Ajker Patrika

‘ইচ্ছে আছে তবে উপায় দেখিনা কেমনে পড়মু’

কেএম হিমেল আহমেদ, রংপুর
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ২৩: ৫৬
‘ইচ্ছে আছে তবে উপায় দেখিনা কেমনে পড়মু’

সকালের সূর্য কেবল আড়মোড়া ভেঙে পূর্ব আকাশে জেগে উঠতে শুরু করেছে। শিশু রুবিয়া ও জিনহা মায়ের রান্নার কাজে সাহায্য করছে। আর ছোট ভাই সুকচান চুলার পাশে বসে খাবারের অপেক্ষায়। তাদের মা আজমীরা খাতুন রান্না-বান্না শেষ করে গ্রামে রোজগারের আশায় বের হবেন। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে সামনে এগিয়ে দেখা যায়, ঘুম থেকে উঠে মায়ের রান্নার পাশে আনমনে বসে আছে সাদিউন (১৪)। 

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৭টার ঘরে। রংপুর শহর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দক্ষিণে দমদমা ব্রিজের নিচেই সেখানে ১৫টি পরিবারের বসবাস। যাদেরকে বলা হয় বেদে/বাইদ্যা। এদের বসবাসের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই। আজ এখানে তো কাল আরেক জায়গায়। পনেরো পরিবারের সর্দার তরিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেই তাদের পল্লিতে প্রবেশ করি। আনমনে বসে থাকা সাদিউনের মায়ের সঙ্গে কথা শেষ করে কোন ক্লাসে পড়ো সাদিউন জানতে চাইলে মাথা নেড়ে বলে, ‘আমি স্কুলে যাই না। একসময় খুব ইচ্ছে করত এখন সেই ইচ্ছে করে না। এখন দেখি আমাদের এইভাবেই জীবন চালাতে হবে।’ 

শিশু ইয়ামুল বলে, ‘পড়াশোনার ইচ্ছে আছে তবে উপায় দেখি না কেমনে পড়মু, বাবা-মা গ্রামে কাজে গেলে ঘর পাহারা দিতে হয়। স্কুলে যেতে পারি না।’ নিজের নাম লিখতে জানে কিনা জানতে চাইলে বলে, ‘নাম লিখতে পারি না।’ 

নাম নাজমা, বয়স ১৪ বছর। গত ১ মাস আগে তার বিয়ে হয়েছে। স্বামী সুলেমান ব্যথার তেল ও মাছের কাঁটা বিক্রি করেন। নাজমা বলে, ‘পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়ে হয়েছে।’ 

জিনহা (১২) বলে, ‘তন্ত্র মন্ত্র ও ঝাড়ফুঁক মায়ের সঙ্গে গ্রামে ঘুরে ঘুরে শিখছি। কোনো দিন এক দুইশো কামাই হয় আবার কোনো দিন নাও হয়। যে দিন কামাই হয় না সেদিন সাপ দেখিয়ে বাজারের দোকান কালেকশন করি। কোনো দোকানদার দেন কেউ দিতে চায় না। ঝাড়ফুঁকে কামাই ভালো হলে দোকানদারদের মুখ কালা দেখতে হয় না।’ 

পনেরো পরিবারের সর্দার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে আজ আমাদের আজ এই অবস্থা। জন্ম জেলা মুন্সিগঞ্জ। আমাদের সবই ছিল তবুও আজ আমরা পথে পথে বাস করি। ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক কষ্ট হয়। প্রচণ্ড গরমে যেমন থাকতে পারি না। শীতেও থাকতে পারি না খুব ঠান্ডার কারণে। আমরা আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারি না। বছরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলায় থাকতে হয়।’ 

সমাজবিজ্ঞানী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মাদ ইলিয়াস বলেন, ‘বেদে পল্লির মানুষের নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি আছে। তারা তাদের মতন থাকতে ভালোবাসে। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বাপদাদার আমল থেকে চলে আসছে। সন্তানদের শিক্ষিত করতে তাদের যেমন ইচ্ছা-আগ্রহের প্রয়োজন তেমন আমাদের সমাজের মানুষেরও তাদের পাশে গিয়ে সন্তান শিক্ষিত করার আগ্রহ সৃষ্টি করার প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতিহাস দরজায় কড়া নেড়ে বলছে, ১৯৭১ থেকে পাকিস্তান কি শেখেনি কিছুই

‘আমাদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ো না’

কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের খামারবাড়ি অবরোধের ঘোষণা

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

যশোরে আত্মগোপনে থাকা আ.লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত