Ajker Patrika

মোর বাবাক কেনে মারি ফেলাল?

প্রতিনিধি, হাতীবান্ধা
মোর বাবাক কেনে মারি ফেলাল?

'ও বাবারে মোর সোনা বাবা কোটে? মোর সোনা বাবা ঈদত বাড়ি আসির চাচিলো। আর আসিল না।' এমন বিলাপে চিৎকার করে কাঁদছেন সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিহত মিন্টু চন্দ্রের মা ত্রিবিনি বালা। 

আজ সোমবার বিকেলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়াই পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মিন্টু চন্দ্রের মা ত্রিবিনি বালা ঘরে মেঝেতে বসে ছেলেকে বাবা বাবা বলে ডাকছেন। আর চিৎকার করে কান্না করছেন। ষাটোর্ধ্ব বাবা সরদ চন্দ্র বর্মণ নির্বাক; থেমে থেমে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। ছোট ভাই অনুকূল চন্দ্র বর্মণ দাদা দাদা বলে আঙিনায় কাঁদা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর চিৎকার করে কাঁদছে। 
 
মিন্টুর মা ত্রিবিনি বালার বলেন, 'মোর বাবা ইদের ৭ দিন আগত মোর সঙ্গে কথা কইছে। মোর জন্য টাকা আর শাড়ি পাঠে নিয়া ঈদত বাড়ি আসির চাইছে। কান্না করতে করতে ত্রিবিনি বালা আরও বলেন, মোর বাবার কী অপরাধ, ওমরালা মোর বাবাক কেনে কাটিল। মুই ওমালার বিচার চাং।' 

বাবা সরদ চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, তিনি শুধু নির্বাক চেয়ে থেকে বলছেন বাবা কোটে? মোর বাবাক কেনে মারি ফেলাল বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন। 
 
এদিকে ঢাকায় মিন্টুকে হত্যার খবরে প্রতিবেশীরা তাঁদের বাড়িতে ছুটে এসেছেন। পরিবারের লোকজনের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে চারিদিক। এলাকাবাসীও চোখের পানি আটকে রাখতে পারছে না। তারা যেন সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। 

মিন্টু চন্দ্রের চাচাতো বোন অঞ্জলি রানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ ভাইয়ের মধ্যে মিন্টু বড়। মিন্টু হাতীবান্ধা এস. এস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০০ সালে এসএসসি পাশ করেন। এরপর আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে রংপুর কারমাইকেল থেকে অনার্স শেষ করেন। 

অঞ্জলি আরও বলেন, প্রায় ৮ বছর আগে বাবার ৬ দোন জমি বিক্রি করে ঢাকায় যান চাকরির জন্য। সেখানে প্রতারণার শিকার হয়ে এক বছর পর বাড়িতে এসে আবার ঢাকায় পাড়ি জমান। এরপর আর একবারের জন্যও বাড়িতে আসেননি। বাড়ির সকলের সঙ্গে ফোনেই কথা হতো। মিন্টু তাদের বলতেন—বাবার টাকা নষ্ট করেছেন, সেই টাকা ইনকাম করেই বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু তাঁর আর বাড়ি ফেরা হলো না। 
 
স্থানীয় যুবক ভবেশ মহন্ত বলেন, মিন্টু দাদা অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন। এলাকায় থাকতে তিনি আমাদের অনেক ভালো বাসতেন। ঈদের আগে নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে মন খারাপ হয়েছে। কিন্তু আজ এমনটা দেখতে হবে কখনো ভাবিনি। 

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুলাই (মঙ্গলবার) আশুলিয়ার জামগড়া সংলগ্ন বেরন এলাকার রূপায়ণ মাঠের নিজ বাসা স্বপ্ন নিবাস থেকে নিখোঁজ হন সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মণ। এরপর তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৭ দিন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে অবশেষে ২২ জুলাই আশুলিয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন মিন্টুর ছোট ভাই দীপক চন্দ্র বর্মণ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত