে এতে ৩ হাজার ৩৬০টি। গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার সংখ্যা নিবন্ধনকৃত আছে ৪টি, তাতে গরুর সংখ্যা ৬০টি। অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ২৫৭ টি, তাতে গরুর সংখ্যা ১ হাজার ২৮৫। কৃষক পর্যায়ে দেশি গরু রয়েছে এক লাখ ৫ হাজার ৬২৩টি এবং শংকর জাতের গরু আছে ৩৭ হাজার ৫৪০টি। 

এলুয়াড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নবিউল ইসলাম বলেন, প্রায় মাস হতে চলল এই এলাকায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) দেখা দিয়েছে। আমার ইউনিয়নের উত্তর শিবপুর চৌধুরী পাড়া, উষাহার খিয়ার পাড়া, পানিকাটা মালিপাড়া এই ৩ গ্রামেই অন্তত ৩০টি গরু মারা গেছে। শুনছি ফুলবাড়ী উপজেলার সব এলাকাতেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অনেক গরু মারা গেছে, আক্রান্তও হয়েছে প্রায় বাড়িতে। খামারিরা অসহায় হয়ে পড়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে চিকিৎসার ব্যাপারে আরও তৎপর হতে হবে। 

ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নিয়ামত আলী বলেন, ‘ফুলবাড়ীসহ আশপাশের প্রায় চারটি উপজেলা থেকে অনেকেই প্রতিদিন এ রোগে আক্রান্ত গরু নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাদের সবরকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এটি ভাইরাসজনিত মৌসুমি চর্মরোগ যা মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। কোনো গবাদিপশু এ রোগে আক্রান্ত হলে তাকে আলাদা করে মশারির নিচে এবং ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। জ্বর হলে দিনে দুই-তিন বার মাথায় পানি দিতে হবে। নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিলে গরু সুস্থ হচ্ছে, তবে একটু সময় লাগছে।’ 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, ১৯১৯ সালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব হয় আমাদের দেশে, ‘বছরে ২ বার এই লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) দেখা দেয়। এখনো এ রোগের ভ্যাকসিন বের হয়নি। গুটি না ফাটা পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যাবে না। কেননা, আক্রান্ত প্রাণী এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক দিলে আক্রান্ত প্রাণী মারা যেতে পারে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যারা গরু নিয়ে এ রোগের চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের সবরকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিছু নিয়ম মেনে চললে এবং চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হয়ে যাবে, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। না বুঝে পল্লি চিকিৎসকেরা ভুল চিকিৎসা দিলে গরুর ক্ষতি হতে পারে, সে জন্য তাদের কে নিয়ে দিক নির্দেশনামূলক একটি সেমিনারও করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত