Ajker Patrika

২ লাখ টাকায় একদিনের সন্তানকে বিক্রি করলেন ‘জুয়ায় আসক্ত’ বাবা

গাইবান্ধা ও পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
২ লাখ টাকায় একদিনের সন্তানকে বিক্রি করলেন ‘জুয়ায় আসক্ত’ বাবা

দুই লাখ টাকায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে একদিনের সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ‘জুয়ায় আসক্ত’ এক বাবার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গোবিন্দগঞ্জের আরও দুজন নারী–পুরুষ জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বুধবার উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে। 

অভিযুক্ত বাবা শ্রী হেরেন বিশ্বাস উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মৃত নয়ন চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কর্মকার (কামার)। আর অপর দুজন হলেন–গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পান্থাপাড়া এলাকার প্রান্ত ও একই এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দের স্ত্রী মানা ভক্তিরানী। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, হেরেন বিশ্বাস পেশায় কর্মকার হলেও তিনি জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। ফলে তার বেশ কিছু টাকা ঋণ হয়েছে। এই ঋণ শোধ করতে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া একদিনের ছেলে সন্তানকে বিক্রি করে দেন তিনি। আর এই কাজের সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত ও একই এলাকার মানা ভক্তিরানী নামে এক নারী জড়িত থাকার কথা জানান তারা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দুই যুগ আগে বিয়ে হয় হেরেন-ঝুম্পা দম্পতির। বিয়ের পর তাদের সংসারে রনি, নিরঞ্জন, রাবিন্দ্র ও জয়দেব নামে চার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে আরও এক ছেলে (পঞ্চম) সন্তান আসে তাদের ঘরে। কিন্তু জুয়ায় আসক্ত বাবা সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া একদিনের ওই সন্তানকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। ওই টাকা দিয়ে রাতেই বেশ কয়েকজনের ঋণ পরিশোধ করছেন বলে জানা গেছে। 

অভিযুক্ত বাবা হেরেন চন্দ্র বিষয়টি অস্বীকার করলেও বেশ কিছু টাকা ঋণ করার কথা স্বীকার করছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আগে জুয়া খেলতাম এখন আর খেলি না।’ সন্তান বিক্রি বিষয়ে হেরেন চন্দ্র বলেন, ‘আমি সন্তান বিক্রি করিনি, আমি দত্তক দিয়েছি। সংসারে অভাব, শুধু ছেলেই হয়। মেয়ে হলে দিতাম না।’ 

তিনি আরও বলেন, গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত আর মানা ভক্তি রানীর সঙ্গে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ লোক মাইক্রোবাসে এসে সন্তান নিয়ে গেছে। যাদের সন্তান দিয়েছি, তাদের আমি চিনি না। কোনো দিন দেখিওনি। ওরা (ভক্তি ও প্রান্ত) জানে। শুনেছি তাদের বাড়ি রাজশাহীতে।’ 

হেরেনের স্ত্রী ঝুম্পা রানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী জুয়া খেলে সংসার উজাড় করেছেন। এবার আমার কোলের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে। সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা আমাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই (স্বাক্ষর) নিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘বাচ্চাটাকে কাকে দিল, আমরা তাদের চিনিনা। এখন বাচ্চার জন্য অনেক মায়া হচ্ছে।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই দম্পতি নিজের ইচ্ছায় দিয়েছে, আমাদের কাছে পেপারস আছে। তবে কার কাছে শিশুটিকে দেওয়া হয়েছে আর শিশুটি এখন কোথায়-এমন প্রশ্নের উত্তরে তাদের নাম-পরিচয় দিতে রাজি হননি প্রান্ত। 

আরেক অভিযুক্ত মানা ভক্তি রানীর সঙ্গে তার সম্পর্ক কি জানতে চাইলে প্রান্ত বলেন, ‘আপনাকে কেন বলতে হবে? আপনার জেনে লাভ কী? এসব করে লাভ নাই। সকল ডকুমেন্ট দেওয়া হবে।’ 

তবে বিপরীতধর্মী বক্তব্য দেন মানা ভক্তি রানী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুটিকে যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় আমাদের। সেখানেই আমি জেনেছি তারা নিঃসন্তান। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের একপর্যায়ে তাদের শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে।’ যাদের দত্তক দেওয়া হয়েছে তাদের বাড়ি কোথায়? শিশুটি এখন কোথায় আছে? এমন প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়েই মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন ভক্তি। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন ‘সন্তান বিক্রি কিংবা দত্তক রাখার বিষয়টি আমি অবগত নই।’ 

এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সন্তান বিক্রি করার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। যদি কেউ সন্তান বিক্রি করে থাকে তাহলে সেটি অপরাধ। ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত